
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচনে আইন বিভাগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভিপি পদে একক প্রার্থী নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত সভায় বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই সভা পণ্ড হয়। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষার্থীদের এক সভায় এ ঘটনা ঘটে।
গকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, চার বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্সের ২য় থেকে ৭ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও ০৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্সের ২য় থেকে ৯ম সেমিস্টারের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে কেবল প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
তবে গঠনতন্ত্রের কোথাও কোনো বিভাগ থেকে একক প্রার্থী ঘোষণা কিংবা প্রার্থীতায় বাধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। ফলে আইন বিভাগের এ সভায় নিয়ম বহির্ভূত বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
সভায় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গকসুতে বিভিন্ন পদে আইন বিভাগ থেকে একাধিক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সম্ভাব্য ভিপি প্রার্থী খোদার নূর রনি ও রাকিব মুসল্লি সব সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সভা ডাকেন। এতে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), দপ্তর এবং প্রচার-প্রকাশনা বিষয়ক পদে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা নিজেদের নাম ঘোষণা করেন। এরমধ্যে ভিপি পদে তিনজন নিজের নাম ঘোষণা করেন। পরে ভিপি পদে আইন বিভাগ থেকে একক প্রার্থী ঘোষণায় ভোটের বিষয়ে আলোচনা তোলেন কয়েকজন। এরমধ্যেই চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা আলোচনার জন্য আরও দুই দিন সময় চান। এরই জেরে খোদার নূর রনি ও রাকিব মুসল্লির অনুসারীরা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সভা ত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভায় উপস্থিত এক শিক্ষার্থী বলেন, দুপুরের দিকে ক্লাস বন্ধ করে ওই সভায় ডেকে নেওয়া হয়। শুনি একক প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। ঘটনার একপর্যায়ে ৩০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জুবায়েদের সাথে ২৮ ব্যাচের রাকিবুল জয়ের বাকবিতণ্ডা হয়। এরপরই হাতাহাতি হয়।
এ বিষয়ে ভিপি প্রার্থী খোদার নূর রনি বলেন, সভাটি ছিল বিভাগীয়, এখানে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। হাতাহাতির মতো কিছু হয়নি, বরং সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে কিছু বেয়াদবি হয়েছে বলেই মনে করি। বিষয়টি বিভাগের সিনিয়ররাই সেখানেই সমাধান করে দিয়েছেন। তাই এটিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, আমি একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমি বলেছিলাম, শিক্ষার্থীদের মতামত জানা জরুরি। তারা চাইলে একক প্রার্থী নেবে, চাইলে একাধিক প্রার্থীকে সমর্থন করবে। তবে ভোটের প্রক্রিয়ায় যখন চাপ বা উদ্যোগের কথা এসেছে, আমি বলেছি সেটি করা ঠিক নয়। যারা ভালো কাজ করবে, তারাই প্রার্থী হিসেবে নিজেদের সফলতা প্রমাণ করবে।
একই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিপি প্রার্থী রাকিব মুসল্লি জানান, বিভাগের সকল ব্যাচের সাথে একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয় যদিও এর আগে আরও ২ বার এমন মিটিং করা হয়েছিল। বিভাগে একাধিক প্রার্থী থাকায় সবার মতামতের ভিত্তিতে কয়েকজনকে চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা হয়। এই প্রক্রিয়া গঠনতন্ত্রের বাইরে হলেও বিভাগের স্বার্থে রাজি হই, তবে আমার প্রথম কথা ছিল নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিদ্ধান্ত হয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাকে চাইবে তাকেই ভিপি প্রার্থী করা হবে। মিটিং এ এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আমাকে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। কিন্তু স্নাতকোত্তর ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ খোদানূর রনি সবার সামনে বলে দিলেন ভিপি প্রার্থীর নাম ২ দিন পরে নির্ধারণ করা হবে। তখন আমার মনে হচ্ছিল এটি লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতির ক্ষমতা প্রদর্শন এবং একটি বিশেষ অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে তারা। এর মধ্যেই কথা-কাটাকাটির রাকিবুল জয় এবং একজন সিনিয়র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তবে সবার হস্তক্ষেপের ফলে কোনো হাতাহাতি এড়ানো হয়।
আইন বিভাগ ছাড়াও ইংরেজি, ফার্মেসি, রসায়ন, সিএসই সহ বিভিন্ন বিভাগ এবং অনুষদেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন সভা হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
আর গকসু নিয়ে এই ধরনের সভা মারাত্মকভাবে নিয়মের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক রফিকুল আলম। তিনি বলেন, অবশ্যই মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন। কেউই করতে পারে না। এক নম্বর হচ্ছে, কেউ এখনও কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম করতে পারবে না। আমরা কেবল খসড়া ভোটার তালিকা দিয়েছি। ২৫ আগস্টের মধ্যে তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, এই ধরনের সভা বন্ধে আমরা নোটিশ দিব আর নির্বাচন আচরণবিধি দুই এক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে। যারা প্রার্থী হবেন, তাদেরও আচরণবিধি মানতে হবে, ভোটারদেরও আচরণবিধি মানতে হবে। আচরণবিধি ঘোষণার পর সব নিয়মে চলে আসবে। এই ধরনের কোনো মিটিং চলবে না। কোনো ভবন, খুঁটি কোথাও পোস্টার টাঙানো যাবে না।
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও এমন সভা বন্ধে উদ্যোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পরিহারে দ্রুতই নিকটস্থ দুই থানার সাথে যোগাযোগ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়া হবে।