Image description

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর ড. রুবেল আনসারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রশ্ন, অশালীন প্রস্তাব, একান্ত সাক্ষাতের চাপ, যৌন সম্পর্কের ইঙ্গিতের অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

এদিকে ওই শিক্ষক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তবে, ওই ছাত্রী অসুস্থ থাকায় তার বাবা আমাকে একবার ফোন কল দিয়েছিলেন। সব শিক্ষার্থীই আমার কাছে সমান।

এ বিষয়ে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতি ও মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, আমাদের কাছে এমন একটি অভিযোগ জমা দিয়েছে ভুক্তভোগী। ইতোমধ্যে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার প্রধান হিসেবে আমাকে রাখা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, অ্যাক্সিডেন্ট করায় সঠিক সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারিনি, সেজন্য স্যারের সঙ্গে কথা বলতে যাই। তিনি আমার সঙ্গে ৪০/৪৫ মিনিট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। পরে এক পর্যায়ে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, তোমার হাত যদি পরীক্ষার আগে ঠিক না হয় তাহলে আমি ‘ফু’ দিয়ে ঠিক করে দেব। তার এসব কথা আমার কাছে একটু অস্বস্তিকর লাগলেও আমি বলা শেষ হলে সালাম দিয়ে চলে আসি।

ওই ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, স্যারের চেম্বার থেকে কথা বলে আসার পর থেকে তিনি আমাকে ঘনঘন মেসেজ দেন। ‘আমি ফ্রি আছি কিনা, তার সঙ্গে ঘুরতে যাবো কিনা’ টাইপের মেসেজ দেন। আমি প্রতিবার ‘ব্যস্ত আছি বলে’ তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমাদের বাড়ি হয়ে স্যারের বাসায় যেতে হয় সেজন্য আব্বু তার পরিবারসহ আমাদের বাসায় ঘুরে যাওয়ার দাওয়াত দেন। তিনি মেসেজে আব্বু দাওয়াত দিয়েছে বলায় আমিও সম্মান রক্ষার্থে আমাদের বাসায় ঘুরে যেতে বলি। স্যার বলেন, আমি পরিবারসহ আসবো, বিনিময়ে আমি যা চাইবো তোমাকে তাই দিতে হবে। আমি তার কথার অর্থ ঠিকমতো বুঝতে পারিনি, তবে আমার সাধ্যের মধ্যে কিছু চাইলে দেব বলে রিপ্লাই দেই। স্যার ঈদের ছুটি কাটিয়ে খুলনায় ফেরার সময় স্ত্রী-কন্যাসহ আমাদের বাসায় যান।

তিনি এ ঘটনার পর থেকে তাকে (স্যার) এড়িয়ে চলার ৫/৬ দিন পরের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, হঠাৎ তিনি একদিন কল দেন এবং তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। আমি নিরালা মোড়ে গেলে তিনি কিছু কথা বলার অনুরোধ করে গাড়িতে উঠতে বলেন। প্রথমে আমি গাড়িতে উঠতে চাইনি, কিন্তু তিনি বারবার অনুরোধ করার পর আমি গাড়ির সামনের সিটে উঠি। তিনি পুরোনো প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আমি তোমাদের বাসায় গিয়ে আমার কথা রেখেছি, এবার তোমাকে আমার কথা রাখতে হবে। আমি তখনও তার কথার উদ্দেশ্য বুঝছিলাম না।

ওই ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করি, আপনি আমার থেকে কী চান? আমি বুঝছি না। তিনি খুবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেন, ‘আমি তোমাকে চাই।’ আমি স্যারের কথা শুনে পুরোপুরি অবাক হয়ে যাই। তার এসব কথা শুনে এবার ভয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। তিনি আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলেন— ‘আমি বুঝতে পারছি তুমি হয়ত ভয় পাচ্ছো’।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমি কথাগুলি শুনে আপত্তি করি এবং রেগে গাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি। তিনি তখন ড্রাইভ করা অবস্থায় আমার হাত চেপে ধরেন এবং বলেন— ‘জেদ করো না; আমি যা চাই তাই আমার করে নিই। আজ না হোক কাল তোমার সারা শরীরে আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই। আমি তোমার রেজাল্টও বাড়িয়ে দেব, তোমার রেজাল্ট ৩.৫০ হয়ে যাবে’। এসব শোনার পরে আমি দ্রুত তার গাড়ি থেকে নেমে কোনো রকম আত্মরক্ষা করি।

অভিযোগ সম্পর্কে ভুক্তভোগী ছাত্রী জানায়, এ ঘটনার পর আমি গভীর ট্রমায় ভুগেছি। একা একা কাঁদতাম ও ভয় পেতাম। নতুন পরিবেশে কাউকে বলতেও পারিনি। কষ্ট করে ক্লাস করেছি। শুনেছি তিনি আগেও এ ধরনের যৌন হয়রানিতে জড়িত ছিলেন এবং এখনও তা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ আগস্ট ২০২৫ -এ ভিসি স্যারের কমিশন গঠনের ঘোষণায় সাহস পাই এবং অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের মাধ্যম হয়ে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন অবস্থায় আছে এবং তদন্ত কমিটির ৭ সদস্যের মধ্যে আমিও একজন। সেজন্য এর বেশি মন্তব্য করতে পারছি না।