
‘কোনো শিল্পীই বলবে না, আমার তৃষ্ণা মিটে গেছে। কোনো শিল্পীই বলবে না, এখন আর আমার কোনো স্বপ্ন নেই।
আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আজীবন অভিনয়ই করে যেতে চাই। ’ চলতি মাসেই জীবনের ৭০ বসন্তে পা রেখে এমন উপলব্ধির কথা জানিয়েছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী ডলি জহুর।
পর্দায় সাবলীল অভিনয়ে তিনি জয় করেছেন কয়েক প্রজন্মের মন। চরিত্রভিত্তিক অভিনয়ে; বিশেষ করে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের ভাসিয়েছেন আবেগের জোয়ারে। এবার সেই অভিনেত্রী জানালেন আক্ষেপের কথা। অনেক সিনেমাতেও কাজ করলেও নাকি তাকে ঠিক মতো দেওয়া হতো না পারিশ্রমিক!
ডলি জহুর আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমরা যারা মা-খালা চরিত্রে অভিনয় করি, কোন মর্যাদা ইন্ডাস্ট্রিতে পাইনি- এটা সত্যি কথা।
এই অভিনেত্রীর কথায়, আমার সারাজীবন শুনতে হয়েছে, ‘আপনি টাকার জন্য কাজ করেন নাকি?’ টাকার জন্য নাকি কাজ করি না, অথচ আমি যে কষ্ট করেছি সিনেমাতে। আমরা তো নায়ক-নায়িকার মতো বেশি টাকা পাই না। মায়ের অভিনয় করতাম, টাকা কম পেতাম। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি থেকে চলে আসি ২০১১ সালে, এরপর আর কাজ করিনি। তখনও আমি ৩৪ লাখ পারিশ্রমিকের টাকা রেখে আসছি।
নিজের দুঃসময়ের সময়েও নিজের কাজের টাকা পাননি ডলি জহুর। কান্নাকাটি করে বলার পরও কোনও সুরাহা হয়নি, বরং যোগাযোগই বন্ধ করে দেন তার সঙ্গে।
এই অভিনেত্রীর স্বামী তখন ক্যানসারে আক্রান্ত, সেই সময় যেন আকাশ মাথায় ভেঙে পড়ে তার। কারণ এই অভিনেত্রীর মাও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে অনন্ত যাত্রায় গমন করেন। তাই স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য টাকার বিকল্প ছিল না।
ডলি জহুর বলেন, সেই সময় আমি অনেক সিনেমা করি, অনেকের কাছে টাকা পাইতাম। এমনও হয়েছে সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তারপরও পুরো টাকাই পেতাম। ওই সময় আমি কেঁদে কেঁদে বলছি- ‘কিছু টাকা আমার তুলে দেন আমার স্বামীকে নিয়ে ব্যাংককে যাব। ’ আমার পাওনা টাকা, যাকে দ্বায়িত্ব দিলাম তার কাছেও টাকা পাইতাম। এরপর তো আর ওই লোক যোগাযোগ করেই নাই নিজেও কোন টাকা দেয় নাই। এমন সময়ে এক পাইও ইন্ডাস্ট্রি থেকে পাইনি।
তবে এই টাকার আশা ছেড়ে দিয়েছেন ডলি জহুর। তাই যাদের কাছে টাকা পান সরাসরি তাদের নাম প্রকাশ করে ছোট করেননি গুণী এই অভিনয়শিল্পী।
এদিকে কদিন আগেই জীবনের ৭০তম বসন্তে পা রেখে এই অভিনেত্রী বলেছিলেন, সারাটা জীবন অভিনয়ই করে গেছি। যখন যে কাজটি করেছি মন দিয়েই করার চেষ্টা করেছি। কোন কাজ করে কী সম্মানী পাব সেটা নিয়ে কখনো ভাবিনি। শুধু ভাবনায় ছিল আমাকে যে চরিত্রটি দেওয়া হয়েছে তাতে যেন ঠিকঠাক মতো অভিনয়টা করে যেতে পারি। এদেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি আমি শুধু অভিনয় করেই। অভিনয় ছাড়াতো জীবনে আর কিছু পারি না, তাই এখনো অভিনয় করতেই ভালো লাগে।
সবশেষ তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর। এ ছাড়াও মহিন খানের নির্দেশনাতেও তিনি আরও একটি একক নাটকের কাজ শেষ করেছেন।
বলে রাখা যায়, ২০২১ সালে ডলি জহুরকে ‘আজীবন সম্মাননা’ প্রদান করা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও ‘ঘানি’ সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়াকালীন তিনি মঞ্চ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর থেকে এখন অবধি অভিনয় করেই যাচ্ছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘নতুন বউ’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘কুলি’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘বিচার হবে’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘সন্তান আমার অহংকার’, ‘মন বসেনা পড়ার টেবিলে’ ইত্যাদি।