
গাজার বিভিন্ন অঞ্চল দখল ও নিয়ন্ত্রণ করতে বড় আকারে অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসকে
পরাজিত করে বাকি জিম্মিদের উদ্ধার করতে এমন অভিযান চালানো হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) হিব্রু ভাষায় এক্সে লিখেছে, গাজা উপত্যকার কৌশলগত এলাকাগুলো দখল করতে ‘অপারেশন গিডিওনস চ্যারিয়টস’ চালাতে সেনাদের সচল করা হয়েছে। হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স দাবি করেছে বৃহস্পতিবার থেকে ইসরাইলিরা কমপক্ষে আড়াইশ’ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। উল্লেখ্য, প্রায় দুই মাস আগে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় নতুন করে হামলা চালায় ইসরাইল। মার্চে সেখানে সব ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় জাতিসংঘ বারবার বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ অবস্থা চলছে। শিশুরা না খেয়ে মরতে বসেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, গাজায় অসংখ্য মানুষ অনাহারে। কিন্তু তিনি অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানাননি অথবা ইসরাইলকে হামলা বন্ধের আহ্বান জানাননি। উল্টো ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি গাজাকে দখল করে নিয়ে সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরি বানানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ইসরাইল বলেছে, হামাস যতক্ষণ আর কোনো হুমকি হবে না এবং ইসরাইলের সব জিম্মি দেশে ফিরে না আসবে ততক্ষণ বন্ধ হবে না ‘অপারেশন গিডিওনস চ্যারিয়টস’। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রিপোর্টে জানানো হয় ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকা জুড়ে কমপক্ষে ১৫০টি স্থানকে টার্গেট করেছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করা এবং অবরোধ তুলে নেয়ার ক্রমবর্ধমান আহ্বান থাকা সত্ত্বেও বোমা হামলা ও সীমান্তের দিকে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি তীব্র থেকে তীব্রতর করেছে ইসরাইল। টাইমস অব ইসরাইল বলেছে, অপারেশন গিডিওনস চ্যারিয়টস নামকরণ করা হয়েছে বাইবেলে উল্লিখিত একজন যোদ্ধার নাম থেকে। এই অভিযানে আইডিএফ গাজার ভূখণ্ড দখলে নিয়ে তার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এর ফলে সেখানকার বেসামরিক লোকজনকে তাড়িয়ে দেয়া হবে দক্ষিণে। হামলা চালানো হবে হামাসের ওপর। ত্রাণ সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণ নিতে দেবে না হামাসকে। সামনের দিনগুলোতে এই অপারেশন আরও তীব্র হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, এ সময়ে ইসরাইলের হাজার হাজার সেনা ও রিজাভিস্ট গাজায় প্রবেশ করবে। এরই মধ্যে গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বহু অংশের অধিবাসীকে তাদের বাড়িঘর অথবা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যেতে বলেছে। ত্রাণবিষয়ক কর্মীরা বলছেন, ইসরাইলের এই নির্দেশ একেবারেই অসম্ভব। কারণ, যুদ্ধের কারণে বার বার বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। তারা এখনও আশাবাদী যে, কাতারে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি হবে। এ মাসের শুরুর দিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার ভূখণ্ড দখল ও তা ধরে রাখার জন্য সেখানে প্রবেশের জন্য জোরালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। তিনি আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই হামলা শুরু করবে না তার দেশ। এ অবস্থায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক সতর্ক করেছেন। বলেছেন, ইসরাইল সম্প্রতি যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে তাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, এই ভয়াবহ বোমা হামলা, জনগণকে ভয়াবহ হামলার ভয় দেখিয়ে বাস্তচ্যুত করতে জোর প্রয়োগ, পুরো অঞ্চলকে ধ্বংস করে দেয়া, মানবিক সহায়তা পাঠানো প্রত্যাখ্যান করা এটাই জোরালোভাবে ফুটিয়ে তোলে যে, গাজায় জনসংখ্যাতত্ত্ব স্থায়ীভাবে পাল্টে যেতে পারে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জাতিনিধন হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। এ পরিস্থিতিকে হতাশাজনক বলে বর্ণনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালের সার্জন ভিক্টোরিয়া রোজ বলেছেন, আমার টিম নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে বাচ্চারা একেবারে পাতলা হয়ে গেছে। অসংখ্য শিশুকে পাচ্ছি তাদের দাঁত পড়ে গেছে। তাদের অনেকে মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে। বহু শিশু আছে অপুষ্টিতে ভুগছে। এতে তারা সহজেই সংক্রমিত হচ্ছে। সোমবার জাতিসংঘ সমর্থিত এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজার জনগণ দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে। এ সব অভিযোগ বার বার প্রত্যাখ্যান করছে ইসরাইলি সরকার।