Image description
♦ প্রধান টার্গেট গার্মেন্ট শ্রমিকদের ৯৯ শতাংশই এ পেনশন স্কিমের বাইরে ♦ ৫ আগস্টের পর প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে নতুন নিবন্ধন ♦ আগ্রহ নেই নিবন্ধিতদের চাঁদা পরিশোধেও ♦ সবচেয়ে বেশি অনাগ্রহ প্রবাসীদের স্কিমে

পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রবর্তন করে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট। এরপর ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি এই পেনশন স্কিমে। ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে স্বৈর সরকারের পতন ঘটে। এরপর পেরিয়ে গেছে ছয় মাস। এ সময়ে প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে নতুন নিবন্ধন। সাবক্রিপশন ফি বা চাঁদা পরিশোধেও বকেয়া পড়েছে। চারটি স্কিমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনাগ্রহ প্রবাসীদের স্কিমে। সব স্কিমে এখন পর্যন্ত জমা পড়েছে ১০০ কোটি টাকার মতো। টার্গেট এবং বর্তমান বাস্তবতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম একটি ফ্লপ ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, ২০২৩-এর আগস্ট থেকে ২০২৪-এর আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৪ লাখ মানুষ। অথচ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই রয়েছেন ১৪ লাখের বেশি। অন্যদিকে দেশে পোশাক শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ৩৩ লাখ। এদেরই প্রধান টার্গেট করা হয়েছিল সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর সময়। অথচ এ খাতের প্রায় ৯৯ শতাংশ শ্রমিকই এ ব্যবস্থায় এখনো নিবন্ধন করেননি বলে এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেই জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৯০.৬ শতাংশ কর্মী এ প্রকল্পের জন্য আগ্রহী নয়। আর ৬.৭ শতাংশ কর্মী মনে করেন, এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই কোনো পেনশন ব্যবস্থা নয়। এ ছাড়াও ২.৭ শতাংশ কর্মীর এ স্কিম সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। অথচ প্রচার-প্রচারণার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর দেশের বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের কাছে এর সুফল সম্পর্কে জানাতে ব্যর্থ হয়েছে সে সরকার। অথচ এটার মূল লক্ষ্যই ছিলেন বেসরকারি খাতের কর্মীরা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ প্রকল্প আরও ঝিমিয়ে পড়ে। আগের সরকারের প্রতি আস্থার সংকট ও প্রচারণার অভাবে স্কিমের বিস্তারিত জানেন না অনেকেই। এজন্য আবার নতুন করে প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৩-২৪ অনুযায়ী, জুন-২০২৪ পর্যন্ত প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা এই চার স্কিমের আওতায় নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪১ জন। আর গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখে। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই চার মাস নতুন নিবন্ধন হয়নি বললেই চলে।

জানা গেছে, দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এক নিশ্চিত অবসর ভাতার সুবিধা দিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছিল। প্রবাসী, বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এ স্কিমে চারটি ক্যাটাগরি চালু হয়। তবে দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অনেকে এখনো জানেনই না এসব স্কিমের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেহাল দশা প্রবাসীদের স্কিমে। এ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধনের সংখ্যা মাত্র ৯১৩। এসব নিবন্ধনের বিপরীতে সাবক্রিপশন ফি হিসেবে এখন পর্যন্ত জমা পড়েছে ৯৯ কোটি ৪২ লাখ ৯১। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন করেছেন স্বল্প আয়ের মানুষের স্কিম সমতায়। এতে নিবন্ধনের সংখ্যা ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮২। এ ছাড়া প্রগতি ও সুরক্ষা স্কিমে নিবন্ধনের সংখ্যা যথাক্রমে ২২ হাজার ৪১০ ও ৬৩ হাজার ১৮৪। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৫ আগস্টের পর মানুষের মধ্যে এই স্কিম নিয়ে কিছুটা আস্থার সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়া আমাদের প্রোমোশনাল কাজকর্মেও কিছুটা ছেদ পড়েছে। ঈদের পর আমরা আবার নতুন করে কিছু প্রোমোশনাল কর্মসূচি নেব। তখন মানুষের আগ্রহ আবার বাড়বে বলে আশা করা যায়। আর সাবক্রিপশন বা চাঁদা বকেয়া পড়ার পেছনে কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটা মানুষের রোজগার কমে যাওয়ার কারণে হতে পারে।