
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন শোনা যাচ্ছে ঘরে ফেরার সুর। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি গভীর আস্থা তাদের। এখন ঘরে ফিরতে আশাবাদী তারা।
গত সাত বছর ধরে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের আরাকান রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১৩ লাখ রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে রাজি করানো যাচ্ছিলনা। গত ১৪ মার্চ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইফতার এবং তাদের সাথে মতবিনিময় ও দেশে ফেরার আহŸানকে রোহিঙ্গারা স্বাগত জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের আহŸানে উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৩ লাখ রোহিঙ্গা এখন তাদের দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।
সেদিন ইফতারের আগ মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে নিয়ে যখন রোহিঙ্গাদের ভাষায় বলছিলেন, ‘এখানে ছোট্ট ঘরে না থেকে আপনাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামী ঈদ যেন আপনারা আপনাদের দেশে আদায় করতে পারেন সে ব্যবস্থা করছি। আমাকেও দাওয়াত দিয়েন।’ তখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা আনন্দ উচ্ছাসে প্রকাশ করে ঘরে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
তারা মনে করছে এই পর্যন্ত সাত বছরে রোহিঙ্গাদের এরকম কাছে গিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানের কথা বলার নেতা পাওয়া যায়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা হলেও তাদেরকে দেশে ফেরানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের সাথে পায়নি। এখন তারা মনে করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বিশ্ব নেতা ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন। তেমনিভাবে তিনি এই সমস্যার সমাধানে চীন রাশিয়া ও আমেরিকার মতো দেশ এবং বিশ্ব নেতাদেরকেও রাজি করাতে পারবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন। রোহিঙ্গারা আরো মনে করেন, তাদের সমস্যার একটি সম্মানজনক স্থায়ী সমাধান এবার বেরিয়ে আসতে পারে। তাই তারা দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।
এদিকে গত দু-এক বছর ধরে মিয়ানমার জান্তা সরকারের সাথে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তবে আরাকান বা রাখাইন এলাকায় আরাকান আর্মির বিজয় হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমাদের সরকার ও মনে করছেন দ্রæতই রাখাইনে সমস্যা সমাধান হবে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম হবে।
গতকাল কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরতে প্রত্যায়ের কথা। ১০ নম্বর ক্যাম্পের এক ইমাম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তারা আস্থাভান। এখন তারা মিয়ানমারে ফেরার সুযোগ হয়েছে। আরাকানের বলি বাজারের এক কৃষক সৈয়দ করিম বলেন, এতদিন দেশে ফেরানোর মত একজন নেতা পাওয়া যায়নি। এখন প্রধান উপদেষ্টাকে তারা এবিষয়ে একজন যোগ্য নেতা বলেই মনে করেন। কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসকারী আমিনা খাতুন বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাব আঁরার মনের কথা কইয়্যে। আঁরা এড়ে আর নথাইক্যুম। ঘরত যাইয়ুমবই।’
আরআরআরসি মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটি আসলে জটিল বিষয়। এর সাথে অনেক পক্ষ জড়িত। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি সমাধানে সফল হবেন বলে তিনি আশা করেন।