রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুনের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে ক্ষোভ ঝাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে সমালোচনার মুখে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফেসবুক পোস্টটি ডিলিট করে দেন তিনি।
ওই ফেসবুক পোস্টে তিনি রাকসুতে নির্বাচিত হিজাবী নারী শিক্ষার্থীদের ছবি সংযুক্ত করে অধ্যাপক আ-আল মামুন লিখেছেন, 'এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!'
এদিকে রাবি অধ্যাপকের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন রাকসুর ভিপি, জিএস ও ছাত্রদল-শিবিরের নেতাকর্মীরা।
রাকসুর সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা ফেসবুক পোস্টে বলেন, 'নৈতিক শিক্ষা একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। পরিবার থেকে যে পায় না, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও মূর্খতা প্রদর্শন করে। আমরা তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যারা সুশীলতার নামে ধর্মীয় পোশাকের অবমাননা করে এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার নামে অনৈতিক কার্যকলাপকে নরমালাইজ করতে চায়, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবমাননা করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থীকে অপমান করা হয়েছে। এজন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথা তাকে আইনানুযায়ী শাস্তিবরণ করতে হবে।
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ভাবছি, কাল আমি জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে যাব। মামুন স্যার কি টু-কোয়ার্টার আর মদের বোতল হাতে ক্লাসে আসবেন? তারা ছাত্রীসংস্থার বা কোনো রাজনৈতিক দলের কেউ না, শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়া প্রতিনিধি। আমি ইনশাআল্লাহ আগামীকাল জার্নালিজম বিভাগের সামনে যাবো আপনার পোস্টের সত্যতা দেখতে।
যদি সৎ সাহস থাকে তাহলে আপনাকে কাল বর্ননা করা চেহারাতেই পাবো আপনাকে আর যদি না পাই তাহলে আপনাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
তিনি আরও লিখেছেন, মামুন স্যার জুলাইয়ের হিরো এটা অস্বীকার করব না, দলকানা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের কয়েকটা আন্দোলনের পক্ষে, আমাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এটাও অকপটে স্বীকার করব কিন্তু এই পোস্টের জবাব আপনাকে দিতে হবে স্যার।
ওই অধ্যাপকের পোস্টে প্রতিত্তোরে রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী ফেসবুক পোস্টে লেখন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বই-পুস্তকের জায়গা নয়, এটি চিন্তার স্বাধীনতার ক্ষেত্র। এখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী চায় সে হিজাব পরুক বা না পরুক নিজস্ব ভাবনা ও পোশাকে সমানভাবে স্বাধীনতা। চিন্তার স্বাধীনতাই আসল শক্তি। কেউ হিজাব পরুক বা না পরুক সবার পছন্দই সম্মানযোগ্য। সম্মান দিই একে অপরের সিদ্ধান্তকে, কারণ প্রকৃত শিক্ষা আমাদের এটিই শেখায়।
হিজাব পরা মেয়েরা আজ আধুনিক বিশ্বের অংশ তারা ক্লাসে, ল্যাবে, নেতৃত্বে, এমনকি গবেষণাতেও সমান ভূমিকা রাখছে। তাদের আত্মবিশ্বাস, ভদ্রতা ও মূল্যবোধ প্রমাণ করে আধুনিকতা মানে পোশাক নয়, মানসিকতা।
রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, একজন শিক্ষকের এরকম হঠকারী পোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রশাসনকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীর সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। আর আপনার মতো শিক্ষকদের বলি, এক্ষুণি এত বেসামাল হয়ে যাইয়েন না। সামনে আমাদের আদর্শের বিস্তার আপনাদের জন্য আরো জ্বালাপোড়ার কারণ হবে ইনশাআল্লাহ। ওনার জ্বালা বাড়ানোর জন্য জানিয়ে রাখি, সব ছাত্রী হলের নির্বাচিত প্রতিনিধি (ভিপি, জিএস, এজিএস-সহ) বেশিরভাগ বোনই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, এ পোস্ট নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তা ননসেন্স আলাপ। আমি পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলি নাই। বোরখা নিয়ে সমালোচনা আমার নাই।
কেউ যদি বলে হিজাবের ইতিহাস আছে কি না আমি সেটা বলতে পারব। আমি ইসলামিজম এবং সেক্যুলারিজম নিয়ে পড়াশোনা করেছি; শুধু মিডিয়া নিয়ে নয়। ২০১৩-১৪ সালের পর যখন হিজাব নিয়ে স্যাটায়ার করা হতো, মজা করা হতো; হু ডিফেন্ডেড দেম? ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে তরিকুলকে পিটানো হলো; হু ডিফেন্ডেড দেম? আমি ডিফেন্ড করেছি। আমি জুলাই বিপ্লবেও সম্মুখ সারিতেই ছিলাম।