নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। উত্তেজনা তুঙ্গে থাকা অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দুই দেশের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। বুধবার পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও কথা বলার কথা। এমন অবস্থায় পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন, ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত সামরিক অভিযানে নামবে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়েছেন। বুধবার পর্যন্ত ছয় রাত ধরে দুই দেশের মধ্যে গুলিবিনিময় চলছে। ছোট অস্ত্রে চলছে এই গুলিবিনিময় সেকথা ভারতের সেনারাই জানিয়েছেন। তবে ভারতের উচ্চপর্যায়ে তৎপরতা তুঙ্গে। সাড়ে পাঁচ বছর পর সুপার কেবিনেটের বৈঠক হয়েছে বুধবার। রাজনীতিবিষয়ক কেবিনেট কমিটিকেই সুপার কেবিনেট হিসেবে ধরা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সব মন্ত্রীরাই এই কমিটির সদস্য। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় হামলার পরে সর্বশেষ বসেছিল সুপার কেবিনেটের বৈঠক। তারপরই পাকিস্তানের ভেতরে হয়েছিল ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক।
বুধবার সারা দিনই ভারতের শীর্ষ নেতারা ব্যস্ত ছিলেন একের পর এক বৈঠকে। মাত্র চারদিন আগে হওয়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত কেবিনেট কমিটির বৈঠক হয়েছে। বুধবার ফের বসেছিল সেই বৈঠক। এ ছাড়াও অর্থনীতি বিষয়ক কেবিনেট কমিটিরও বৈঠক হয়েছে বুধবার। সবক’টি বৈঠকেই সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপস্থিত ছিলেন রাজনাথ সিং, নির্মলা সীতারমন, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, নীতিন গড়কড়ি সহ শীর্ষ মন্ত্রীরা। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, সব বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সামরিক প্রস্তুতি। সাত বছর পরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে মোদি সরকার। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ’ সুরক্ষা সংক্রান্ত মূল পদক্ষেপের দায়িত্বে রয়েছে। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর সাবেক ডিরেক্টর অলোক যোশীকে উপদেষ্টা পর্ষদের প্রধান করা হয়েছে। ছয় সদস্যের জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদে রয়েছেন সাবেক কূটনীতিক বি ভেঙ্কটেশ বর্মা, ভারতীয় বিমান বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের সাবেক প্রধান এয়ার মার্শাল পিএম সিংহ, স্থলসেনার দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের সাবেক জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) একে সিংহ এবং নৌসেনার অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মন্টি খান্না। দুই অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার রাজীব রঞ্জন বর্মা এবং মনমোহন সিংহও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদে।
মঙ্গলবারই মোদি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে কীভাবে, কোন সময়, কোন লক্ষ্যে আঘাত হানতে হবে তা স্থির করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্বের উপর তার আস্থা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, তিন বাহিনীর প্রধান (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান, সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নৌসেনার প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী, এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ। পরে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকে নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে। সোমবার রাজনাথ সিং সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে মোদিকে অবহিত করেন। সেখানেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত ছিলেন। রোববার তিন বাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত ৬ দিন ধরে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযোগ, পাকিস্তান রাতের অন্ধকারে গুলি চালাচ্ছে। ভারতও পাল্টা জবাব দিচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে উল্টো দাবি করছে পাকিস্তানও। তবে ভারতের তৎপরতা নিয়ে শঙ্কিত বিশ্বনেতারা সংযমের কথা বলছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন। পেহেলগাম হামলার প্রেক্ষিতে ভারত কী ধরনের সামরিক ব্যবস্থা নেবে তা নিয়ে নানা স্তরে আলোচনা চললেও নির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে দ্বিধার মধ্যে রয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিকবার তার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় দেশটির জড়িত থাকার বিষয়ে ‘ভিত্তিহীন এবং সাজানো অভিযোগের’ ভিত্তিতে ভারতীয় বাহিনী আক্রমণ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, ভারত ‘বিচারক, জুরি এবং জল্লাদে’র ভূমিকা পালন করছে, যা তারা প্রত্যাখ্যান করে। তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে, পাকিস্তান খোলাখুলিভাবে সত্য নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের একটি নিরপেক্ষ কমিশন দ্বারা একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ এবং স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছে। তথ্যমন্ত্রীর মতে, ইসলামাবাদ নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার।
ঘটবে। এখন পেহেলগাম ঘটনার পর সেটাই দেখা
ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর হুঙ্কার
ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর হুঙ্কার দিয়েছেন পাকিস্তানের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. তারিক ফজল চৌধুরী। তার বক্তব্যে পাকিস্তানের সকল নাগরিকের বার্তা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এপিপি। এতে বলা হয়, সিনেটে বক্তব্য দেয়ার সময় ড. তারিক ফজল বলেছেন, পাকিস্তান একটি শান্তিকামী দেশ, আক্রমণকারী নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদের উৎস নই, বরং আমরা এর শিকার। সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে মদত দেয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার পাশাপাশি ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে ভারত। কুলভূষণ যাদবের ঘটনা এবং বেলুচিস্তানে অস্থিরতা যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছে বলে উল্লেখ করেন ফজল। বলেন, যুদ্ধে কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে নয় আধ্যাত্মিক সংকল্প দিয়েও জয়লাভ করতে হয়। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের অতুলনীয় সাহস এবং বিশ্বাস রয়েছে। ভারতের সরকার তথা নরেন্দ্র মোদিকে অতীতের আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন ফজল। বলেছেন, এর আগে আপনারা কড়া প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন। পাকিস্তান এখন আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে।