
পবিত্র রমজানে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। রঙিন ব্যানার, আলোকসজ্জা ও আলোকিত গেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে তৈরি করেছে নতুন আবহ। উৎসবের আমেজে রোজা পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রমজান উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলই সাজানো হয়েছে রঙবেরঙের ঝাড়বাতিতে। মূল ফটকের সামনে তৈরি করা হয়েছে রঙিন গেট, যেন রমজানকে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে। প্রথম রমজান থেকেই এসব করা হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
দল বেধে সবুজ মাঠে ইফতার করেন শিক্ষার্থীরা
বিকাল থেকেই ছোটখাটো ইফতার বাজারে পরিণত হয় ঢাবির হলপাড়া। এসব দোকানে ভাজা-পোড়া, ফলমূল, শরবত, মিষ্টিসহ ইফতারের যাবতীয় পণ্য বিক্রি হয়। আগের তুলনায় এবার বিক্রিও ভালো বলে জানান বিক্রেতারা। ইফতারি কিনতে বিকাল থেকেই থাকে শিক্ষার্থীদের ভিড়। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও টিএসসি অথবা মল চত্বরে এসে পরিবারসহ ইফতার করেন অনেকে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের ভেতরে দোকান, হাকিম চত্বর, গ্রন্থাগার সংলগ্ন দোকান, টিএসসিসহ একাধিক এলাকায়ও বিক্রি হয় ইফতার সামগ্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে তৈরি হয়েছে নতুন আবহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলে ৩৬ বছর ধরে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করেন ফজলুল হক শিকদার। তিনি বলেন, ‘আমি ৩৬ বছর ধরে হলে চাকরি করি। কিন্তু এত সুন্দর রমজান দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এ বছর সাজানোটা অনেক ভালো হয়েছে।’
এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রমজানের যে আমেজ, সেটা আমাদের মাঝে দেখা যায়নি। রমজানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম থাকায় অ্যাকাডেমিক ক্লাস, ক্লাস শেষে প্রোগ্রাম করা কষ্টকর হয়ে যেতো। এবার মোটামুটি সবার মাঝেই রমজানের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। হলের রুমে শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে থাকতে পারছে। সব মিলিয়ে আগের থেকে ভিন্নতা এসেছে।’
শিক্ষার্থী আশিক খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের রমজানে আলাদা একটা ফিল পাওয়া যাচ্ছে, যেটা আগে ছিল না। জুলাই পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন এসেছে। আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে ইফতার আয়োজন করছে। আনন্দ-অনুভূতি ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। আগে দেখা যেত ইফতার মাহফিলগুলোকেও রাজনৈতিক চাদরে আবৃত করা হতো।’
তিনি বলেন, ‘এবার রমজান উপলক্ষে হলগুলো সাজানো হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এছাড়াও কিছু কিছু রাজনৈতিক সংগঠনও ইফতারের আয়োজন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে। কিন্তু ফ্যাসিবাদী আমলে রমজান মাসেও দিনে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ডেকে নিয়ে যাওয়া হতো, আবার রাতে ছিল গণরুম গেস্টরুম; যা এখন নেই।’
ঢাবির টিএসসিতে ইফতার করছেন মাইমুনা। তিনি রামপুরা থেকে এসেছেন প্রিয়জনকে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করতে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করি। দুই বছর ধরে আমরা মাঝে মাঝে টিএসসিতে ইফতার করি। এখানে ইফতার করতে ভালো লাগে। সবুজ মাঠে বসে অনেক মানুষের সঙ্গে ইফতার করা যায়।’
ঢাবি শিক্ষার্থী শাকিল শেখ বলেন, ‘আমরা আজ বিভাগের কয়েকজন বন্ধু মিলে একসঙ্গে ইফতার করলাম। প্রতি বছরের থেকে এ বছর রমজানটা একটু বেশি স্পেশাল লাগছে। মনে হচ্ছে মুক্ত।’