
ভারতের গুজরাট পুলিশের ব্যাপক অভিযানে শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে ‘বেআইনি বাংলাদেশি’ সন্দেহে। তবে গুজরাট পুলিশ স্বীকার করেছে, এদের মধ্যে মাত্র ৪৫০ জনকে নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত করা গেছে। বাকিরা মূলত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও অন্যান্য রাজ্যের বাংলাভাষী মুসলিম নাগরিক। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি জানা গেছে।
গুজরাট পুলিশের মহাপরিচালক বিকাশ সহায় সোমবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘নথিপত্র যাচাই করে এখন পর্যন্ত ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক শনাক্ত হয়েছে। বাকিদের তদন্ত চলছে।’ তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আটকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা, যাদের বৈধ নথিপত্র রয়েছে।
শনিবার ভোর থেকে আহমেদাবাদ ও সুরাটে শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত গোটা গুজরাটজুড়ে চলেছে এই অভিযান। পুলিশ রাতের অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে আটক করেছে শতাধিক পরিবারকে।
সুরাটের বাসিন্দা সাহিনা বিবি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘রাত তিনটার সময় পুলিশ আমাদের বাড়িতে ঢুকে স্বামী সুলতান মল্লিক ও দুই ভাগ্নেকে নিয়ে যায়।’ যদিও সুলতানের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের জমির দলিল ও পাসপোর্ট রয়েছে।
আহমেদাবাদে বরযাত্রী হিসেবে আসা মহারাষ্ট্রের আকোলার একদল মানুষকে আটক করা হয়। ফারজানা বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশি সন্দেহে আমার ভাই ও ভাগ্নেকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। আমাদের বিয়ের হলুদ অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিতে হয়েছে।’
আহমেদাবাদের আলমআরা পাঠান ২৩ বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দা। তার ছেলে রিয়াজ ও পুত্রবধূকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব নথি আছে, তবু কেন এই হয়রানি?’
পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে পশ্চিমবঙ্গের ২৩ ফেরিওয়ালাকে মারধর করা হয়েছে। ২১ এপ্রিল ওড়িশার ময়ূরভঞ্জে মুর্শিদাবাদের ৬০ শ্রমিক হামলার শিকার হয়েছেন। আর সম্প্রতি ওড়িশার ভদ্রকে এক ফেরিওয়ালাকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের আসিফ ফারুক বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে এমন ঘটনা বাড়ছে। পহেলগাম হামলার পর তো আরও বেড়েছে। বাংলাভাষী মুসলিম হওয়াটাই কি অপরাধ?’