Image description
 

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে মন্তব্য করায় ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারোর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তেহরান। এর জেরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।

গত ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি গোপন বৈঠকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারো বলেন, ইরানের কাছে বর্তমানে ৬,০০০ কিলোগ্রামেরও বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির নির্ধারিত সীমার প্রায় তিরিশ গুণ বেশি। তিনি সতর্ক করে বলেন, এখন ইরানের ‘ব্রেকআউট টাইম’—অর্থাৎ বোমা তৈরি করতে যত সময় লাগে—তা এক বছর থেকে কয়েক দিনে নেমে এসেছে।

বারো আরও দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি শুধু নিজস্ব প্রয়োজনে নয়, বরং তাদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ইরানের পারমাণবিক সমস্যার কোনো সামরিক সমাধান নেই, কূটনৈতিক পথই একমাত্র বিকল্প—যদি ইরান তা বেছে নেয়।”

 

এই বক্তব্যের জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস্মাঈল বাকাঈ বলেন, “বারোর মন্তব্য ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক ও রাজনৈতিক দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “ফ্রান্সের এই একপেশে আচরণ কূটনৈতিক সম্ভাবনাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে।”

 

জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানিও বারোর বক্তব্যকে “অযৌক্তিক” আখ্যা দিয়ে বলেন, “প্রকৃত কূটনীতি হুমকি ও চাপে চলে না। যদি ফ্রান্স সত্যিই সমাধান চায়, তবে তাকে জোরজবরদস্তি বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে প্রতিটি রাষ্ট্রের অধিকারকে সম্মান করতে হবে।”

২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি—জেসিপিওএ—যার থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে সরে গিয়েছিল, সেটির মেয়াদ ঘনিয়ে আসায় উত্তেজনা আরও বাড়ছে। ফ্রান্স ইঙ্গিত দিয়েছে, ইরান যদি অবস্থান না বদলায়, তবে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে একযোগে তারা দশ বছর আগে তুলে নেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করবে।

তেহরান অবশ্য নিজেকে বৈশ্বিক বৈষম্যের শিকার দাবি করছে। ইরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ে প্রবল নজরদারি চালানো হলেও, ইসরায়েলের মতো রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় না এনে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করেছেন, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে পরমাণু বিস্তার যেন “শুষ্ক জঙ্গলে আগুন জ্বালানোর মতো।” এমন পরিস্থিতিতে নতুন রিপোর্ট প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে IAEA।

এই উত্তেজনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বজুড়ে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও বহুপাক্ষিক কূটনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।