Image description
 

উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অর্থ দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। সেই সঙ্গে জাতীয় দুর্যোগ এবং ক্রান্তিকালে প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টার্জিত আয় দেশের সরকারকে শক্তিশালী করে। একই সময়ে, এইসব দেশের সরকার উন্নত এবং শক্তিধর দেশের কাছ থেকে ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এবং যুদ্ধাস্ত্র কিনে থাকে। এভাবেই বিপুল পরিমাণ অর্থ মাত্র একটি অস্ত্র চুক্তির মাধ্যমেই হাতিয়ে নেয় উন্নত বিশ্বের গুটি কয়েক শক্তিধর দেশ। আর এতে শতকের পর শতক তারা বিশ্বের ধনীর দেশের তালিকায় শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখে আর উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশ তলানিতেই রয়ে যায়। 

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল আকাশযুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে মূল শক্তি ছিল অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তবে এসবের কিছুই তৈরির সক্ষমতা নেই উপমহাদেশের চিরবৈরী দুই দেশের। এ জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় উন্নত দেশের প্রস্তুতকৃত সমরাস্ত্রের ওপর। আর সুযোগ বুঝে বিরাট অঙ্কের চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে ফায়দা লুটে উন্নত সামরিক প্রযুক্তির দেশগুলো।

 

পাকিস্তানের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২৪ সালে দেশটির প্রবাসীরা নিজ দেশে ৩৪.১ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। তবে চীন থেকে কী পরিমাণ প্রবাসী আয় পাকিস্তানে এসেছে তার কোন হিসেবে পাওয়া যায়নি। বাস্তবিক অর্থে এটি এতো সামান্য পরিমাণ যে তা দেশটির স্টেট ব্যাংকের তালিকাতেও স্থান পায়নি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৯-২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে চীনে প্রায় ১৫ হাজার পাকিস্তানি রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, এদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ এক মিলিয়ন ডলারের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। 

অন্যদিকে, চীন থেকে ৭২টি জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি সই করে পাকিস্তান। প্রতি ইউনিটের মূল্য যদিও নির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে অনুমান করা হয় যে প্রতিটি মাল্টিরোল অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের মূল্য ২৫–৪০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে। সেই হিসেবে ৭২টির মূল্য হতে পারে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর আগে, চীন থেকে আনা ১৪৯টি জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমানের জন্য পাকিস্তানকে গুনতে হয়েছে আনুমানিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

আকাশসীমা সুরক্ষার অজুহাতে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ পাকিস্তানের পকেট থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি লুফে নিয়েছে ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন। অন্যদিকে, চীনের মাটিতে বছরজুড়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রবাসী পাকিস্তানিরা দেশে পাঠায় মাত্র এক মিলিয়ন ডলার। এই দুটোর তুলনা করলে হয় ৫ হাজার ভাগের একভাগ।  

এদিকে, ভারতীয় প্রবাসীরা ২০২৩ সালে দেশে মোট ১২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে ফ্রান্স থেকে এসেছে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার ( প্রবাসী আয়ের মাত্র এক শতাংশ)। অন্যদিকে, ২০২৫ সালের এপ্রিলে, ভারত ফ্রান্সের সঙ্গে ২৬টি রাফায়েল মেরিন যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি চুক্তি সই করে। এতে সহজে বলা যায়, ফ্রান্সে বসবাসরত ভারতীয়রা সাত বছর ধরে নিজ দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে তার চেয়েও বেশি শুধুমাত্র ২৬টি রাফায়েল বিক্রি করে নিয়ে গেছে প্যারিস। 

বিশ্বের অনেক দেশেই একই ধরনের চিত্র দেখা যায়। ২০২৩ সালে মিশরের মোট প্রবাসী আয় ছিল ২৪ বিলিয়ন ডলার। তবে মাত্র কয়েকটি উন্নত দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি বাবদ মিশরকে গুনতে হয়েছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। 

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে মেক্সিকো প্রায় ২৪২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র আমদানি করেছে। আর ২০২৩ সালে তাদের মোট প্রবাসী আয় ছিল ৬৩ বিলিয়ন ডলার। 

এই তথ্যগুলো থেকে দেখা যায়, কিছু মধ্যম এমন কি নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, যা তাদের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের তুলনায় অনেক বেশি। এই দ্বন্দ্ব সামাল দেয়া অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের উচিত রেমিট্যান্সের অর্থকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার নিশ্চিত করা যাতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। সেই সঙ্গে প্রতিরক্ষার সংক্রান্ত আমদানি খরচ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা।