Image description

বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজ নিয়ে “ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি” প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা-অস্থিরতা যেন কাটছেই না। দীর্ঘ আন্দোলনের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় পেলেও ক্লাস শুরু না হওয়ায় নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ক্লাস শুরুর দাবিতে তাই ফের রাজপথে নামতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে কর্মব্যস্ত নগরজীবনে সাধারণ মানুষের  চলাচলে ফের ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে।

রবিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির (প্রস্তাবিত) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন । একইদিন সায়েন্সল্যাব মোড়েও অবরোধ করেন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী।

জানা গেছে, ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির’ অধীনে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির কার্যক্রম ২৩ নভেম্বর শেষ করে ২৫ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর কথা ছিল। তবে ২২ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তির তারিখ ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়, এবং ৩০ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর কথা জানানো হয়। পুনর্নির্ধারিত তারিখেও ক্লাস শুরু না হওয়ায় এদিনই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

জানতে চাইলে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। আশা করি, খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।”তিনি শিক্ষার্থীদের সহনশীল থাকার জন্য আহ্বান জানান।

সংকটে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি

 

রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজ- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনে চলতি বছর ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠন করে অন্তবর্তী সরকার। নানা সংকটের মধ্যেও প্রস্তাবিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষবর্ষের ভর্তি সম্পন্ন করা হয়। তবে ক্লাস শুরু করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাদেশ নিয়ে বিতর্ক

সাত কলেজ নিয়ে সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় করার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইইনভার্সিটি’র খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশ করা হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। অধ্যদেশধের খসড়া প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। সাত কলেজে অনার্সে যত বিষয় পড়ানো হতো তার বেশিরভাগ প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীর ও অভিভাবকরা।  অভিযোগ ওঠে, নারীশিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়ায়। এ নিয়ে প্রতিবাদ চলে বেশ কিছুদিন। খসড়া অধ্যাদেশের সংশোধন দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

খসড়া প্রকাশের পর, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ করার দাবিসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই কলেজের অবকাঠামোসহ এক ইঞ্চি জমিও অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের নামে লিখে দেওয়া যাবে না। অক্সফোর্ড, ফেডারেল বা অন্য কোনও মডেল অনুসরণে একটি নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে ঢাকা কলেজসহ প্রসিদ্ধ সাতটি সরকারি কলেজ স্বমহিমায় স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।”

ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও কলেজের ঐতিহ্য রক্ষার দাবি জানান। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি গার্লস কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নারীশিক্ষার প্রাধান্য বজায় রাখাসহ পাঁচ দফা দাবি করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যমান খসড়া অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হলে স্বতন্ত্র ও ঐতিহ্য হারাবে সাতটি কলেজ। এছাড়া, তাদের প্রত্যাশাও ভিন্ন বলে জানান কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তিও রয়েছে। একটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতের চেয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটি নিয়ে বেশি চিন্তিত বলে জানা গেছে।

অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত হয়নি

প্রস্তাবিত সাত কলেজের অধ্যাদেশ এখনও জারি হয়নি। খসড়া চূড়ান্ত হলে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিস) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আইনটি সংশোধন করার কাজ এখনও চলমান। আরও কিছু কাজ করতে হবে। চলতি বছরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।”

‘শাটডাউন’ কর্মসূচির হুঁশিয়ারি শিক্ষকদের

এদিকে, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘শাটডাউন’সহ কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটে “সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদ” আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।

শিক্ষকেরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হলেও এসব কলেজে কর্মরত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকেরা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন।

তাদের দাবি, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর সর্বস্তরে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।