Image description
রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী

আগামী নির্বাচিত সরকার এসে পুরনো ও স্বৈরতন্ত্রের আমলাতন্ত্র পাবে। নির্বাচিত নতুন সরকার কিভাবে তা যথাযথভাবে মোকাবেলা করবে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি। এ জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাইনসেটের পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। তবে নির্বাচিত সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র বিশ্লেষক সাকিব আলী বলেছেন, আগামী নির্বাচিত সরকার এসে পুরনো ও স্বৈরতন্ত্রের আমলাতন্ত্র পাবে। নির্বাচিত নতুন সরকার কিভাবে তা যথাযথভাবে মোকাবেলা করবে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি। এ জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাইনসেটের পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। তবে নির্বাচিত সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সাকিব আলী।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বে যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এসে গেছে তার নতুন ধারা দেশে নিয়ে আসতে হবে। আনতে হবে। নতুন ফ্যাক্টরি বানাতে বা ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাবিলিটি লাগবে। তাহলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত একটা অবকাঠামোহীন তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে মানুষ কখনো বিনিয়োগ করবে না। দুর্নীতিকে বিলুপ্ত করতে পারলে তরুণসমাজ, শ্রমিক বিনিয়োগে নিয়োজিত হতে পারবে। বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না কারণ বিনিয়োগকারীরা এলে আমরা তাদের অনেক হয়রানিতে ফেলি।

 

সাকিব আলী মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশের উত্তরণে প্রস্তুতির অভাব রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, পরিস্থিতি এমন যে আমাদের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কেটে বেঁচে থাকতে হবে। উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ফলে স্যাক্রিফাইস করতে হবে উদ্যোক্তা ও শ্রমজীবীদেরকেও। তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। নির্বাচিত সরকার এসে এসব নিয়ে কি কি কাজ করবে সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

নয়া দিগন্ত : এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ সঠিক পথে আগাচ্ছে কী?

দৈনিক পত্রিকা সাবস্ক্রিপশন

 

সাকিব আলী : মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বছরে মাথাপিছু আয় ১৩ শ’ থেকে ১৩ হাজার ডলার হতে হয়। চীনের মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ডলার সেখানে ভারতের মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার। বাংলাদেশেরও তাই। আমাদের চারগুণ মাথাপিছু আয় চীনের। মধ্যম আয়ের দেশের সাথে উন্নত দেশগুলোর মাথাপিছু আয়ের এমন ফারাকের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছি। সমস্যা হবে রফতানির ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করবে কিছু দেশ। কম রেটে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাবে না সুদের খরচ বাড়বে। এগুলোর জন্য প্রস্তুতি দেখছি না। মধ্যম আয়ের একদম নিচের দেশের দেশগুলোর সাথে আমাদের অবস্থান। সর্বোচ্চ আয়ের সীমা ১৪ হাজার ডলার সেখানে আমাদের মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার। উপায় না থাকলেও আরো দুই বছর এলডিসি থেকে উত্তরণে সময় চাওয়া যায় কি না ভেবে দেখা দরকার। গ্রেস পিরিয়ড নিতে পারলে সুবিধা হবে। ম্যানুফ্যাকচারিং, সেবা খাত, দুর্নীতি, ব্যাংকিং খাতের কথা চিন্তা করলে কোনো খাতেই গত এক বছরে খুব একটা উন্নতি হয়নি। প্রস্তুতি নাই তাই পানির মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েই আমাদের সাঁতার শিখতে হবে।

নয়া দিগন্ত : চ্যালেঞ্জগুলো কী কী ?

সাকিব আলী : ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে যে পরিমাণ শুল্ক দিত ফ্রান্স কিন্তু একই ক্ষেত্রে তার চেয়ে কম শুল্ক দিত। বাংলাদেশের ছিল ১৫ শতাংশ, সেখানে ফ্রান্সের ছিল ৫ শতাংশ। কারণ ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক মিত্র। প্রতিযোগিতামূলক কিছু সুবিধা আমরা আগে যা পেতাম সেখানে কিছুটা ঝামেলা হবে।

নয়া দিগন্ত : প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো সক্ষমতা আমাদের হয়েছে কি?

সাকিব আলী : আমাদের যতটা হাইভ্যালু অ্যাডেড পণ্য রফতানিতে যাওয়ার কথা ছিল তা যেতে পারিনি। সক্ষমতায় যেতে পারিনি। ট্রাম্প আমাদের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও দরকষাকষির মাধ্যমে ২০ শতাংশে নিয়ে নিলাম। অ্যাডজাস্ট করতে রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতেই হবে। জুতা, খেলনা ছাড়াও কমমূল্যের পণ্য রফতানি আরো বৃদ্ধি করতে হবে। রফতানি বাজার বৃদ্ধি করতে হলে চীনের সাথে আমাদের সহযোগিতা আরো বাড়াতে হবে। চীনে যেসব পণ্য আর উৎপাদন হবে না সেটা বাংলাদেশে উৎপাদন করা যায় কি না, বাংলাদেশে উৎপাদন করে তা রফতানি করা যায়, আসিয়ানে ঠিক এই জিনিসই হচ্ছে। মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্সসহ অন্যান্য দেশে যেটা হচ্ছে চীনারাই তাদের ফ্যাক্টরিগুলো ওই দেশে নিয়ে আসছে। এরপর মালয়েশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হচ্ছে।

নয়া দিগন্ত : আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য তো বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান?

সাকিব আলী : বেকারত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রত্যেকটা সরকারই ব্যর্থ হয়েছে। যতক্ষণ না তরুণরা বিস্ফোরণের মতো রাস্তায় নেমে না যাবে তার আগ পর্যন্ত কর্মসংস্থান কি ধরনের চ্যালেঞ্জ তা বোঝা যাবে না। শেখ হাসিনার পতনে কোটার সাথে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক আছে। কর্মসংস্থানের অবস্থা ভালো থাকলে তরুণ সমাজের এত মাথাব্যথা থাকত না। কর্মসংস্থান তৈরিতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি আনতে হবে। নতুন ফ্যাক্টরি বানাতে বা ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাবিলিটি লাগবে। তাহলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত একটা অবকাঠামোহীন তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে মানুষ কখনো বিনিয়োগ করবে না। দুর্নীতিকে বিলুপ্ত করতে পারলে তরুণসমাজ, শ্রমিক বিনিয়োগে নিয়োজিত হতে পারবে। বিনিয়োগকারীদের হয়রানি বন্ধ করতে নির্বাচিত সরকারকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেখতে হবে। দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশ ভালো জাম্প করে বের হয়ে আসতে পারলে বিনিয়োগ বাড়বে।

নয়া দিগন্ত : সরকারে গেলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো প্রস্তুতি দেখছেন কি?

সাকিব আলী : না আমি দেখিনি। দীর্ঘদিন যে স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থা ছিল কারণ আমলাতন্ত্রের (সিভিল ও মিলিটারি দুটোই) উচ্চপর্যায়ে, তারা হাসিনা সরকারের সাথে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করত। অন্তর্বর্তী সরকার এসে অনেককে সরালেও আমলাতন্ত্রের টপব্রাশ এখনো পুরোপুরি শুদ্ধীকরণ হয়নি। চাকরি থেকে সবসময় অব্যাহতি দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। চাকরিতে রেখেও ওনাদের একটা শুদ্ধীকরণ বা রিএজুকেশন একটা চেষ্টা করা যেত। হয়নি বলেই যখন নতুন রাজনৈতিক দল নির্বাচিত সরকার গঠন করবে তারা যে আমলাতন্ত্র পাবে সেটা একচুয়ালি স্বৈরতন্ত্রের আমলাতন্ত্র।

নয়া দিগন্ত : পুরনো রাষ্ট্রকাঠামো বজায় রেখে বাংলাদেশকে একটা নতুন গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা সফল হওয়া সম্ভব হবে? রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাইন্ডসেটেরও তো ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন?

সাকিব আলী : বিশাল, বিশাল পরিবর্তন প্রয়োজন।

নয়া দিগন্ত : রাজনৈতিক দলগুলোতো দীর্ঘ ১৫ মাস সংস্কারের পেছনে সময় ব্যয় করেছে। কাক্সিক্ষত সংস্কার কতটা আসবে নির্বাচিত সরকারের হাত ধরে, জনমনে একটা সন্দেহ, পুরোপুরি আস্থাও নেই, বিষয়টাকে আপনার কাছে এখনো ঘোলাটে মনে হচ্ছে?

সাকিব আলী : হ্যাঁ, যেমন- ধরেন সংস্কার কি হয়েছে? উচ্চকক্ষ বা প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বেশি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না, এ ছাড়া খুব একটা সংস্কার দেখি নাই। শেখ হাসিনা বেআইনি সব আদেশ দিতেন আমলাতন্ত্রকে, তারা ওটা করতে বাধ্য ছিল। তা না করলে তাদের ওপর নানারকম হয়রানি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতো।

নয়া দিগন্ত : তো প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবেই অকার্যকর হয়ে গেল?

দৈনিক পত্রিকা সাবস্ক্রিপশন

 

সাকিব আলী : এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটা স্বায়ত্তশাসন, তাদের মধ্যে ক্ষমতা দেয়া যেটা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবে, বেআইনি আদেশ দিলে আমলারা অন্তত বলতে পারবেন লিখিত দেন। যাতে ভবিষ্যতে তাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যায়। এ ধরনের কোনো সংস্কার হয়নি, দুর্নীতি কিন্তু রয়ে গেছে। ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজে বলেছেন দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে। নতুন সরকার এসে আগের মতো লোক ও দুর্নীতি দেখতে পারে। তেমন কিছু পরিবর্তন হয়নি।

নয়া দিগন্ত : অন্তর্বর্তী সরকার তো দুদককে শক্তিশালী বা সম্প্রসারণ করছে?

সাকিব আলী : আসলে আমরা জানি না গত পাঁচ বছরের তুলনায় দুদক এখন কি নতুন কাজ করছে। তাদের কাছে কোনো পরিবর্তন বা দুদক কি নতুন কোনো পলিসি নিচ্ছে আমরা জানি না। কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি ঘুষ চায় তাহলে সে কোথায় যাবে, কাকে ফোন করবে, ফোন করলে কি সমাধান পাবে, এখনো এটা ঠিক হয় নাই। পৃথিবী পরিবর্তন হয়ে গেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এসেছে, নতুন প্রযুক্তি আসছে, ফিউশন এনার্জি আসছে, ড্রাইভারলেস গাড়িও চলে আসছে। কিছুদিন পর পাইলটবিহীন প্লেন চলে আসবে। এসবের তুলনায় রাজনীতিবিদদের কোনো পরিবর্তন দেখি না। ওনারা পরিবর্তন না হলে আগামী কয়েক বছর পর টিকে থাকতে পারবেন না।

নয়া দিগন্ত : এই পরিবর্তনে পলিটিক্যাল ইকোনমি, ডিপ্লোমেটিক ইকোনমির সাথে তো দরকষাকষিতে রাজনীতিবিদ, আমলা ছাড়াও সরকারি ও বেরসকারি পর্যায়ে সক্ষমতা প্রয়োজন? এটার তো প্রস্তুতি বা চর্চা দরকার হবে...

সাকিব আলী : প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রস্তুতি প্রয়োজন। আমাদের নতুন টিচার দরকার যারা দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করবে, কাজটা নিয়ে তাদের পজিটিভ একটা গর্ব থাকবে। হাসিনার শাসনামলে যা দেখেছি বঙ্গবন্ধু বললেই বা হাসিনা বললেই আর কিছু লাগে না। ওই জায়গায় তো আর থাকতে পারি না এখন। উচ্চমার্গের উচ্চমানের টিচার, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আমলা, রাজনীতিবিদও দরকার। উই নিড অল অব দেম।

নয়া দিগন্ত : বিশেষ করে তরুণরা তো ওই ধরনের একটা আভাস দিয়েছে।

সাকিব আলী : তারা দাবি করছে কিন্তু ক্ষমতায় যারা আছেন এখন তারা মনে হয় তরুণদের কথা শুনতে চাচ্ছেন না। এটার ফল কিন্তু ভালো হবে বলে মনে হয় না।

নয়া দিগন্ত : বাংলাদেশ কূটনীতির সফট পাওয়ারকে আরো কিভাবে সার্প করতে পারে? বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনীতিতে আরো কিভাবে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারি?

সাকিব আলী : টার্গেটেড করে আগাতে হবে। শাহজালাল এয়ারপোর্টে নামার সাথে সাথে হয়রানি শুরু হয়ে গেলে তো মুষ্কিল। এক সময় যাত্রীর লাগেজ আসতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগত। বিমানের এক এমডিকে বলেছিলেন আপনারা এটা কেন করেন, তো উনি বলেছিলেন এটা আমরা ছাড়ব না কারণ আমরা এখানে পয়সা কামাই। বিমানবন্দর ঠিক করলেন তো সেখান থেকে বের হয়ে রাস্তার মোড়ে এসে যদি দেখেন বাস, ট্রাক, পিকঅ্যাপ, সিএনজি, ট্রাফিক জ্যাম তাহলে আমরা অ্যাটরাক্টটেড হবো না। বিদেশীদের আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারব না। দুর্নীতি যদি কমত, এক ধরনের শৃঙ্খলা বোধ আসত, আপনি যদি আমেরিকা বা ব্রিটেনে বড় হন ঢাকায় এসে রাস্তায় কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন। এটা ইম্পসিবল। আমাদের শহরটাকে বায়ুদূষণ থেকে তো রক্ষা করতে হবে। এখানে এসে মানুষ বায়ুদূষণের শিকার যাতে না হয়। বাংলাদেশ নিয়ে যখনি কোনো রিপোর্ট হয় যে দুর্নীতিগ্রস্ত একটা দেশ, সাবেক এক ব্রিটিশ কূটনীতিক আমাকে বলেছিলেন, তুমি জানো বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় দেশ যে কখনো একটা ব্রঞ্জ মেডেলও অর্জন করেনি অলিম্পিকে। বাংলাদেশ যদি স্পোর্টসে ভালো করে তাহলেও দেশের ভাবমূর্তি উন্নতি হবে।

নয়া দিগন্ত : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে অপপ্রচার চলে এখানে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে, ইসলামফোবিয়ার ছাঁচে আমাদেরকে ফেলা হয়, এটাকে কিভাবে মোকাবেলা করতে পারি।

সাকিব আলী : এটা মোকাবেলায় কয়েকটি মিনিস্ট্রির একেবারে স্পেসিফিক কর্মকৌশল থাকতে হবে। কালচারাল প্রডাক্ট থাকা উচিত, যা বলে দেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে কি ধরনের সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশের ভেতরে কি হচ্ছে তা বাইরের মানুষ জানে না। তাদের সামনে তা প্রজেক্ট করা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় একটা ‘ওয়ার রুম’ ছিল, রিপাবলিকানরা যেকোনো মুহূর্তে একটা অভিযোগ দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা জবাব দেয়া হতো। অব্যাহতভাবে অপপ্রচার হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। কোথায় করা হচ্ছে দুই ঘণ্টার মধ্যে ওটার একটা রিবাট করা উচিত। সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ঘটনাস্থলের সাথে, স্থানীয় থানার সাথে কানেক্টেড থাকা উচিত। মিডিয়ার একটা বিশাল ভূমিকা আছে। বাংলাদেশে সব গোষ্ঠী মিলেমিশে আছি। আসল পিকচারটা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও ভারতের কিছু কিছু অংশ স্বীকার করতে চায় না। সরকার ও মিডিয়ার এ ব্যাপারে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করা উচিত।

নয়া দিগন্ত : চিকেন নেকের কাছে তিনটি গ্যারিসন করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে সীমান্তের সাড়ে সাত মাইলের ভেতরে করার কথা। ভারত করেছে সাড়ে তিন মাইলের মধ্যে.. ভারত কি বাংলাদেশের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে নাকি বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সাকিব আলী : যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। যদিও এখনো হয়নি কিন্তু ভবিষ্যতে শঙ্কা রয়েছে।

নয়া দিগন্ত : তাহলে আমাদের প্রস্তুতি কী ?

দৈনিক পত্রিকা সাবস্ক্রিপশন

 

সাকিব আলী : প্রস্তুতি হতে হবে কয়েকটা পর্যায়ে। গণতান্ত্রিক সময়ে মানে ১৯৯১ সালের পর থেকে খেয়াল করলে দেখবেন নতুন ঢাকার অর্ধেক এলাকা কিন্তু সামরিক অফিসারদের। কতগুলো ডিওএইসএস আছে বলেন। এটা কেন? যে ডেমোক্র্যাটিক সেটআপ তারা কিন্তু আমাদের আর্মি অফিসারদেরকে এক ধরনের ভয় পায়।

নয়া দিগন্ত : এমন তো বলা হয় কোস্টগার্ডের সদর দফতর ঢাকায় থাকবে কেন?

