
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) সম্প্রতি একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চীনা ভাষায় প্রচারণা চালানো শুরু করেছে। যার উদ্দেশ্য হলো চীনা সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ বদলানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গোপন তথ্য ফাঁস করতে উৎসাহিত করা।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দুটি ভিডিওতে এ সংক্রান্ত কিছু কাল্পনিক দৃশ্য দেখানো হয়েছে। যেখানে দেখা যায়, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)-এর পদস্থ কর্মকর্তা তাদের দলের প্রতি আস্থা হারিয়ে সিআইএ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
শুক্রবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিআইএ প্রকাশিত একটি ভিডিওত চীনের এক সিনিয়র কর্মকর্তার ভূমিকায় থাকা অভিনেতা বলেন, তিনি তার চারপাশে কীভাবে ‘পুরনো জুতার মতো’ অন্য কর্মকর্তাদের ছেঁটে ফেলা হচ্ছে তা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
ভিডিওটির চীনা বর্ণনায় বলা হয়, ‘যে ব্যক্তি সারা জীবন পরিশ্রম করে উচ্চপদে উঠেছেন, তিনিও এখন উপলব্ধি করছেন—তার অবস্থান যতই উঁচু হোক না কেন, তা পরিবারকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়! এই অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মধ্যে তিনি নিজের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে নেওয়ার জন্য এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন’।
ভিডিওতে সিআইএ-এর সঙ্গে নিরাপদভাবে যোগাযোগ করার উপায়ও জানানো হয়েছে। যেমন- টর (Tor) ব্রাউজার ব্যবহার করে গোপনভাবে বার্তা পাঠানোর পদ্ধতি।
এ বিষয়ে সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করাই সিআইএ-এর অন্যতম প্রধান কাজ। এর একটি উপায় হলো—তথ্য পাচারের জন্য ‘অ্যাসেট’ বা উৎস নিয়োগ করা’।
এই ভিডিওগুলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম এবং এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রকাশ করা হয়েছে।
যদিও ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাস এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে দেসমন্ড শুম নামে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত এক চীনা ধনকুবের ও বর্তমান সরকারের বিরোধী ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘সিআইএ-এর এমন জনসমক্ষে প্রচারণা এই প্রথম দেখা গেল। এটি সম্ভবত সাম্প্রতিক ইতিহাসে চীনের বিরুদ্ধে সংস্থাটির সবচেয়ে আক্রমণাত্মক কৌশলগত প্রচার’।
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের প্রচারণা সরাসরি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ক্ষুব্ধ করে তুলবে। কারণ শি-এর আজীবন ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষা আসলে পার্টির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার একমাত্র উপায়’।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বশেষ এই পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ‘সাইবার-পক্ষবদল যুদ্ধ’ বা স্নায়ুযুদ্ধের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে। একদিকে চীন সরকার কঠোরভাবে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। অন্যদিকে সিআইএ এমন সরাসরি ভিডিও প্রচার করে মূলত চীনের ভেতর থেকে ভাঙন তৈরির চেষ্টা করছে।
তাদের এই প্রচারণা ভবিষ্যতে চীনের তথ্য প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, প্রপাগান্ডা ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নীতিতে কড়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে বলেই সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা।