Image description
 

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কোনো সরাসরি আলোচনা হবে না। তবে, পরোক্ষ আলোচনার জন্য ইরান প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।রবিবার (৩০ মার্চ) তেহরানে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে পেজেশকিয়ান বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চিঠির জবাব আমরা ওমানের মাধ্যমে দিয়েছি এবং সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। তবে, আমরা পরোক্ষ আলোচনার জন্য উন্মুক্ত।"তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান আলোচনার বিপক্ষে নয়, তবে ওয়াশিংটনকে আগে তাদের "অতীতের ভুল" সংশোধন করতে হবে এবং আস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।এদিকে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন ট্রাম্প স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, "যদি তারা চুক্তি না করে, তাহলে বোমাবর্ষণ হবে।"রবিবার (৩০ মার্চ) এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, "তারা যদি সমঝোতায় না আসে, তাহলে আমি তাদের ওপর পুনরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা (সেকেন্ডারি ট্যারিফ) আরোপ করব, ঠিক যেমন চার বছর আগে করেছিলাম।"

 
 

এর আগে মার্চ মাসে ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যেখানে সতর্ক করে বলা হয়, "সমঝোতা করুন, নয়তো সামরিক হামলার জন্য প্রস্তুত থাকুন।"খামেনি সেই হুমকিকে উড়িয়ে দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইরান কেবল মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনায় আগ্রহী।ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদে (২০১৭-২০২১) ইরান ও বিশ্বশক্তিদের মধ্যে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। ওই চুক্তির আওতায় ইরান তাদের পারমাণবিক কার্যক্রমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল, যার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল।কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়ে ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী পর্যাপ্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করলেও, এখনো তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

 

ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ "বেসামরিক ও জ্বালানি উৎপাদনের জন্য।"নিষেধাজ্ঞার চাপে ইরানের অর্থনীতি, আলোচনার দরজা একেবারে বন্ধ নয়
নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি চরম সংকটে পড়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হলে তবেই অর্থনৈতিক স্বস্তি ফিরে আসতে পারে।এ প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির উপদেষ্টা কামাল খাররাজি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সব পথ বন্ধ হয়নি।"তিনি আরও বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় বসতে ইরান প্রস্তুত। এতে আমরা তাদের অবস্থান বিশ্লেষণ করতে পারব, আমাদের শর্ত জানাতে পারব এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারব।"ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন আন্তর্জাতিক মহলের কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সূত্র: আল-জাজিরা