
বাংলাদেশে ৫ কোটি ২০ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীর দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আপনার অতি প্রিয় ফেসবুক আইডি আপনারই একটুখানি অসতর্কতায় হ্যাক হতে পারে। কিছু উপায় অবলম্বন করে আপনি আপনার ফেসবুককে নিরাপদে রাখতে পারেন। সে ধরনের কিছু উপায়ের কথা বলেছেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট উদ্ধারে এক্সপার্ট খবির উদ্দিন। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
এক. প্রথমত. ফেসবুকে একটি ফ্রেশ প্রাইমারি ই-মেইল অ্যাড্রেস থাকতে হবে এবং ই-মেইলের অ্যাকসেসও থাকতে হবে। সেটিং থেকে জেনারেল অ্যাকাউন্ট সেটিংয়ের নিচে কন্টাক্ট প্রাইমারি লেখার পাশে এই ই-মেইল ঠিকানা দিতে হয়। এখানে একাধিক ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া যায়। এই ইমেইলের পাসওয়ার্ড মনে থাকা চাই। ই-মেইল ঠিকানা থাকলে ফেসবুক হ্যাক হলে ওই ঠিকানায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মেইল করে জানায়। হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্টটি আপনার ওই মেইলের লিংকে গিয়ে জানাতে হয়। সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দিলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট ফেরত দিয়ে দেয়।
দুই. পারসোনাল মোবাইল নম্বরে দুই স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখতে হবে। এটা করা থাকলে অন্য কেউ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ঢুকতে গেলে ফেসবুক মেসেজে কোড পাঠাবে। অথবা সরাসরি কল করে কোড জানাবে। ফলে সহসাই জেনে যাচ্ছেন দুষ্কৃতকারীদের তৎপরতার খবর।
তিন. ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নাম এবং জন্ম-তারিখ মনে রাখতে হবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গেও মিল রাখতে হবে। এই তথ্যগুলো হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট উদ্ধারে কাজে লাগে।
চার. কোন লিংকে বা থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনে ফেসবুকের নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করা যাবে না।
ইনবক্সে লোভনীয় খুদে বার্তা এলো। সুখবর জানিয়ে কেউ লিংক পাঠাল। ভুলেও তাতে প্রবেশ করা যাবে না। সম্ভব হলে যে মেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে ফেসবুক খুলবেন, সেই পাসওয়ার্ডটি দেবেন। সেটা অন্য কোথাও ব্যবহার করবেন না।
পাঁচ. শক্তিশালী বা বেশি সংখ্যার (কমপক্ষে আট সংখ্যার) পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উত্তম। ফেসবুকে যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন। তা অন্যত্র ব্যবহার না করাই উত্তম। এক পাসওয়ার্ড সব জায়গায় ব্যবহার বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। এবার কেমন পাসওয়ার্ড নিরাপদ হতে পারে, জেনে নিন। বর্ণ বা সংখ্যার কম্বিনেশন দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করা এবং ছোট বা বড় হাতের বর্ণ ব্যবহার করা, প্রতীকী চিহ্ন (#,*,৳ ইত্যাদি) এবং নন-ডিকশনারি শব্দ ব্যবহার করা। সে ক্ষেত্রে অক্ষরের মধ্যে সংখ্যাও দেওয়া যেতে পারে।
ফেসবুকে যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন। অন্যত্র সেটা আবার ব্যবহার না করা ভালো। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইই) থেকে জানা যায়, একজন হ্যাকার আট ডিজিটের বেশি WPA-2 PSK( Pre Shared Key) যুক্ত একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ভাঙতে চাইলে তার ৬৫ হাজার বছরের বেশি সময় লাগবে। ঝুঁকিপূর্ণ সাইবার দুনিয়ায় একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কোনোই বিকল্প নেই।
ছয়. তিন থেকে পাঁচজন বন্ধুকে সিকিউরিটি অপশনে সংযুক্ত করতে পারেন, যেন কখনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে সহজে পুনরুদ্ধার করা যায়। নির্বাচিত বিশ্বস্ত বন্ধুর সহায়তা নিয়ে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এখানে বন্ধু যে সত্যিকার বন্ধু হয়েই পাশে দাঁড়াতে পারে।
সাত. ফেসবুকে কে বন্ধু, কে শত্রু চিনতে ভুল করলেই বিপদ। আপনি চেনেন না। এমন কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবেন না। এমনটাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের পরামর্শ। ইনবক্সে অনেক মুখরোচক খুদে বার্তা আসতে পারে। এসব এড়িয়ে যাওয়া ভালো। বন্ধু ছাড়া কেউ বার্তা দিতে পারবে না। এই অপশনটি চালু রাখতে পারেন।
আট. সন্দেহভাজন লিংককে না বলুন। কেউ লিংক পাঠাল, যাচাই করে নিন। হুট করে লিংকে ক্লিক দিতে নেই। যিনি লিংক দিয়েছেন, তাকে আলাদাভাবে নক দিয়ে জেনে নিতে পারেন। আদৌও সে পাঠিয়েছে কি না। কারণ হ্যাকার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেও সেই অ্যাকাউন্ট থেকে লিংক পাঠাতে পারে।
নয়. ফেসবুকে লগইনে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড টাইপ করবেন। তবে কখনোই ‘কিপ মি লগড ইন’ বক্স চেক করবেন না। এটা করলে আপনার অ্যাকাউন্ট বেহাত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। শুধু নিজের কম্পিউটারেই এই বক্সে হাত দেওয়া যেতে পারে।
দশ. অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ থেকে তথ্য নিয়ে হ্যাক হয়ে যেতে পারে সাধের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। এ রকমটাই জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান স্কেলার থ্রেটল্যাবস। তারা ৪০টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের শনাক্ত করেছে। তাই অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে একটু খোঁজখবর নিয়ে নিন। ফেসবুকে যে মেইল বা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন। প্রয়োজনীয় অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সম্ভব হলে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
এগারো. কখনোই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি), বৈধ কোনো আইডি কার্ড ফেসবুকে দেবেন না। পাসপোর্ট, ভিসা ফেসবুকে আপলোড করবেন না। কখন কোথায় যান লোকেশনসহ না দেওয়া উত্তম।
বারো. একেবারে অপরিচিত লোকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার ‘ফ্রেন্ড’ নয়, এমন আইডিগুলোয় খুব বেশি পরিমাণ মেসেজ পাঠালে সেগুলো স্প্যাম বলে গণ্য হতে পারে। ফলে ফ্রেন্ড অ্যাড করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে ফেসবুক।
সাহায্যকারীদের খোঁজখবর
কোনো কারণে ধরেন ফেসবুক নিয়ে সমস্যায় পড়লেন। আইডি হ্যাক হলো। সে ক্ষেত্রে হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট উদ্ধারে অন্যের সাহায্য নিতে পারেন। ফেসবুকে কিছু গ্রুপ আছে। যেখানে মিলবে এই সাহায্য। এবার জেনে নিন কিছু গ্রুপের নাম। Facebook ID Recovery Group, BD Recovery Group Facebook, Facebook Recovery Group, Facebook Help Center.