
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানান আলোচনা চললেও এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। অতীতেও দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
২০১৬ সালে কাশ্মীরের উরি সেনা ঘাঁটিতে ১৯ ভারতীয় সেনার প্রাণহানির পর ভারত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জওয়ানের মৃত্যুর পর পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় বিমান হামলা চালায় ভারত।
এর আগে ২০০১ সালে দিল্লিতে ভারতের সংসদে বন্দুকধারীদের হামলার জবাবে ‘অপারেশন পরাক্রম’ চালু করে দেশটি। ওই সময় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে প্রায় ১০ মাসব্যাপী সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করেছিল।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ পর্যটক। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছে নয়াদিল্লি। হামলার বদলা নিতে হুমকি-ধমকির একপর্যায়ে বুধবার রাতে দেশটিতে আক্রমণ চালায় ভারত। এতে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং আহত হয় আরও অনেকে। জবাবে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তানও। এতে ১৫ ভারতীয় নাগরিকের প্রাণহানি ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ফলে দুই দেশের উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সাম্প্রতিক উত্তেজনা ক্রমেই যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। ফলে শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, পুরো দক্ষিণ-এশিয়া পড়তে যাচ্ছে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে।
কত পারমাণু অস্ত্র আছে ভারত-পাকিস্তানের?
ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। ফলে কাশ্মীর নিয়ে তাদের বিরোধ যখনই তীব্র হয়, তখন এটি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, পাকিস্তান ও ভারতের প্রত্যেকের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।
থিঙ্ক ট্যাঙ্কটির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের তুলনায় প্রতিরক্ষা খাতে নয় গুণ বেশি ব্যয় করেছে ভারত। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে, ভারত তার প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে পাকিস্তান ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি বরাদ্দ দিয়েছে।
সেনাসংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ভারত। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মতে, ভারতের মোট সক্রিয় সৈন্য সাড়ে ১৪ লাখের কিছু বেশি, অন্যদিকে পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখের কিছু বেশি। রিজার্ভ সেনা বা প্যারামিলিটারি বাহিনীর ক্ষেত্রেও এগিয়ে ভারত।
স্থলভাগের শক্তি বিবেচনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ও মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর বা রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি সংখ্যা ৬৬২, ভারতের ১০০। পাকিস্তানের মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর ৬০০, ভারতের ২৬৪।
অন্য বেশ কিছু দিকে সংখ্যায় এগিয়ে ভারত। ভারতের ট্যাংক সংখ্যা ৪ হাজার ২০১টি, সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি, টোওড আর্টিলারি বা টেনে নেওয়ার কামান ৩ হাজার ৯৭৫টি। পাকিস্তানের ট্যাংক রয়েছে ২ হাজার ৬২৭ টি, সাঁজোয়া যান ১৭ হাজার ৫১৬টি, টোওড আর্টিলারি ২ হাজার ৬২৯টি। দুই দেশের কেউই জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কূটনীতি ও সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান। দুই দেশের নেতারা এখনই সংযত না হলে চড়া মূল্য দিতে হবে পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে। পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা থাকছেই। পাশাপাশি সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়লে দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য ও খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে।