
ইসরাইলের অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন বন্দিশালায় ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন গাজার শীর্ষ শিশু বিশেষজ্ঞ এবং কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ড. হুসসাম আবু সাফিয়ার আইনজীবী ঘিদ কাসেম।
আল-আরাবি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাসেম জানান, তিনি ইতোমধ্যে আবু সাফিয়ার সঙ্গে তিনবার সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিবারের সাক্ষাৎই আগের চেয়ে আরও কষ্টকর হয়েছে।
কাসেম বলেন, সত্যি বলতে, তার কাছ থেকে যা শুনেছি তা এতটাই ভয়াবহ যে, আমি নিশ্চিত নই যে এগুলো মিডিয়ায় বলা উচিত কিনা।
আইনজীবী কাসেম জানান, ঈদুল ফিতরের দিন গাজার বন্দিদের দানবীয় কায়দায় পেটানো ও লাঞ্ছনা করা হয়।
তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে আমি যত বন্দির সঙ্গে দেখা করেছি, তাদের মধ্যে একজনকেও পাইনি যিনি মারধরের শিকার হননি।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। অনাহার বেড়ে চলেছে, নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে, বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে, হুমকি বেড়েছে—এবং এই নির্যাতন থামাতে কেউ কোনো সীমানা টানতে পারেনি।
আবু সাফিয়ার আইনজীবী আরও বলেন, যেকোনো শারীরিকভাবে সক্ষম ও সুস্থ মানুষকেও যদি এই বন্দিত্বের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তবুও তার দেহে ও মনে ক্ষত তৈরি হবেই।
ঘিদ কাসেম দাবি করেন, আবু সাফিয়া একা নন—গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীরাও একই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমরা যারা মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী, তাদের জন্য এসব নির্যাতনের স্তর নিয়ে কথা বলাও লজ্জাজনক। মুখে পা দিয়ে পিষে ফেলা, চরম অপমান এবং পয়ঃবর্জ্য খেতে বাধ্য করাসহ অনেক কিছুই বন্দিদের ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে, অথচ এগুলোই এখন ‘হালকা নির্যাতনের’ তালিকায় পড়ে।
কাসেম জানান, বন্দিদের এমন কিছু করতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে নৈতিকতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাদের সম্মানে প্রতিমুহূর্তে আঘাত করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা অবর্ণনীয় ও অমানবিক।
ড. আবু সাফিয়ার ক্ষেত্রে তিনি জানান, মাত্র কয়েকদিন আগেই তার মাথা একটি ধাতব স্তম্ভে আঘাত করা হয়েছে।
ইসরাইল কর্তৃপক্ষ আবু সাফিয়াকে ‘অবৈধ যোদ্ধা’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, যদিও তিনি একজন বেসামরিক চিকিৎসক। এর অর্থ, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ নেই, এবং তাকে বিচার ছাড়াই প্রশাসনিকভাবে আটক রাখা হয়েছে।
বর্তমানে ড. আবু সাফিয়া অন্তত সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে পর্যন্ত প্রশাসনিক বন্দিত্বে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘আদ্দামীর’ জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ১০,০০০ ফিলিস্তিনি ইসরাইলি কারাগারে বন্দি রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৪০০ শিশু এবং ২৭ জন নারী রয়েছেন।
সংগঠনটি আরও জানায়, ফিলিস্তিনের প্রায় ৪০ শতাংশ পুরুষ জীবনের কোনো এক সময়ে অন্তত একবার ইসরাইলি কারাগারে আটক হয়েছেন।
তাদের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ৩,৫০০ বন্দি ‘প্রশাসনিক আটকাদেশে’ রয়েছেন—অর্থাৎ কোনো অভিযোগ ছাড়াই এবং কোনো বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই তাঁদের আটক রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবর মাসে ইসরাইলি বাহিনীর একটি হামলায় কামাল আদওয়ান হাসপাতালে নিহত হন ড. হুসসাম আবু সাফিয়ার ছেলে।
আইনজীবী কাসেম বলেন, কারাগারে এতসব দানবীয় নির্যাতনের মধ্যেও ড. হুসসাম আবু সাফিয়া ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীদের মূল চিন্তা এখনো গাজার হাসপাতালগুলোর অবস্থা নিয়ে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তেও তিনি যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি জানতে চান তা হলো—গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোর কী অবস্থা চলছে এই চলমান গণহত্যার পরিস্থিতিতে।