ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মারধর, হেনস্তা, ব্ল্যাকমেইল করে হুমকি ও ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এক ছা্ত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই ছাত্র বিইউপির মার্কেটিং ব্যাচ–৮ শিক্ষার্থী ইসতিহাক আহমেদ। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) পল্লবী এ ঘটনায় ডিএমপির পল্লবী ও শাহবাগ থানায় দুটি পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগে উল্লেখ করেন, ইসতিহাক আহমেদ (২৩) নামে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে তাকে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাঘাটে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করে আসছে। প্রথমে বিরক্তির মধ্য দিয়েই পরিচয় হলেও পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ওই সম্পর্কের পর থেকেই ইসতিহাক তাকে নানা ধরনের কু-প্রস্তাব দিতে থাকে এবং শারীরিক সম্পর্কের চাপ সৃষ্টি করে। অভিযোগে বলা হয়, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সে ওই ছাত্রীর কাছ থেকে তার ব্যক্তিগত ছবি নেয় এবং একান্তে সময় কাটানোর চেষ্টা করে।
অভিযোগ অনুযায়ী, এসব মানসিক নির্যাতনের কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ১১ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে ইসতিহাক হাসপাতালে তাকে দেখতে এসে তার মোবাইল ফোন নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কৌশলে কিছু ব্যক্তিগত ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করে বলে অভিযোগে বলা হয়। পরে সমস্ত চ্যাট মুছে ফেলে এবং সম্পর্ক রাখবে না বলে জানিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ১৭ নভেম্বর রাত ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে মিমাংসার কথা বলে ইসতিহাক তাকে পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ডেকে নেয়। সেখানে কথাবার্তার একপর্যায়ে ইসতিহাক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রতিবাদ করলে তার দুই গালে, মাথায়, পিঠে ও বাহুতে একাধিক কিল-ঘুষি মেরে বিভিন্ন স্থানে নীলাফোলা জখম করে। অভিযোগে আরও বলা হয়, ইসতিহাক তার পরিধেয় কাপড় টানা-হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ইসতিহাক দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৮ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
ওই ছাত্রী অভিযোগে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইসতিহাক তার ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে। এ কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ঘটনাটি নিয়ে আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ করতে দেরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী ছাত্রী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সে দীর্ঘদিন প্রেমের অভিনয় করেছে। ওইদিন দেখা করতে গেলে আমাকে পাবলিক প্লেসে মারধর করে। ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়।’
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ইসতিহাকের পিতা কামরুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে ফাঁসানো হচ্ছে। ওই মেয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন ছবি শেয়ার করছে।’ তিনি দাবি করেন, ওই দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন যে মেয়েটিই আগে তার ছেলেকে থাপ্পড় দেয় এবং তার জামা ধরে টানাহেঁচড়া করে। পরে ছেলেকে বাঁচাতে ইসতিহাক পাল্টা থাপ্পড় দিলে মেয়েটির চশমা পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মাসুদুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গতকাল (শুক্রবার) থানায় ওই ছাত্রী একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করছি আমরা। তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।