Image description
 

বুলেট নয়, এবার অনাহারে মরবে অসহায় গাজাবাসী। সেই লক্ষ্যেই পরিকল্পিত এ নৃশংসতা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলিরা। অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পরও অসহায় মানুষগুলোকে শান্তিতে বাঁচতে দিচ্ছে না। মানবিক সহায়তা বন্ধের অস্ত্রে পঙ্গু করে দিচ্ছে গোটা জাতিকে। বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্যের প্রয়োজন, তাতেও নিষেধাজ্ঞা। ৮ দিন ধরে চলা ইসরাইলের এ বর্বর পদক্ষেপে অঞ্চলটির ২০ লাখের বেশি মানুষ খাদ্যাভাবে পড়েছে। রোববার আলজাজিরারর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি মানবিক সহায়তা বন্ধের কারণে গাজার ২৩ লাখ মানুষ খাদ্য, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতি অনুভব করছে। এ ছাড়াও খান ইউনুসে অবস্থিত ৬টি বেকারি পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা ৭ দিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই খা-খা অবস্থা। ধূসর বালুকণায় ছেয়ে আছে অবরুদ্ধ অঞ্চলটির প্রতিটি স্থান। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও এখনো দিশেহারা। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে থাকতে হচ্ছে রাস্তায় ইঁদুর-বেড়ালের সঙ্গে। গাজার বুরেজের অস্থায়ী একটি ক্যাম্পে থাকছেন হানিন আল-দুরা (৩৪)। এখন মাথার ওপর ছাদ থাকলেও কিছুদিন আগেও রাস্তায় রাত কাটাতে হয়েছে হানিনকে। তখনকার সময়টা রীতিমতো ‘অগ্নিপরীক্ষা’ বলে জানিয়েছেন তিনি। 

হানিন বলেন, ‘দেড় মাস রাস্তায় সংগ্রাম করার পর আমি তাঁবু পেয়েছি। সেই সময়টা ভয়ংকর ছিল। কুকুর এবং ইঁদুরের সঙ্গে দিন-রাত থাকতে হচ্ছিল। মাঝেমধ্যে মনে হতো ইঁদুরগুলো রাতে মাটির নিচ দিয়ে আমার বাচ্চাগুলোর দিকে এগোচ্ছে। এমনো সময় গেছে, বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে গিয়ে আমি রাতের পর রাত ঘুমাইনি।’ 

এরপর হানিন আরও বলেন, তার ‘ত্যাগ অন্য কারোর চেয়ে বেশি’। কেননা তিনি সন্তান ও স্বামীকে হারিয়েছেন। এখন পরিবারের অন্য সদস্যদের শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদার ব্যবস্থা তিনিই করে থাকেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় শুধু বাসস্থানই নয়, খাদ্যদ্রব্যের রয়েছে তীব্র সংকট। মানবিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবারও আলোচনায় বসবে ইসরাইল ও হামাস। 

 

কাতারের রাজধানী দোহায় এ বৈঠকের আয়োজন হবে। আলোচনায় থাকছে যুক্তরাষ্ট্রও। মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ দোহায় যাবেন। দুই মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়েং জানা গেছে, উইটকফ ‘ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে একটি নতুন জিম্মি-মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতার চেষ্টা করবেন। উইটকফের আগে কাতার ও মিসরের প্রতিনিধিরা সোমবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসবে। তবে ট্রাম্পের দূত হামাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাকি কেবল ইসরাইলি প্রতিনিধি এবং কাতারি ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে দেখা করবেন, তা স্পষ্ট নয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। উইটকফের ভ্রমণে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে গাজার সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। সংগঠনটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাহের আল-নোনো বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, তিনি (উইটকফ) যুদ্ধবিরতি আলোচনা সফল করতে সাহায্য করবেন।’ 

এদিকে ইউরোপের প্রধান দেশগুলো বলেছে, তারা ফিলিস্তিনের গাজা পুনর্গঠনে আরব সমর্থিত পরিকল্পনাকে সমর্থন করে। আরব সমর্থিত সেই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করেই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আরব সমর্থিত পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের ধারণার একটি বিকল্প। শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আরব সমর্থিত পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এ পরিকল্পনায় পাঁচ বছরের মধ্যে গাজা পুনর্গঠনের কথা বলা আছে। এক বিবৃতিতে ইউরোপের এ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, আরব সমর্থিত প্রস্তাবটিতে গাজার বিপর্যয়কর জীবনযাত্রার দ্রুত ও টেকসই উন্নতির প্রতিশ্রুতি আছে। মিসরের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে গাজার অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা, পুনর্গঠন ও শাসনের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। 

উল্লেখ্য, জানুয়ারি থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে হামাসের হাতে আটক ৫৯ জন বন্দির মুক্তি এবং যুদ্ধের অবসান নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। ইসরাইল ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় হামলা বন্ধ করে দিয়েছে এবং হামাস ৩৩ জন ইসরাইলি, ৫ জন থাই নাগরিকসহ প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। তবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে, বাকি ৫৯ বন্দির মধ্যে অর্ধেকেরও কম এখনো জীবিত রয়েছেন। গাজায় ইসরাইলি আক্রমণের ফলে ৪৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরাইলিকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে।