Image description

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানিয়েছে হল ছাত্রসংসদের প্রতিনিধিরা। এসময় প্রভোস্টের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক রাজনৈতিক গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ততা, আর্থিক দুর্নীতি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী আচরণের অভিযোগে এ দাবি জানানো হয়।

আজ রবিবার (১৬ নভেম্বর) প্রভোস্টের অব্যাহতির দাবিতে অফিস কার্যালয়ে তালা দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগও জানানো হয়।

আমানত হল সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) স্বাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিগত ১০ মাসে প্রভোস্ট হিসেবে অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান কোনো সমস্যার সমাধান করেননি। তিনি এই আবাসিক হলে স্বোচ্ছাচারীতা, অনিয়ম, দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছেন না।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, প্রভোস্ট অত্র দায়িত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা প্রশাসনিক সুবিধা গ্রহণ করলেও হলে শিক্ষার্থীদের দুর্দশা লাঘবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তিনি চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকা কিংবা অন্য কোনো জেলায় গিয়ে দিনের পর দিন থাকলেও হল প্রভোস্টের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের জন্য কাউকে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব প্রদান করে যান না। এ কারণে হলের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। সম্প্রতি তিনি টানা চার দিন চট্টগ্রামের বাইরে থাকলেও কোনো চিঠি দিয়ে হল অফিসে অবহিত করে যাননি। গত ১০ মাস ধরে তিনি অনুপস্থিত থাকাকালীন কোনো চিঠি দিয়ে যাননি বিধায় এটি প্রশাসনিক অনিয়ম, অসদাচরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভিস রুল অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় উপস্থাপন করলেই প্রভোস্ট নিজেকে বগিভিত্তিক সংগঠন 'অলওয়েজ' গ্রুপের সদস্য ছিলেন মর্মে পরিচয় দিয়ে বর্তমান ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি ও হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হুমকিসুলভ অসৌজন্য বক্তব্য প্রদান ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে থাকেন। হলের শিক্ষার্থীদের সামনে প্রকাশ্যে তিনি নিজের ফ্যাসিবাদী পরিচয় দিয়ে শাহ আমানত হলে অনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। যা চব্বিশের ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ অতীতে এই বগিভিত্তিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের সিট দখল করে রাখতো, বগিতে শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালাতো। হলের প্রভোস্টের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অমান্য করে হলের স্টোরের মালামাল বিক্রি করে টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। যে মালামালগুলো তালিকা করে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় স্টোর কর্তৃক গঠিত কমিটির মাধ্যমে নিলামের তুলে বিক্রয় করার নিয়ম থাকলেও প্রভোস্ট নিজের পছন্দের দুইজন স্টাফের মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছেন। এই টাকা নয়ছয় করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তদন্ত করতে হবে। তদন্তের মাধ্যমে প্রভোস্ট এবং জড়িত স্টাফদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, হলের বেশিরভাগ কক্ষের ভাঙা দরজা ও জানালা মেরামত, হলে অবস্থিত দ্বিতীয় ডাইনিং চালু, সাইকেল স্ট্যান্ড স্থাপন, পরিষ্কার পানি সরবরাহের পাম্প স্থাপনসহ হলের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কোনো কাজই হল প্রভোস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত ১০ মাসে করেননি। হলটি জরাজীর্ণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে প্রভোস্টকে বারবার অনুরোধ করলেও তিনি কখনোই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

 

হল সংসদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রভোস্টের এমন কর্মকাণ্ডে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে এবং আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে তিনি জড়িত হওয়ায় অনতিবিলম্বে শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করে দায়িত্বশীল, সৎ ও দক্ষ শিক্ষককে পদায়নের দাবি জানাচ্ছি। নতুবা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে হল সংসদের জিএস আবিদুর রহমান বলেন, আমরা প্রভোস্টের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা তাঁর অব্যাহতি চায়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। এটা আমাদের আসলে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাজ করতে হয়। ক্লাস, পরীক্ষাসহ আরও অন্যান্য কাজ থাকে। আমি বাহিরে আছি, আগামীকাল হলের শিক্ষার্থীদের সাথে এবিষয়ে বসে কথা বলবো।