Image description

নীলফামারীর জলঢাকার শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজ। এ কলেজে অধ্যক্ষ পদে দাবিদার তিনজন। তাদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এক অধ্যাপক। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন একই কলেজের দুই শিক্ষক। অধ্যক্ষ পদে তিনজনের টানাটানিতে দেখা দিয়েছে জটিলতা, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ৮ আগস্ট শিমুলবাড়ি কলেজ জাতীয়করণ করে সরকার। সেই সময় থেকে সরকারি কলেজ আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান।

এরপর চলতি বছরের ৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ শাখা-২-এর আদেশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যাপক এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমানকে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়। কিন্তু সরকারিকৃত কলেজ আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার নন-ক্যাডারে পদায়নের বিধান না থাকায় তার পদায়নের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট হলে ওই (পদায়ন) আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে দায়িত্ব পালনের রায় প্রদান করেন।

এরপর উচ্চ আদালতের রায় অমান্য করে আব্দুল হান্নানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে বরং তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে কলেজের অন্য সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন অধ্যক্ষ এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমান। ফলে এখন একই কলেজে তিনজন অধ্যক্ষ। একজন ক্যাডারভুক্ত, একজন আদালতের নির্দেশে দায়িত্বে থাকা এবং অন্যজন নতুন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত।

এদিকে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে জেলার শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সাবেক অধ্যক্ষ এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল হান্নান।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৮ আগস্ট শিমুলবাড়ি কলেজটি জাতীয়করণ হয়। তখন থেকে আমি বিধিমালা অনুযায়ী কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। সরকারিকৃত কলেজ আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার নন-ক্যাডারে পদায়নের বিধান নেই। সে অনুযায়ী আমার পদায়ন যৌক্তিক রয়েছে। তার পরও বিধি ভঙ্গ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে হঠাৎ করে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ১৩৫ কলেজের সঙ্গে শিমুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত অধ্যাপক এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আব্দুল হান্নান বলেন, আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমান ১৭ এপ্রিল কলেজে যোগদান করেন। ওই আদেশ বাতিল চেয়ে আমি ২৭ মে সুপ্রিম কোটে হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন দাখিল করি। পিটিশনটির পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত ১ জুন সংযুক্ত অধ্যক্ষ পদায়ন আদেশটি তিন মাস স্থগিত করে এবং যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি প্রদানপূর্বক আমাকে রায় প্রদান করেন। উচ্চ আদালতের ওই আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে অধ্যাপক এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমান আমাকে দায়িত্ব না দিয়ে অবৈধভাবে কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। শুধু তাই নয়, তিনি আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য জুন মাসের বেতন-ভাতা বন্ধ করে রাখেন। এতে করে আমি পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমি দ্রুত এর অবসান চাই।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকারী অশোক কুমার রায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমি রংপুরে চিকিৎসকের কাছ থেকে বের হয়ে বাসে রয়েছি, রাতে কথা হবে বলে ফোন সংযোগ কেটে দেন।

এদিকে কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ফোনে কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর তিনি কল রিসিভ করে বলেন, আমি ঢাকায় শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্যারের রুমে আছি, আমার ফোনের ব্যাটারিতে চার্জ নাই, আপনি আমার উপপরিচালক স্যারের সঙ্গে কথা বলবেন? এরপর তিনি রোববার আপনাদের সঙ্গে কথা বলব বলে ফোন সংযোগ কেটে দেন।

এর কিছুক্ষণ পর অন্য একটি নম্বর থেকে তার স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে এক নারী বলেন, আপনি সিদ্দিক সাহেবকে কেন ফোন দিয়েছিলেন, আপনি আমাকে বলেন, কী জানতে চান বলে চড়াও হন।