
আমেরিকায় সব ধরনের গাড়ি আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে আমেরিকার স্বাধীনতা সূচনা হলো বলে জানান তিনি। তবে ট্রাম্পের এমন ঘোষণা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। কারণ এটি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধকে আরো তীব্র করার পাশাপাশি গাড়ির দাম বাড়িয়ে দেবে।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এ ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, আগামী ২ এপ্রিল থেকে নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। একই সঙ্গে এটি আমদানিকারকদের ওপরও কার্যকর হবে। এই উদ্যোগ অটোমোবাইলশিল্পে বিপুল প্রবৃদ্ধি আনবে, যা এ দেশের নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করবে।
ট্রাম্প আরো বলেন, যেসব দেশ আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়, তাদের অবশ্যই কর দিতে হবে। কারণ তারা এ দেশের কর্মীদের চাকরি কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি সম্পদও নিয়ে যাচ্ছে। এই শুল্ক বিদেশিদের কাছ থেকে অর্থ ফিরিয়ে আনবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এ ধরনের পদক্ষেপের প্রভাব পড়বে গাড়িশিল্পের ওপর। ফলে গাড়ি উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে এর দাম বাড়বে। সেই সঙ্গে মিত্র দেশের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।
হোয়াইট হাউস বলছে, এই শুল্ক থেকে ফেডারেল রিজার্ভে যুক্ত হবে অতিরিক্ত ১০০ বিলিয়ন ডলার। তবে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী গাড়িবাণিজ্য এবং সরবরাহ চেইনকে হুমকির মুখে ফেলবে। শুধু তাই নয়, বাড়তি শুল্কের বোঝা বহন করতে হবে ক্রেতাদের।
আমেরিকা সবচেয়ে বেশি গাড়ি আমদানি করে মেক্সিকো থেকে। এরপর রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, কানাডা ও জার্মানি।
গত বছর প্রায় আট মিলিয়ন গাড়ি আমদানি করেছে আমেরিকা, যার বাণিজ্যমূল্য প্রায় ২৪০ বিলিয়ন ডলার।
আমেরিকার অনেক গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কানাডা ও মেক্সিকোতে গাড়ি তৈরি করে। তিন দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মুক্তবাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী এসব ব্যবসা করছে তারা। তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই আদেশ শুধু প্রস্তুত গাড়ির ক্ষেত্রেই নয়, গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। কারণ অন্য দেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে আমেরিকায় সংযোগ করা হয়। তবে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে যন্ত্রাংশের আমদানির ওপর নতুন শুল্ক কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। কারণ ইউএস কাস্টমস ও বর্ডার পেট্রল শুল্ক পরিমাণ নির্ধারণের আগ পর্যন্ত দুই দেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি ‘শুল্ক’মুক্ত থাকবে। প্রতিবেশী এই দেশগুলোর মধ্যে প্রতিদিন বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য পারাপার হয়।
জেসিকা নামের এক ক্রেতা জানান, আমদানি শুল্ক বাড়লে বাড়বে গাড়ির দামও। ফলে নতুন গাড়ি কেনার সখ্যা কমবে। সে ক্ষেত্রে পুরোনো গাড়িই মেরামত করে চলতে হবে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও বাড়বে।
কক্স অটোমোটিভ জানিয়েছে, যদি কানাডা এবং মেক্সিকোর তৈরি গাড়ি কেনা হয়, তবে এর দাম পড়ে আনুমানিক ৬ হাজার ডলারের বেশি।
এদিকে, বুধবার জেনারেল মোটরসের শেয়ারের দাম প্রায় ৩ শতাংশ কমে গেছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হওয়ার পর ফোর্ডসহ অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের দামও কমেছে।
ট্রাম্পের লক্ষ্য নিজ দেশে অটোমোবাইলশিল্পের আরো বিকাশ ঘটানো, যাতে আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। গাড়ি আমদানি বাবদ ব্যয় কমাতে ইন্ডিয়ানায় নতুন করে গাড়ি উৎপাদন কারখানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। তবে ২০২৮ সালের আগে এটা কোনোভাবে সম্ভব নয়। তবে ট্রাম্পের এ পদক্ষেপগুলো দেশীয় ব্যবসাকে সুরক্ষা দিতে পারলেও, বিদেশ থেকে আসা যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসাগুলোর জন্য খরচ বাড়িয়ে তুলবে।
শুল্ক ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলে, শুল্ক কমানো হবে না। এটি স্থায়ী। যারা এ দেশে গাড়ি তৈরি করবে, তাদের কোনো শুল্ক দিতে হবে না।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি রপ্তানিকারক দেশ জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় তারা সব ধরনের সমস্ত বিকল্প খতিয়ে দেখবেন।