Image description

ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। বেসরকারি সামাজিক মাধ্যম সিগনালের এক চ্যাটরুমে কর্মকর্তারা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ভুলক্রমে সেই চ্যাটরুমে একজন সাংবাদিকও ছিলেন, যা সবার নজর এড়িয়ে যায়। 

আজ মঙ্গলবার সিএনএন, বিবিসিসহ একাধিক পশ্চিমা গণমাধ্যমে এই তথ্য জানা গেছে।

দ্য আটলান্টিকে নিজের কলামে ঘটনাটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন সংবাদমাধ্যমটির এডিটর ইন চিফ জেফরি গোল্ডবার্গ। 

গোল্ডবার্গের বয়ান

দ্য আটলান্টিকের এডিটর ইন চিফ জেফরি গোল্ডবার্গ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
দ্য আটলান্টিকের এডিটর ইন চিফ জেফরি গোল্ডবার্গ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, '১৫ মার্চ ইস্টার্ন টাইম জোনে দুপুর ২টার কিছুক্ষণ আগে সারা বিশ্ব জানতে পারে, ইয়েমেনের বিভিন্ন অংশে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।'

'তবে আমি প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার দুই ঘণ্টা আগেই এই হামলার বিষয়টি জেনে যাই। আমি এটা জানতে পেরেছিলাম, কারণ সকাল ১১টা বেজে ৪৪ মিনিটে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ আমাকে তার যুদ্ধ পরিকল্পনা টেক্সটের মাধ্যমে জানিয়ে দেন। ওই পরিকল্পনায় অস্ত্র প্যাকেজ, লক্ষ্যবস্তু ও হামলার সময়সীমার নিখুঁত ও সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল', যোগ করেন তিনি।

ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের এই মারাত্মক ভুল স্বীকার করে নিয়েছে।

সিগন্যাল মেসেজিং গ্রুপটিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য ছাড়াও ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।

সেই গ্রুপে দ্য অ্যাটলান্টিক পত্রিকার সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গকেও রাখা হয়েছিল। গোল্ডবার্গ শুরুতে ভেবেছিলেন, এই গ্রুপ 'আসল হতেই পারে না।'

তিনি লিখেছেন, 'আমার সন্দেহ ছিল এই টেক্সট গ্রুপটা আসল হতেই পারে না। কারণ, আমি ভাবতে পারিনি, জাতীয় সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে মার্কিন নেতৃত্ব সিগন্যালের মাধ্যমে কথা বলবেন। পরবর্তী সামরিক পরিকল্পনার কথা (সেখানে) জানাবেন।'

এই গ্রুপ চ্যাটে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ফলে বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই গোল্ডবার্গ জেনে গিয়েছিলেন, এই হামলা হতে চলেছে।

কী হয়েছিল?

হুতিদের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি ভবনের চিত্র। ছবি: এএফপি
হুতিদের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি ভবনের চিত্র। ছবি: এএফপি

গত ১৫ মার্চ আমেরিকা ইয়েমেনে হুতিদের উপর আক্রমণ চালায়। তার কয়েক ঘণ্টা আগে গোল্ডবার্গ গ্রুপে মেসেজ দেখেন, বিমান হামলা হতে যাচ্ছে।

গোল্ডবার্গের তখনো মনে হয়েছিল, এই গ্রুপটা ভুয়া। কিন্তু যখন সত্যিই ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার খবর আসলো, তখন তিনি বুঝতে পারেন, এই গ্রুপ ভুয়া নয়।

তিনি বলেন, 'এরপর আমি সেই গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসি।'

সোমবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদের মুখপাত্র ব্রেন হিউজেস বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, 'গ্রুপের থ্রেড দেখে মনে হচ্ছে, এই গ্রুপটি ভুয়া নয়। আমরা দেখছি, কী করে (গোল্ডবার্গের) ওই নম্বরটি অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্রুপে ঢুকে গিয়েছিল।'

ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ

সিগনাল একটি জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
সিগনাল একটি জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, 'আমি কিছুই জানি না।'

পরে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, 'জাতীয় নিরাপত্তা টিম ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের ওপর ট্রাম্পের পূর্ণ আস্থা আছে।'

হেগসেথ অবশ্য জানিয়েছেন, কোনো সামরিক পরিকল্পনার কথা গ্রুপে শেয়ার করা হয়নি। তিনি হাওয়াইতে বলেছেন, 'আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, কেউই গ্রুপে সামরিক পরিকল্পনার কথা শেয়ার করেননি।'

'গোল্ডবার্গ প্রতারক এবং সাংবাদিক হিসাবে তার কোনো সুনাম নেই', যোগ করেন তিনি।

কিন্তু কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা গোটা ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

হাউসের অন্যতম প্রধান ডেমোক্র্যাট সদস্য হাকিম জেফরিস বলেছেন, 'কংগ্রেসের উচিত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা এবং এ ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়, তা নিশ্চিত করা।' 

সশস্ত্র বাহিনী সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ডেমোক্র্যাট প্যাট রায়ান সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, 'যদি রিপাবলিকানরা হাউসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না করেন, তাহলে আমি নিজে থেকে এই আলোচনার উদ্যোগ নেব।'

সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, 'এটা চরম বেআইনি ও ভয়ংকর ঘটনা। এটা অবিশ্বাস্য। বাছবিচারহীনভাবে মানুষকে গ্রুপে ঢোকানো হয়েছে। সেই গ্রুপে জাতীয় সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটা ভাবা যায় না।'