Image description

দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ১৫৮ জন সনদ জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১ জনের তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। আজ রবিাবার (২ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় দফায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সনদ যাচাই শেষে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

জানা গেছে, মেডিকেল ভর্তিতে ১৯৩ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৫৮ জন সনদ জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাচাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে ৭৭ জনকে নির্বাচিত করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ৭৭ জনই সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। সনদ জমা না দেওয়া ৩৫ জনসহ মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের ভর্তি বাতিল হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মেডিকেলে বিভিন্ন কোটায় উত্তীর্ণদের সনদ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন কোটায় পাসকৃতদের ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিতই থাকবে। তাদের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গত ১৯ জানুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কম নম্বর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির সুযোগ পাওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের ফল বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চান্সপ্রাপ্তদের সনদ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ হলেও প্রথম দফায় ৪৯ জন শিক্ষার্থী সনদ জমা দেননি। তাদের মধ্যে ১৪ জন আজ সনদ জমা দিয়েছেন। এই ১৪ জনের মধ্যে সবাই মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি। শুধু এই ১৪ জনই নয়; সনদ জমা দেওয়া ১৫৮ জনের ৮১ জনই মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘সনদ যাচাইকালে ৭৪ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আরও ৩ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছে। তবে তাদের সনদ পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ৭৭ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে পারেন।’

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রকাশিত ফলাফলে ৫ হাজার ৩৮০ পরীক্ষার্থী ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৩ জন মুক্তিযোদ্ধার কোটায় ও ৩৪৮ জন পশ্চাৎপদ জাতিগোষ্ঠী কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। 

ভর্তি আবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাধারণ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৪টি। এর মধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেন ৫৯ হাজার ৫৫৪ জন। তাদের মধ্যে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য মেধার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৫ হাজার ৭২ জন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের ৫ শতাংশ বা ২৬৯ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছিলেন ৬৮৬ জন। তাদের মধ্যে পাস করেন ১৯৩ জন। পাস নম্বর অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বর তুলেতে পারেননি ৪৯৩ জন। 

ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, পশ্চাৎপদ জাতিগোষ্ঠী (পার্বত্য জেলার উপজাতীয় এবং অউপজাতীয় প্রার্থী, অন্যান্য জেলার উপজাতীয় প্রার্থী) কোটায় দশমিক ৭২ শতাংশ বা ৩৯টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেন ১ হাজার ২০১ জন। পাস করেন ৩৪৮ জন। অর্থাৎ প্রতি ৯ জনে একজন ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।

এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ৬০ হাজার ৯৫ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২। ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের ৫ হাজার ৩৮০টি আসনে এবং ৬৭টি অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৬ হাজার ২৯৩টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।