Image description

সবার জন্যে উন্মুক্ত হলো স্বপ্নের মেট্রোরেল। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) শিডিউল অনুযায়ী সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছাড়ে সকাল সাড়ে ৮টায়। প্রাথমিকভাবে ৭৫ জনকে তোলা হয় মেট্রোরেলে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু হলো।

সকাল ৮টা থেকে আগারগাঁও থেকে উত্তরা এবং উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে চলাচল করবে মেট্রোরেল। মেট্রোরেলে চড়তে এরই মধ্যে আগারগাঁও স্টেশনে ভিড় জমিয়েছেন যাত্রীরা। আগারগাঁও স্টেশনে দেখা গেছে, মেট্রোরেলে চড়তে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন যাত্রীরা। কেউ অফিসগামী, কেউবা এসেছেন পরিবারসহ। আবার অনেকেরই লক্ষ্য শুধু মেট্রোরেলে ঘোরা।

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের কাউন্টারে প্রবেশের দরজা। প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলের স্টেশনে প্রবেশ করেন কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। এরপর একে একে স্টেশনে গিয়ে টিকিটের জন্য লাইন ধরেন অন্য যাত্রীরাও।

কথা হয় তোফাজ্জল মিয়া নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা যাবেন তিনি। তোফাজ্জল বলেন, আজ প্রথম মেট্রোরেল চালু হবে। তাতে চড়ার জন্যই আসা। সবসময় বিদেশে দেখে এসেছি। আজ নিজের দেশের মেট্রোরেলে চড়ব।

সরকারি চাকরিজীবী মামুন তুষার বলেন, মেট্রোরেলে ঘোরার জন্যই আজ এসেছি। এখান থেকে উত্তরা যাব, আবার ব্যাক করব। খুবই ভালো লাগছে যে দেশে মেট্রোরেল চালু হয়ে গেছে।

অবশ্য মামুন তুষারের অফিস উত্তরাতেই। তিনি বলেন, এত দিন ধরে বাসে করে গিয়েছি। আজ প্রথমবার মেট্রোরেলে চড়ে অফিসে যাব। দ্রুত এবং ভোগান্তি ছাড়াই যেতে পারব।

পরিবারসহ এসেছেন ইফতেখারুল আলম। তিনি বলেন, মেট্রোরেলে চড়ার জন্য সকাল সকাল পরিবার নিয়ে চলে এলাম। ভেবেই ভালো লাগছে যে উন্নত দেশের মতো আমাদেরও মেট্রোরেল হয়েছে। তাই প্রথম অভিজ্ঞতাটা মিস করতে চাইনি।

এর আগে বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জাতির পিতার কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা।

এদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হতে পেরে দারুণ আনন্দিত বলে জানিয়েছেন মেট্রোরেলের চালক মরিয়ম আফিজা। মেট্রোরেলে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পৌঁছানোর পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, ২৯ তারিখ থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা মেট্রোরেল চালানো হবে। প্রথমদিকে কোনো স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে না। উত্তরা থেকে একটি ট্রেন, আরেকটি ট্রেন আগারগাঁও স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবে। উভয়দিকে ট্রেনগুলো প্রতি ১০ মিনিট পরপর চলাচল করবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা হলো তিন মাস পরে, সেটি ২৬ মার্চও হতে পারে, আমরা ওই দিন থেকে পূর্ণ অপারেশনে যাব। এসময়ের মধ্যে মানুষ মেট্রোরেলে চড়ায় অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, এটা আমাদের বিশ্বাস। শুরুতে মেট্রোরেল পূর্ণাঙ্গ অপারেশনে যাচ্ছে না।

যেভাবে মিলবে টিকিট: মেট্রোরেল চলবে দিনে চার ঘণ্টা (সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টা)। এছাড়া উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে প্রথম দিকে ট্রেন মাঝপথে কোথাও থামবে না। এ ক্ষেত্রে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট (কার্ড) কাটা যাবে। পৌনে ১২ কিলোমিটারের এই পথের ভাড়া ৬০ টাকা।

পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে স্টেশনে দুই ধরনের কার্ড পাওয়া যাবে। এরমধ্যে একটি স্থায়ী এবং অন্যটি একবারের যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) কার্ড। প্রথম দিকে মেট্রোরেল স্টেশন থেকেই এই কার্ড বিক্রি শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে স্টেশনের বাইরেও এটি কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমটিসিএল। ১০ বছর মেয়াদী স্থায়ী কার্ড কিনতে হবে ২০০ টাকা দিয়ে। আর এই কার্ড দিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণে প্রয়োজনমতো টাকা রিচার্জ করতে পারবেন যাত্রীরা।