সাকিব আলী : কথা তো সত্যি। আর্মড ফোর্সেসগুলোর যতটুকু প্রফেশনালাইজেশন দরকার ছিল, ডিফেন্স ফোর্সের যতটুকু হার্ডেন্ট হওয়ার দরকার ছিল পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট ততটুকু তাদের হতে দেয়নি। এটার চেঞ্জ হওয়া দরকার। আমাদের অফিসাররা ভালো। সেনারা ভালো কোয়ালিটির। কিন্তু তাদেরকে যদি যুদ্ধের জন্য তৈরি না করা হয়, এটা তাদের দোষ না। এটা তাদেরকে করতে দেয়া হয় না। একচুয়ালি একটা ভয় থাকে, শেখ মুজিবুর রহমানের সময় বলা হয়েছিল ওনার সময় আনোয়ার সাদাত যখন ট্যাংক দিতে চেয়েছিল উনি নিতে চাননি, সেই ট্যাংকই ওনার বিরুদ্ধে নামে, আওয়ামী লীগের সময় এমন কথা ছিল রক্ষীবাহিনী থাকবে। সেনাবাহিনী হওয়ার দরকার নেই। অবশ্যই আমাদের সেনাবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। মিলিটারি ম্যানুফ্যাকচারিং দরকার, গোলাবারুদ তৈরি করা দরকার কারণ এখন আর এসব ইমপোর্ট করে চালানো সম্ভব নয়।

নয়া দিগন্ত : পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর সেনাক্যাম্প সরিয়ে আনা হয়েছে।

সাকিব আলী : দেখেন পাকিস্তানের তক্ষশিলায় মিলিটারি ম্যানুফ্যাকচারিং রয়েছে। বিশাল জনসংখ্যার এ দেশটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচারে তৃতীয় বিশ্বের বিবেচনা করা হয়। সেই তুলনায় সুইডেনে যান, লোকসংখ্যা অনেক কম, কিন্তু তার আর্মি যেমন হাইকোয়ালিটির, ড্রাইভারও হাইকোয়ালিটির। তার টিচার, ডাক্তার, প্রৌকশলী হাইকোয়ালিটির। খালি আর্মিকে শক্তিশালী করলে বাকি পেশাজীবী যদি লো কোয়ালিটির হয়, প্রশাসনের লোকবল যদি লো ক্যালিভারের হয় তাহলে ভালো দেশ গড়তে পারব না।

নয়া দিগন্ত : সিঙ্ক্রোনাইজিংয়ের একটা ব্যাপার আছে।

সাকিব আলী : একই সাথে প্রতিটা লেভেলকে ওপরে উঠে আসতে হবে। ভূকৌশলগতভাবে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। প্রস্তুতি দরকার। ১৯৪৭ সালে যে কলোনিয়াল ব্রিটিশরা গিয়েছে, সেখান থেকে বের হয়ে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র কিভাবে গড়ে তুলতে পারে সেই সময়টা এসেছে।

নয়া দিগন্ত : ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসেবে হাসিনার পতন কি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শাসকদের কোনো বার্তা দেবে, মিয়ানমারে যেমন- দীর্ঘদিনের সেনাশাসন, ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন, পাকিস্তান, নেপাল বা শ্রীলঙ্কায় টেকসই সরকারের অভাব ইত্যাদি...

সাকিব আলী : যে রাষ্ট্রনায়ক শক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতা নিয়েছে, সে তার স্বরূপ চেঞ্জ করতে পারবে না। সামরিক জান্তা কখনই গণতন্ত্রের যে টেকনিক তা জানে না। হাসিনার পতনের পর নেপালে গণ-অভ্যুত্থান হলো, সেটা সবাই দেখেছে, এভরিবডি সিং ইট বাট পয়েন্ট ইজ হাসিনার পতনের পর আরেক সরকার কি এভাবে চেঞ্জ হতে পারবে। হাসিনার মতো সরকার প্রধানদের সময় আসলে কমে আসছে, এটা আর বেশি দিন চলবে না।

নয়া দিগন্ত : সার্ককে সক্রিয় বা দক্ষিণ এশিয়াকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখা হতো, সেটা কি এখনো সম্ভব?

সাকিব আলী : তাহলে একটা বিশাল ঘটনা হতে হবে। হাজার বছরে তা কতটুকু হয়েছে জানি না। সার্ককে শক্তিশালী করতে হলে দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দু ও মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে একটা গ্র্যান্ড বারগেইন হতে হবে। এর আগে আমাদের এলাকায় শান্তি আসবে না ঠিকমতো।