Image description
 

পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্টের কাশ্মীর শাখার প্রধান গুলজার ফাতিমা জানান, উত্তেজনা বাড়তে থাকায় তারা জরুরি রসদ ও কর্মী প্রস্তুত রেখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী কর্মীরা।

 

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ঘেরা গ্রাম চুরান্দায় তখন সকাল। শিক্ষকেরা যখন স্কুলশিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রার্থনা করছেন, তখন তাদের কামনা—আখরোট গাছের পাতার শব্দ আর পাখির কূজন যেন গোলাবারুদের গর্জনে পরিণত না হয়।

সম্প্রতি পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর নিয়ন্ত্রণ রেখার (লাইন অব কন্ট্রোল) দুই পাশেই মানুষের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনের মতোই শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে, কিন্তু অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তীব্রভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ফারুক আহমদ।

ভারত ও পাকিস্তান এর আগেও দুবার কাশ্মীর ইস্যুতে যুদ্ধ করেছে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখায় বহুবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ফলে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যখন উত্তেজনা বাড়ে তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে এক ধরনের আতঙ্কজনক অভ্যস্ততা জন্মে গেছে।

 

গত সপ্তাহে এক পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্রে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যা ইসলামাবাদ অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্য’ আছে যে, ভারত সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

 

ভারত নিয়ন্ত্রিত চুরান্দা গ্রাম থেকে পাকিস্তান ও ভারতের সেনা চৌকিগুলো চোখে পড়ে। স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দশকে গোলাগুলিতে এই গ্রামে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন।

২৫ বছর বয়সী বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, ‘১৫০০ জনের এই গ্রামে মাত্র ছয়টি বাংকার আছে। দুই পাশ থেকেই হুমকি আসছে। সীমান্তে গোলাগুলি শুরু হলে আমরা কোথায় যাব? ভয় তো থাকছেই, কারণ এই গ্রাম সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি।‘

kashmir 2

বাংকার থেকে বের হয়ে আসছেন নিয়ন্ত্রণ রেখার পাশে চাকোঠি গ্রামের এক বাসিন্দা। ছবি: রয়টার্স

নিয়ন্ত্রণ রেখার অপর পাশে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত চাকোঠি গ্রামের বাসিন্দারা এরইমধ্যে পাহাড়ি ঢালে নিজ নিজ বাড়ির পাশে সুরক্ষিত বাংকার তৈরি করেছেন। ‘মানুষজন নিজেদের ঘরে বাংকার বানিয়েছে। কখনো গুলিবর্ষণ শুরু হলে সোজা বাংকারে চলে যায়,’ বলছিলেন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ফেরা ফয়জান আনায়েত।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে সরকার ১০০ কোটি পাকিস্তানি রুপির (৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার) জরুরি তহবিল গঠন করেছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে দুই মাস চলার মতো খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্যসেবার সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে, কারণ ধারণা করা হচ্ছে এসব জায়গা ভারতের লক্ষ্য হতে পারে। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় রাস্তা মেরামতের জন্য সরঞ্জাম সরানো হয়েছে এবং উদ্ধার ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

পাকিস্তান রেড ক্রিসেন্টের কাশ্মীর শাখার প্রধান গুলজার ফাতিমা জানান, উত্তেজনা বাড়তে থাকায় তারা জরুরি রসদ ও কর্মী প্রস্তুত রেখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী কর্মীরা।

ভারতের সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের আশঙ্কায় তারা পাঁচ শতাধিক পরিবারের জন্য ত্রাণশিবির প্রস্তুত করছেন। সেখানে থাকবে তাঁবু, স্যানিটেশন কিট এবং রান্নার সরঞ্জাম।