Image description
 

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ঢালিউডের ক্ষণজন্মা অভিনেতা সালমান শাহের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার অকালমৃত্যু নিয়ে তৈরি হওয়া রহস্যের জট এবার হত্যা মামলা হিসাবে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই মামলায় সালমান শাহের সাবেক স্ত্রী সামিরা, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডনসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। 

 

এদিকে সালমান শাহ হত্যায় অভিনেত্রী শাবনূরকেও দোষারোপ করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিনেত্রী শাবনূর বলেছেন, আমাকে কেন দোষারোপ করা হচ্ছে, আমিও বিচার চাই?

অভিনেত্রী বলেন, সংবাদমাধ্যমে তিনি আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশের খবর জানতে পেরেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি লিখেছেন—বিষয়টি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন, তাই আমি মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমার নাম জড়িয়ে যে ভিত্তিহীন গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। 

শাবনূর বলেন, সালমান শাহ ছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় সহ-অভিনেতা। নিঃসন্দেহে বলতে পারি, তার সঙ্গে কাজ করেই আমার চলচ্চিত্রজীবন বিকশিত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আমাদের জুটির সাফল্য একসময় অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার মৃত্যুর পর কেউ কেউ হয়তো নিজেদের বাঁচাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার সঙ্গে সালমানের সম্পর্ক নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়িয়েছে।

সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপারে টেলিফোনে আলাপচারিতায় শাবনূরের কণ্ঠে ছিল আরও বেশি আবেগ, হতাশা ও ক্ষোভ। কিছুটা উত্তেজিত স্বরেই অভিনেত্রী বলেন, এটা খুবই সংবেদনশীল একটি বিষয়। আমার সম্পর্কে যা কিছু বলা হচ্ছে, সবই মিথ্যা, সব বানোয়াট কথা। আমি বুঝি না কেন এখনো আমাকে এ ঘটনায় টেনে আনা হচ্ছে। আমি তো কিছুই জানি না। আমি তখন ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তাহলে কেন এই ভিত্তিহীন কথা? আমাকে কেন অকারণে দোষারোপ করা হচ্ছে?’ 

শাবনূর বলেন, ঘটনার আগের দিনও তো সালমান ও সামিরা (সালমানের স্ত্রী) হাসিখুশি ছিল। ওরা ডাবিং থিয়েটার থেকে একসঙ্গেই হাসতে হাসতে বের হয়েছে। এটা আমার কথা নয়, আমাদের পরিচালক, ইউনিটের অনেকেই তা দেখেছে।

তিনি বলেন, আমি নিজেই এখন বিচার চাই। আমাকে নিয়ে যে নোংরামি হচ্ছে, আমি তার বিচার চাই। কী এমন হয়েছিল যে এক রাতেই সব শেষ হয়ে গেল? যারা ওই সময় ওর (সালমানের) সঙ্গে ছিল, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। আমরা তো পর্দার মানুষ, আমরা তো তৃতীয় পক্ষ। পর্দার রসায়ন আর বাস্তবজীবন এক নয়।

সালমানের স্ত্রী সামিরার বিভিন্ন সময়ের সাক্ষাৎকারের অসংগতির কথাও উল্লেখ করে অভিনেত্রী বলেন, অনেক সময় আমি অবাক হয়ে শুনি, কীভাবে সেই সময়ের অনেক তথ্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। আমার তখন বয়স কত ছিল? আমি তো আমার পরিবারের অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতেই পারতাম না। আমার কাজ, চলাফেরা—সবকিছুই আমার পরিবার ও প্রযোজনা সংস্থার তত্ত্বাবধানে ছিল।

শাবনূর বলেন, এই সময়টা আমাকে ভেতর থেকে ক্লান্ত করে দিয়েছে। আমি নিজের মতো করে সংসার করছি, সন্তান ও পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই। কিন্তু যখনই এ বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে, মনে হয় আমি আবার সেই পুরোনো অন্ধকার সময়ের দিকে ফিরে যাচ্ছি।

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন অভিনেত্রী শাবনূর। একমাত্র সন্তান ও পরিবার নিয়ে তিনি সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন কাটাচ্ছেন। সালমান শাহর মৃত্যুর বিচার নিয়ে তার কণ্ঠে একটাই আহ্বান—ন্যায়বিচার। তিনি বলেন, জনগণ যেমন বিচার চায়, সালমান ভাইয়ের মা (নীলা আন্টি) যেমন সন্তানের বিচার চান, আমিও তেমনই এই মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। যে-ই দোষী হোক না কেন, তাকে যেন আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, সালমান-শাবনূর জুটি ছিল নব্বইয়ের দশকের ঢালিউডের সোনালি সময়ের প্রতীক। একসঙ্গে তারা অভিনয় করেছেন ১৪টি সিনেমায়—‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘সুজন সখী’সহ আরও অনেক জনপ্রিয় সিনেমায়। তাদের পর্দার রসায়ন ছিল জাদুর মতো, যা এখনো দর্শকের মনে অম্লান।