২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের সূচনালগ্ন থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা/নির্যাতনের কারণে যথাসময়ে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করতে পারেননি— এমন ২৯ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের পুনঃভর্তির সুযোগ দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। গত ২৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তালিকায় ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের তিনজন, ২০০৬-০৮ শিক্ষাবর্ষের একজন, ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের দুইজন, ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ৪ জন, ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ৪ জন, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ৩ জন, ২০১১-১২ এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের একজন করে মোট দুইজন, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ৩ জন করে মোট ৯ জন এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের একজনসহ মোট ২৯ জনের নাম আছে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে প্রতি বছর টাইম-বার্ড এর জন্য ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা প্রদানের শর্তে বিশেষ বিবেচনায় স্ব স্ব বিভাগ/ইনস্টিটিউটে পুনঃভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়।
তালিকার সব শিক্ষার্থী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পুনরায় ভর্তি হতে চান। ২৯ জনের মধ্যে ১৪ জন প্রথম বর্ষ, ১২ জন দ্বিতীয় বর্ষ এবং ৩ জন তৃতীয় বর্ষ থেকে তাদের শিক্ষা জীবন পুনরায় শুরু করতে ইচ্ছুক।
তালিকায় রয়েছেন যারা
তালিকার ২৯ তাদের মধ্যে দুই জন কলা অনুষদ, ৯ জন বিজ্ঞান অনুষদ, ৪ জন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, দুই জন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ৩ জন জীববিজ্ঞান অনুষদ, ৭ জন ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদ, একজন চারুকলা অনুষদ এবং একজন পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র।
তালিকায় থাকা পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৮-৯ শিক্ষাবর্ষের মো: শাকির আহমেদ, গণিত বিভাগের ২০০৮-৯ শিক্ষাবর্ষের সজীব মজুমদার, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের মো: ওমর সানি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের সালেহ মো. আদনান, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের এসএম দিদারুল ইসলাম, পুষ্টি ও খাদ্য বিদ্যানি ইনস্টিটিউটের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের মো. এমরান আলী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির নেতা।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের একেএনএম রাশেদ আল আমীন বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য।
রসায়ন বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শেখ আল ফয়সাল, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের মো. কামাল পাশা, ইতিহাস বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের আ স ম মাশুক বিল্লাহ, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের মো. ঝলক মিয়া, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের এসএম ইসামন্তাজ কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতা ছিলেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মো. ফাহিম ফয়সাল, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের মো. রুবেল পারভেজ, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ইমাম আল নাসের, একই বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. সোহাইল সাবিত সৌমিক এবং আবু হায়াত মো. জুলফিকার বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের নেতা।
বাকি ১২ জন শিক্ষার্থীর দলীয় পরিচয় তাৎক্ষণিক বের করা সম্ভব না হলেও কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রদল নেতা নিশ্চিত করেছেন যে তারা বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান নেতা৷
তারা হলেন, বাংলা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. খলিলুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৬-৭ শিক্ষাবর্ষের মো. পারভেজ, গণিত বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল মোতালেব হোসেন খোকন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. রোমান মিয়া, ফিনান্স বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের আসমা আফিয়া সেতু, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. তানভীর হাসান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের এডিএম মারুফ বিল্লাহ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের তানভীর আহমেদ, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মো. হাবিবুর রহমান, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শেখ সাদ্দাম হোসাইন, ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তানঈম আকন্দ এবং মো. ওমর ফারুক।
তাদের আবাসন নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবনা
এসব শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তারা আবাসিক হলে থাকতে পারবে কিনা, জানতে চাইলে কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী নিয়মিত কোর্সে ভর্তি থাকলে সে হলে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের যদি অন্যান্য যোগ্যতা থাকে তবে হলে উঠবে। সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা কারো রাজনৈতিক পরিচয় জানি না। তারা তাদের বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আমাদের কাছে আবেদন করেছে। তারা জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন সময় নির্যাতনের কারণে ক্যাম্পাসে থাকতে পারেনি। তাই এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এখন তো সব জায়গায় যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছে তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।