![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/5a69a6a45a46747a90a4a9a93601dfac.png)
সারা বছর তো নয়ই, এমনকি প্রতি বছরে কোনো বিশেষ সময়েও ফুটতে দেখা যায় না এই ফুলকে। প্রতি ১২ বছরে মাত্র একবার ফোটে এই ভারতীয় ফুল। বিশেষ অদ্ভুত এই ফুলটির নাম ‘নীলকুরিঞ্জি’।
ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় ফোটে এই ফুলটি। পর্বতমালাকে নীলকুরিঞ্জি ফুলের রাজ্যও বলা যায়। গোটা পর্বতের সারি ঢাকা পড়ে যায় এক আশ্চর্য নীল গালিচায়।
এই ফুল প্রকৃতির এক বিস্ময়। এখানকার আদিবাসীদের কাছে এই ফুল শুভ বার্তার প্রতীক। এর বৈজ্ঞানিক নামটিও বেশ চমকপ্রদ, স্ট্রোবিল্যান্থেস কুনথিয়ানা।
এক যুগ পর পর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভারতের তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যের নীলগিরি পাহাড়ে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় নীলকুরিঞ্জি ফুলটি।
অবাক করার মতো ব্যাপার হলো- কীভাবে এই ফুল বছরের এই হিসেব কষে ফুটতে শুরু করে? নীলকুরিঞ্জি নামটি সর্বাধিক প্রচলিত নাম হলেও কখনো কখনো স্থানীয়রা এই ফুলকে কুরুঞ্জি বা কুরুঞ্জিও নামে অভিহিত করে থাকে। এই ফুল ফুটতে নির্দিষ্ট উচ্চতা ও বিশেষ জলবায়ুর প্রয়োজন।
কেউ হঠাৎ করে ফুলটিকে দেখলে এর তেমন কোনো বৈশিষ্ট্যই চোখে পড়বে না। অন্য আর কয়েকটি ফুলের মতোই জংলি কোনো ফুল পাহাড়ি জঙ্গলে ফুটে আছে বলে মনে হবে। ফুলটি দেখতে অনেকটা ঘণ্টার মতো। সাধারণত ফুলগুলো থোকায় থোকায় দলবদ্ধভাবে ফোটে। তাই আলাদাভাবে এই ফুল লোকজনকে খুব একটা আকর্ষণ করার কথা নয়। কিন্তু মাইলের পর মাইল যখন ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়, দেখে মনে হয়, কে যেন নীল-বেগুনি রঙের গালিচা পেতে দিয়েছে।
প্রায় আগাছার মতোই এতগুলো বছর ফুলের গাছগুলো নিজের মতো করে বাঁচে-মরে; আবার নতুন করে পাতা জন্মায়, প্রকৃতির খেয়ালে নিজের মতো করেই বেড়ে উঠে। কিন্তু যখই এই ফুলের ফোটার সময় আসে, অমনি বনের চেহারাটাই পাল্টাতে থাকে। মনে হয় কে যেন রং-তুলি দিয়ে নীল রঙের ক্যানভাসে ফুলগুলো পরপর এঁকে চলেছেন। কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত রং বদলাতে থাকে এই ফুলের।
ফুলের রঙের ক্রমিক এই পরিবর্তনটিও চোখে পড়ার মতো। কুড়ি থেকে ধীরে ধীরে এই ফুল যখন ফুটতে থাকে, তখন নীল থেকে নীলচে-বেগুনি ও সবশেষে ফিকে বেগুনি রং ধারণ করে এই ফুল। ফুলের এমন ঐশ্বরিক পরিবর্তন দেখার জন্য প্রতি বছর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড় লেগে যায় এই উপত্যকায়। কিন্তু এমনই যার রাজকীয় আবির্ভাব, সেই ফুলের গাছগুলো কিন্তু নিতান্ত অনাদরেই বেঁচে থাকে।
নীলকুরিঞ্জি ফুল ফুটলে নীলগিরির বিস্তীর্ণ এলাকায় মৌমাছিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গের আধিক্য বহু গুণ বেড়ে যায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এবং ভূবিজ্ঞানীদের মতে, নীলকুরিঞ্জির বৈচিত্রময় রং, মিষ্টি গন্ধ এবং ফুলে মধুর আধিক্য কীটপতঙ্গদের প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। ফলে মৌমাছিরা মধুর লোভে, অন্য পতঙ্গরা বংশবিস্তারের নেশায় এই ফুলের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়।
তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যের আশেপাশের এই ফুলের আধিক্য দেখতে পাওয়া যায়। মুন্নার জেলার নীলগিরি পাহাড়েই সবচেয়ে বেশি ফোটে এই ফুল। শোনা যায়, নীলগিরি পাহাড়ের নামই হয়েছে এই ফুল থেকে৷ যখন এই ফুল ফোটে পাহাড়ের ঢালে ঢালে, তখন থাকে শুধু নীলেরই বাহার৷ ২০০৬ সালে এমনই নীল রঙের ফুলে ঢেকে গিয়েছিল নীলগিরি। ২০১৮ তে, এরপর ২০৩০ এ নীলগিরির বিস্তীর্ণ এলাকা ফের একবার ঢেকে যাবে নীলকুরিঞ্জি ফুলে।
শেষবার ২০০৬ তে তামিলনাড়ুর কোদাইকানালের পালনি পাহাড়ে রেকর্ড সংখ্যক নীলকুরিঞ্জি ফুটেছিল। টার্নাস ভ্যালি উপত্যকায় এই ফুলের চাদর মেলেছিল। আবার কেরালার মুন্নার থেকে কোদাইকানালের দিকে যেতে সড়কপথে কেরালা-তামিলনাড়ু সীমান্তের টপ স্টেশন নামক জায়গাটির প্রধান আকর্ষণই হলো নীলকুরিঞ্জি। যে বছর এই ফুল ফোটে, তখন আশেপাশের কোথাও তিল ধারণের জায়গা থাকে না৷