
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের (চাকসু) নির্বাচিত সাবেক নেতারা শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছেন।
বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। যারা জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তারা চান এমন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে চাকসুতে এমন এক নেতৃত্ব আসুক যারা শিক্ষার্থীদের সুখে-দুখে পাশে থাকবে। সব দলমত পথের শিক্ষার্থীদের জন্য যারা কাজ করবে তাদেরই শিক্ষার্থীরে বেছে নেবেন বলে মনে করেন তারা।
১৯৮৯ সালের ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের মজহারুল হক শাহ চৌধুরী। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রশিবিরের জসিম উদ্দিন সরকার।
মজহারুল হক পরবর্তীতে চতুর্থ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যও ছিলেন জাসদ থেকে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় জাতি অনেক যোগ্য নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চাকসু হচ্ছে চবির সব ছাত্রছাত্রীর সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান। যারাই নির্বাচিত হয়ে আসুক তারা হয়তো কোনো না কোনো ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। কিন্তু তারা সব মতের শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবি দাওয়া নিয়ে কাজ করবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।
চাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ ১২টি সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ব্যানারে নির্বাচন করে। সেই নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল পরাজিত হয়। চাকসুতে পুরো প্যানেলে নির্বাচিত হয় ভিপি নাজিম উদ্দিন ও জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন প্যানেল।
প্রায় ৩৬ বছর পর হলেও চাকসু নির্বাচন হচ্ছে এটাকে স্বাগত জানান ৯০-এর চাকসু নির্বাচনে জয়ী জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমার প্রত্যাশা হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই নির্বাচনে যারাই জিতুক যাতে চবিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে। দখলতন্ত্র, সন্ত্রাস, মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন যাতে না থাকে। চাকসু যেন ছাত্রদের অধিকার নিয়েই সোচ্চার থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত পরিবেশ, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, বিতর্ক গবেষণায় অতিমাত্রায় আগামী নেতৃত্ব সক্রিয় থাকবে বলে আশা করি। একইসঙ্গে প্রতিবছরই যাতে নির্বাচন হয় সেই প্রত্যাশা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সরকারগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন দিতে চায় না ক্যাম্পাসে তাদের দখলদারিত্ব হারানোর ভয়ে। কিন্তু এটা ঠিক না।
একই প্যানেল ছাত্রদল নেতা সালাহউদ্দিন মো. রেজা সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের ব্যুরো প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবেরও নির্বাচিত সভাপতি তিনি।
সাবেক এই চাকসু নেতা যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময়ে রক্তের হোলিখেলা চলত। জাতীয় ছাত্রসমাজ নেতা হামিদুর রহমানের হাত কেটে উল্লাস করাসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তখন সাধারণ ছাত্রসমাজ তাদের প্যানেলকে নির্বাচিত করেছিল। চাকসুর পুরো প্যানেলে এবং হল সংসদের অধিকাংশ পদে তাদের প্যানেলের প্রার্থীরা জয় লাভ করেছিলেন। বুধবারের নির্বাচনে তারা চান এমন নেতৃত্ব উঠে আসুক যারা ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে পারবেন। দল-মত-পথ নির্বিশেষ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় থাকবেন।
১৯৭০ সালে চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন এসএম ফজলুল হক। তিনি বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। কেমন চাকসু নির্বাচন চান এবং এ নির্বাচন নিয়ে তার প্রত্যাশা কী- জানতে চাইলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, যেহেতু তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য তাই কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলা আপাতত সমীচীন হবে না।