Image description
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হয়েছে। শনিবার (১০ মে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির কথা জানানোর পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ধর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধ বিরতির কারণে এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে– এটি বাংলাদেশের জন্য সুখবর। একইসঙ্গে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে যায়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে নতুন নীতি নির্ধারণ করার দরকার হতে পারে। তবে তাদের মতে, সিন্ধু পানিচুক্তি নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, দুদেশ সেটির সমাধান কীভাবে করে, সেটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান একই অঞ্চলে থাকার কারণে এটির প্রভাব বাংলাদেশে আরও বেশি অনুভূত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। যুদ্ধ বিরতির কারণে শান্তি ফিরে আসছে, এটি অবশ্যই এ অঞ্চলের দেশ এবং মানুষের জন্য সুখবর।’

তবে, যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রশমিত হলেও দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক সহসা স্বাভাবিক হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আলোচনার টেবিলে বসে বিষয়টির সমাধান করার বিষয়ে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উপাদান বাধা দেবে। এ মুহূর্তে ভারতের জনগণ যেমন পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিকে সমর্থন করবে না, তেমনই পাকিস্তানের সরকার যদি আলোচনার টেবিলে বসে, সেটিকে পাকিস্তানিরা তাদের পরাজয় হিসেবে মনে করতে পারে।’

সেজন্য দুই দেশের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকাকে দিল্লি ও ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে তিনি জানান।

সিন্ধু পানি চুক্তি

গত ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর ওই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করে ভারত। পরের দিন একতরফাভাবে দুদেশের মধ্যকার সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে ভারত এবং পাকিস্তান এটিকে ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’ হিসেবে বিবেচনা করার ঘোষণা দেয়। সীমান্তে গোলাগুলির মধ্যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে বিমান হামলা চালায় ভারত। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে সামরিক স্থাপনায় বিমান পাল্টা হামলা চালায়।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘ভারতের কাছে যেমন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাদের নিরাপত্তা। তেমনই বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পানি। ভাটির দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের পানিপ্রাপ্তির বিষয়টি ভারতের পানি প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল।’

৬০ এর দশকে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু পানি চুক্তি হয়েছে। এরপর ভারত ও পাকিস্তান একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেও এই চুক্তির ব্যত্যয় হয়নি। কিন্তু নতুন ও পরিবর্তিত ভারত এ ধরনের একটি কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং এটি অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বলে তিনি মনে করেন।

সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পান চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। এছাড়া আরও বেশ কিছু নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ প্রেক্ষিতে একতরফাভাবে ভারতের এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি অন্যদেশগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা।’

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অবস্থান

শুক্রবার (৯ মে) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরীফের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে অবিলম্বে উত্তেজনা প্রশমনের ওপর জোর দেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ও আলোচনায় মার্কিন সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন রুবিও।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতি অনুযায়ী— ভারতের বিষয়ে ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জন্য তার সমবেদনা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের সঙ্গে কাজ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।’

পাকিস্তান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপের পর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির খবরে দুঃখ প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে যেকোনও সমর্থন বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের প্রতি দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশের আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত ও পাকিস্তানকে একই ধরনের বার্তা দেননি। দিল্লিকে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। অপরদিকে ইসলামাবাদকে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশ দুটির প্রতি ভিন্ন ধরনের বার্তার বিষয়টি বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।’