রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সেনাবহিনীর দুটি গাড়ি সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেন ছাত্রীরা। পরে সেনাবাহিনীর গাড়ি ফিরে যায়।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টার পর কলেজের ২ নম্বর গেটের আজিমপুর-নীলক্ষেত সড়ক অবরোধের পর এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে নীলক্ষেত মোড় অবরোধের সময় সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি আটকে পড়ে। এ সময় সেনা সদস্যরা সড়ক ছেড়ে দেওয়ার আহবান জানালেও আন্দোলনরত ছাত্রীরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। পরে সেনাবাহিনীর গাড়ি দুটি ফিরে যায়।
এদিকে বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ করেন। সেখান থেকে একটি মিছিল ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সায়েন্সল্যাব মোড় হয়ে ইডেন কলেজের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়।
এসময় তারা আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম, সংগ্রাম, রাষ্ট্র তোমার সময় শেষ জারি করো অধ্যাদেশ, সিন্ডিকেটের সময় শেষ জারি করো অধ্যাদেশ, দালালি না রাজপথ? রাজপথ রাজপথ, টালবাহানা বন্ধ করো অধ্যাদেশ জারি করো ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত এক মাস ধরে শিক্ষকরা নানাভাবে হয়রানি ও টালবাহানা করে আসছেন। ভর্তি কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে তারা একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন করেছেন। নানা জটিলতা ও বাধা অতিক্রম করে ভর্তি সম্পন্ন করলেও শিক্ষকরা ক্লাস নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, এখন নতুন করে অজুহাত দেখানো হচ্ছে নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের দাবি, মূলত শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালযটির অধ্যাদেশ জারির বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দ্রুত অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে স্বাভাবিক ক্লাসে ফিরতে চান শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জিহাদ বলেন, গত দেড় বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় সংকট দূর করতে আমাদের নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। গত অক্টোবরে রাষ্ট্র একটি খসড়া অধ্যাদেশ জারি করেছে, যা আমাদের জন্য একটি সুন্দর ও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল তৈরি করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সাত কলেজের কিছু শিক্ষা ক্যাডার নিজেদের স্বার্থে এই মডেলের বিরোধিতা করছে। এ কারণে আমরা দেড় বছর ধরে রাস্তায় নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন করে আসছি।
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে তিনি আরও বলেন, আমরা ২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হয়েছি। ভর্তি নেওয়ার সময়ও আমাদেরকে নানা হয়রানি ও টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ক্লাস শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও শিক্ষকেরা বারবার ক্লাসের তারিখ বদলেছে, শেষ মুহূর্তে নোটিশ দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে, যেন আমাদের সঙ্গে নোটিশের খেলাই চলছে।
পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জিহাদ বলেন, এখন আবার শিক্ষক নামধারী কিছু ক্যাডার বলছেন, পরিচয় নিশ্চিত না হলে ক্লাস হবে না। আমরাও স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি পরিচয় ছাড়া আমরা আর ক্লাসে যাবো না। ১৪ ডিসেম্বর শীতকালীন অবকাশ শুরু হচ্ছে। এই ১৪ দিনের মধ্যেই আমাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। আজ থেকে যতদিন পর্যন্ত আমাদের পরিচয় নিশ্চিত না হবে আমাদের আন্দোলন চলবে, ইনশাআল্লাহ।
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল এ্যানি বলেন, আমাদের প্রথম ও চূড়ান্ত দাবি অধ্যাদেশ চাই। গত তিন মাস ধরে আমরা অবর্ণনীয় ভোগান্তির মধ্যে আছি। ক্লাস করতে পারছি না, পড়াশোনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর আগেও যখন ভর্তি নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তখনও আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম আমরা অধ্যাদেশ চাই। নিয়ম-নীতির একটি মডেল চাই, যাতে ক্লাস নির্বিঘ্নে চলতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু বারবার প্রশাসন আমাদের ঘুরিয়ে-পাল্টিয়ে শুধু ভোগান্তিতেই ফেলছে। তাই এখন আমাদের দাবি একটাই অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। আমরা আশা করি অধ্যাদেশ হলেই ক্লাস স্বাভাবিকভাবে শুরু হবে।