Image description

শ্রমিক, কৃষক আর শিক্ষকরাই এই দেশে সবচেয়ে নিপীড়িত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন।

সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, প্রতি বছর শ্রমিক আর শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে একটা ঝামেলা হবেই। শ্রমিক, কৃষক আর শিক্ষকরাই এই দেশে সবচেয়ে নিপীড়িত।

তার পোস্টের নিচে নাজমুল হাসান নামে একজন কমেন্টে লিখেছেন, ঠিক বলছেন, বেসরকারি শিক্ষকদের আজকে বেতন দিছে ঐদিকে টাকা তোলার জন্য ব্যাংক বিশেষ ক্ষমতাবলে একদিন খোলা রাখছে। প্রশ্ন হচ্ছে এতদিন কেন দিতে পারে নাই!! কি এমন হইছে যে শেষদিন সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে যে আজকে দিলো। এইটা শুধু এইবার না ছোট থেকেই দেখে আসছি শেষের দিকে গিয়ে নানান কাহিনী করে পরে টাকা দেয়।

জামাল উদ্দিন নামে একজন মন্তব্য করেছেন, শিক্ষকগণের জানুয়ারি মাসের বেতন ইএফটির মাধ্যমে ব্যাংকে জমা হয়েছে। অথচ এখন মার্চ মাস যায় যায়। বেতনের দাবিতে প্রায়ই দেখছি শ্রমিকদের মাঠে নামতে। কারো কারো ৪/৫ মাসের বেতন বাকি। সরকারের শ্রম উপদেষ্টা বলেছেন, অ্যাপারেল গ্লাস ইকো লিঃ-এর মালিক নাকি গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছে। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। ৩ মাসের পাওনার স্থলে ১ মাসের বেতন তাও পুরোটা নয় আংশিক। এটুকুও আবার সবাই পায়নি। ২ হাজার ৬০০ শ্রমিক ১ টাকাও পায়নি। বকেয়া ২ মাসের বেতন, বোনাস, ছুটির টাকা।

আমিনুজ্জামান মোহাম্মদ নামে একজন কমেন্টে লিখেছেন, আপনার পর্যবেক্ষণ যথার্থ। বাংলাদেশসহ বহু উন্নয়নশীল দেশে শ্রমিক, কৃষক এবং শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন এবং বঞ্চনার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। অথচ এই তিন শ্রেণিই দেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত কঠোর পরিশ্রম করেও ন্যায্য মজুরি পান না। বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন-বোনাসের জন্য আন্দোলন করতে বাধ্য হন। মালিকরা বছরের পর বছর মুনাফা বাড়ালেও শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে গড়িমসি করেন। চাকরিচ্যুতি, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ, শ্রম আইন লঙ্ঘন—এসব সমস্যার সম্মুখীন তারা প্রতিনিয়ত হচ্ছেন। অথচ এই শ্রমিকদের হাত ধরেই বৈদেশিক মুদ্রার বড় অংশ অর্জিত হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ কৃষি। কিন্তু কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি সংকটে থাকেন। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা না থাকা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য—এসব কারণে কৃষকরা দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের উৎপাদিত ফসলের দাম মাঠে কম, কিন্তু শহরে এসে তা বহুগুণ বেশি হয়ে যায়। অথচ কৃষকরাই যদি উৎপাদন বন্ধ করে দেন, তবে খাদ্য সংকটে দেশ অচল হয়ে যাবে।

শিক্ষকরা জাতি গঠনের কারিগর হলেও তারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন অনেক কম, তাছাড়া তাদের চাকরির স্থায়িত্বও অনিশ্চিত। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সুযোগ-সুবিধার অভাবে মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপে থাকেন। অথচ শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে তাদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।