Image description

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগে জানিয়েছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালিয়েছে এবং তা যেন ‘লাইভ স্ট্রিমিং’-এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে করেছে। সংস্থাটির মতে, এই ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ণ দায় ইসরায়েলের ওপরই বর্তায়।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) প্রকাশিত অ্যামনেস্টির ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল সুচিন্তিত ও নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে অবরুদ্ধ গাজার নিরীহ জনগণকে গৃহত্যাগে বাধ্য করেছে। পাশাপাশি, অঞ্চলটিতে সৃষ্ট মানবিক সংকট ছিল ইচ্ছাকৃত এবং পূর্বপরিকল্পিত। এ পরিস্থিতিকে গণহত্যার সাথে তুলনা করে বলা হয়, ইসরায়েল এমন এক নৃশংসতা চালিয়েছে যা সরাসরি জাতিসংঘের গণহত্যাসংক্রান্ত সংজ্ঞার আওতায় পড়ে।

অ্যামনেস্টির মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে এই আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড প্রচারিত হচ্ছে, তাতে মনে হয় যেন ইসরায়েল এই ধ্বংসযজ্ঞকে বিশ্বব্যাপী সম্প্রচার করছে—একপ্রকার 'লাইভ স্ট্রিমিং করে গণহত্যা'।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক আকস্মিক হামলার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় ইসরায়েলের এক হাজার ২১৮ জন নাগরিক নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫১ জন। এ ঘটনার পরই ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে, যা এখনও থামেনি।

প্রতিবেদনে উঠে আসে, এ হামলা ও অবরোধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫২ হাজার ২৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বড় অংশই নারী ও শিশু।

অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড প্রতিবেদনটির ভূমিকায় লিখেছেন, হামাসের জঘন্য হামলার জবাবে ইসরায়েল প্রতিদিনই যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা গোটা বিশ্বকে এক ভয়াবহ লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দর্শক বানিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল শুধু মানুষ হত্যা করছে না, বরং গোটা পরিবার, প্রজন্ম ও সামাজিক কাঠামো—সবকিছু মুছে দিচ্ছে। তারা স্কুল, হাসপাতাল, ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে এবং জনজীবনকে চরম দুর্বিষহ করে তুলেছে। আর এই মানবিক বিপর্যয়ের সামনে বিশ্ব সম্প্রদায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ইসরায়েল গাজার অন্তত ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করেছে। তারা খাদ্য, পানি, চিকিৎসা এবং বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত।

অ্যামনেস্টি জানায়, তারা এ সময়কালে ইসরায়েলের বহু যুদ্ধাপরাধের দলিল সংগ্রহ করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বেসামরিক জনগণ ও স্থাপনায় সরাসরি হামলা, নির্বিচার বোমাবর্ষণ এবং মানবিক আইন লঙ্ঘনের একের পর এক নজির।

পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি দমনপীড়নের মাত্রা বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেখানে ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা সেনাবাহিনীর ইন্ধনে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।

অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক হেবা মোরায়েফ বলেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন গাজার ফিলিস্তিনিরা যে ভয়াবহ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে, তা অকল্পনীয়। এই গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তিনি আরও যোগ করেন, এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উচিত অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী ইসরায়েলের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।