রাজধানীর এনসিটিবি ভবনের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাম ছাত্রসংগঠনের একদল নেতাকর্মী। মিছিলটি কার্জন হল এলাকায় পৌঁছালে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন তারা। এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বাম ছাত্রসংগঠনের নেতারা দেখা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের সঙ্গে। অভিযোগ রয়েছে, এসময় ঢাবি প্রক্টরের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তারা।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিষয়ে জবাবদিহিতা চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতারা। পরবর্তীতে প্রক্টর অফিসের ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। এসময় প্রক্টর ও উপস্থিত অন্য সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়ান তারা। এক পর্যায়ে প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষকদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় তাদের। ইতোমধ্যে এই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।
এসময় বাম ছাত্রসংগঠনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মুখপাত্র সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র মৈত্রীর ইসরাত জাহান ইমু, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রাগীব নাইম, ছাত্র ফ্রন্ট নেতা মোজাম্মেল হকসহ আরও অনেকে।
একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ, সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম, নুরে আলম সিদ্দিকী ও শেহরিন আমিনকে অবরুদ্ধ করে উচ্চস্বরে চেচামেচি করছেন বামপন্থী নেতাকর্মীরা। এসময় তারা প্রক্টরকে, হামলাকারী পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা ও হামলার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার জন্য জোর করতে থাকেন।
প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ তাদের কথা শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তার ওপর চড়াও হন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এসময় সালমান সিদ্দিকী ও রাগীব নাইমকে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাইম বলেন, 'এটা সত্য আমরা কিছু উচ্চবাচ্য করেছি, উচ্চস্বরে কথা বলেছি। কিন্তু সেটা ছিল ক্যাম্পাসে পুলিশি নির্যাতনের কারণে আমাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। আমরা তার সাথে শত্রুতা পোষণ করি এমনটা নয়।'
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মুখপাত্র ও ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিক বলেন, 'প্রক্টর স্যারের সাথে কোন অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়নি। প্রক্টর স্যার নিজে বা সহকারী প্রক্টর স্যারদের মধ্যে কেউ এ দাবি করেননি। আন্দোলনকারী ছাত্রদের দাবির মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এনসিটিবির সামনে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র সন্ত্রাসী হামলা ও পুলিশের বর্বর হামলার নিন্দা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং বিচার দাবি করেছি।'
ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, 'প্রক্টর অফিসে কোনো ধরনের অসদাচরণ করা হয়নি। আমরা ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার জবাব চাইতে প্রক্টর অফিসে মিছিল নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা দবি জানিয়েছি, হামলার সাথে জড়িত 'স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির' শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ঢাবি কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হামলার সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা ও নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ডিএমপির পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিতে হবে। হামলায় আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'প্রক্টর অফিসে 'কারা গিয়েছিল', 'কেমন আচরণ' করেছে এসব নিয়ে অনেকে ফেসবুকে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু ১৫ জুলাইয়ের রক্তের দাগ না শুকাতেই আবারও কেন ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকল, কেন টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড মারা হলো, কেন লাঠিচার্জ করা হলো, ১৫ জুলাই যার বাম হাত ভাঙ্গল তার ডান হাত কেন গতকাল আবারও ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলায় ভাঙ্গল এই প্রশ্নগুলো তাদের অধিকাংশই করছেন না। তাদের এই প্রশ্নগুলো খুবই উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আওয়ামী প্রশাসন ছাত্রস্বার্থ বিরোধী অবস্থান নিলেও ছাত্রলীগ তাদের পক্ষে অবস্থান নিতো, নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠত। আজকের দিনেও কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন ছাত্রদের নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বিগ্ন না হয়ে প্রশাসনকে তুষ্ট করতে ব্যস্ত হবে না—এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, 'যেহেতু তাদের ওপর হামলা হয়েছে সেহেতু তারা একটু রাগারাগি করতেই পারে। তারা না হয় একটু রাগারাগি বেশি করল। তবে আমরা একটু চুপ থাকলেই বিষয়টা ভিন্ন খাতে যাবে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, 'শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার যে ঘটনাটা ঘটেছে তার জন্য আমরা খুবই ব্যথিত। এর প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে এসে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছে। তারা বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিবার থেকে এসেছে। এ কারণে তাদের আবেগের প্রকাশও ছিল আলাদা। তবে পরবর্তীতে তারা আমাদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। আমরা বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি।