Image description

গত বছরের ৭ অক্টোবরে দখলদার ইসরাইলে হামলার সময় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এক ইসরাইলি পুলিশ কর্মকর্তা বুধবার আত্মহত্যা করেছেন। হামাসের আক্রমণের খবর পেয়ে ইগর পিবেনেভ নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তা হেবরনে তার পোস্ট থেকে গাজা সীমান্তের কাছে তার বাড়িতে ছুটে যান, পথে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করেন এবং পরে নাগরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগঠিত করতে সহায়তা করেন।

তার স্ত্রী সম্প্রতি হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের অপরাধবোধ এবং পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে পিবেনেভ আত্মহত্যা করেন এবং পরের দিন তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। এর আগেও গাজায় হামলা করা বেশ কয়েকজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন, কিছু পরিবার ২০২৩ সালে হামলার পরের সপ্তাহ এবং মাসগুলিতে তাদের কল্যাণের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য ইসরাইলি সরকারকে দোষারোপ করেছে। ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীও তাদের সৈন্যদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা তীব্র বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে, জানুয়ারিতে প্রকাশ করেছে যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ২৮ জন সৈন্য আত্মহত্যা করেছে, যা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা।

‘গণহত্যাকারী’দের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা স্পেনের : ইসরাইলকে প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ বলে আখ্যা দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। বিশ্বের একমাত্র এ ইহুদি রাষ্ট্রের সঙ্গে স্পেনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে স্পেনের কাতালান রাজ্যের এমপি গ্যাব্রিয়েল রাফিয়ান ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর চলমান রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য সানচেজের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনাও করেন তিনি। সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় নিজ বক্তব্যে সানচেজ বলেন, “আমি এখানে একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জনাব রাফিয়ানÑ একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা আর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখছি না। (ইসরাইলের সঙ্গে) কোনো বাণিজ্য হবে না।”

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে স্পেন। তবে বুধবারেই এই তথ্য প্রথম জনসমক্ষে আনলেন সানচেজ। এদিকে ইসরাইলি বিভিন্ন সংবাদামাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের বুধবারের মন্তব্যের পর বৃহস্পতিবার ইসরাইলে কর্মরত স্পেনের রাষ্ট্রদূত আনা সলোমনকে তলব করে কড়া বার্তা দিয়েছে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিমান হামলায় গাজায় শতাধিক শহীদ : গাজায় মধ্যরাতে ১২টি দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের। হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেসি জানিয়েছে, গতকাল রাতভর ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেঁড়ে ১০৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

এ হামলায় নিহতদের মধ্যে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের ১৩ জন রয়েছেন। ওই শিবিরের একটি প্রার্থনা কক্ষ এবং দাতব্য হাসপাতালে হামলা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু ছিল। মুখপাত্র আরও জানান, খান ইউনিসের ১৩ সদস্যের সামুর পরিবারের নাম নাগরিক নিবন্ধন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে। এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানোর পাশাপাশি উত্তরে বেসামরিক নাগরিকদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। ইতিমধ্যেই আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজা সিটির বাসিন্দাদের ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ‘তীব্র হামলা’ শুরু হওয়ার আগেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য চলে যেতে বলা হয়েছে।

বিশেষভাবে ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, আল-শিফা হাসপাতাল এবং তিনটি প্রাক্তন স্কুল খালি করার কথা বলেছে ইসরাইল এবং তারা অভিযোগ করেছে, ভবনগুলো হামাস তাদের কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করছে। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, সেখানে হাজার হাজার বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে এবং এই এলাকাগুলো থেকে তাদের সরিয়ে নিতে সময় লাগবে। এতে বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, আনাদোলু এজেন্সি, বিবিসি।