Image description

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে শহরে অবস্থিত নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান ও তাঁর স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়াকে। শুরুতে এই দম্পতির মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হলেও পরে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে—ওই বাড়িটিতে হ্যাকম্যানের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই মারা গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী বেটসি। আর তীব্র আলঝেইমারের কারণে স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি হয়তো বুঝতেই পারেননি হ্যাকম্যান। পরে নিঃসঙ্গ অবস্থায় তিনিও মারা যান।

 

এবার হ্যাকম্যান দম্পতির মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন হতে না হতেই সামনে এল হ্যাকম্যানের রেখে যাওয়া বিপুল সম্পত্তির বিষয়টি। বিবিসি জানিয়েছে, সম্পত্তির উইলে জিন হ্যাকম্যান তাঁর কোনো সন্তানেরই নাম উল্লেখ করেননি। তিনি তাঁর ৮০ মিলিয়ন ডলারের (৯৭১ কোটি টাকার বেশি) সম্পত্তির পুরোটাই রেখে গিয়েছিলেন ৩০ বছরের দাম্পত্য সঙ্গী বেটসি আরাকাওয়ার নামে। কিন্তু হ্যাকম্যানের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই মারা গেছেন বেটসি। এ অবস্থায় হ্যাকম্যানের সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে।

তবে আইন বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন—যেহেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, বেটসি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর সাত দিন আগে মারা গিয়েছিলেন, তাই উইলে সন্তানদের নাম না থাকলেও তাঁরা বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন। হ্যাকম্যানের তিন সন্তান রয়েছেন। তাঁরা সবাই হ্যাকম্যানের প্রয়াত প্রথম স্ত্রী ফে মাল্টিজের গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন। এর মধ্যে সবার বড় ক্রিস্টোফারের বয়স এখন ৬৫ বছর। অপর দুই সন্তান এলিজাবেথ ও লেসলির বয়স যথাক্রমে ৬২ ও ৫৮ বছর। বাবার সম্পদের বিষয়ে তাঁদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

লাভেল বলেন, ‘উইলটি এখন উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়াকরণ করা হবে এবং সন্তানেরা আইনত পরবর্তী উত্তরাধিকারী হওয়ার অধিকার রাখেন।’ এ ক্ষেত্রে সন্তানেরা যদি প্রমাণ করতে পারেন, বেটসি আরাকাওয়া অভিনেতা হ্যাকম্যানের আগেই মারা গিয়েছিলেন, তাহলে উইলটি বাতিল হবে এবং উত্তরাধিকারী হিসেবে বাবার সম্পত্তি তাঁরাই পাবেন।

এদিকে কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্তেও দাবি করা হয়েছে, বেটসি আরাকাওয়া গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক বিরল ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং কয়েক দিন পর প্রাকৃতিক কারণে হ্যাকম্যানের মৃত্যু হয়। পরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশীদের নিরাপত্তারক্ষী দল বাড়ির ভেতরে তাঁদের মরদেহ আবিষ্কার করে।

মরদেহ উদ্ধারের সময় বেটসিকে বাথরুমে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। সেখানে ওষুধের বোতল ছড়িয়ে ছিল। অন্যদিকে হ্যাকম্যানকে পাওয়া যায় বাড়ির পেছনের অংশে। তিনি তখন ট্রাউজার ও স্লিপার পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তাঁর পাশে একটি লাঠি ও সানগ্লাস পড়ে ছিল।

প্রথমে ঘটনাটিকে সন্দেহজনক বলে মনে করা হলেও পরে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে, এতে কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না।

আরেকটি বিষয় হলো—বেটসি আরাকাওয়ার উইলে বলা হয়েছে, মারা গেলে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি হ্যাকম্যানের কাছে যাবে। তবে তাঁর মৃত্যুর ৯০ দিনের মধ্যে যদি হ্যাকম্যানও মারা যান, তাহলে বেটসির সম্পত্তি একটি ট্রাস্টে স্থানান্তরিত হবে এবং চিকিৎসা খরচ মিটিয়ে তা দান করা হবে।

হ্যাকম্যান তাঁর সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে অতীতে কথা বলেছিলেন। ১৯৮৯ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছিলেন, ‘একজন অভিনেতা হিসেবে খুব স্বার্থপর হয়ে পড়েছিলাম। আমি জানতাম আমার পরিবার আছে, কিন্তু এমন অনেক কাজ নিয়েছিলাম যেখানে তিন-চার মাস তাদের থেকে দূরে থাকতে হতো। অর্থ ও খ্যাতির মোহে আমি আবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম।’

হ্যাকম্যানের সন্তানেরাও জনসমক্ষে খুব কমই আসতেন। তবে তাঁরা মাঝে মাঝে রেড কার্পেট ইভেন্টে বাবার সঙ্গে উপস্থিত হতেন। ২০০০ সালে আইরিশ ইন্ডিপেনডেন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হ্যাকম্যান বলেছিলেন, ‘একজন তারকার সন্তান হওয়া খুব কঠিন। আমি তাদের পাশে সব সময় থাকতে পারিনি। আর ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসের কারণে আমার খ্যাতির ভার তাদের বইতে হয়েছে।’

হ্যাকম্যানের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা ও নাতনি গভীর শোক জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘তিনি (হ্যাকম্যান) তাঁর অসাধারণ অভিনয় জীবনের জন্য বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছেন। তবে আমাদের কাছে তিনি শুধু বাবা ও দাদা ছিলেন। আমরা তাঁকে ভীষণভাবে মিস করব এবং তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’