Image description

কাজের চাপ, একঘেয়েমি কিংবা চিন্তায় থাকলে অনেকেই অজান্তেই আঙুল ফোটান। অনেক সময় এটি স্বস্তি দেয়, আবার কারও কারও কাছে এটি যেন এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়। তবে বহুদিন ধরেই একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে—নিয়মিত আঙুল ফোটালে নাকি হাড় ক্ষয়ে যেতে পারে, এমনকি আর্থ্রাইটিস বা বাতও হতে পারে। এই ধারণা কতটা সত্য? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলছে এ বিষয়ে?

 

আঙুল ফোটানোর পেছনের কারণ: গবেষণা বলছে, প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে আঙুল ফোটান। কেউ কেউ শব্দ শুনে মজা পান, কেউ আবার মনে করেন এতে চাপমুক্ত হওয়া যায়। কেউ কেউ একে স্ট্রেস থেকে মুক্তির উপায় হিসেবেও ব্যবহার করেন। এমনও দেখা গেছে, উদ্বেগ বা চিন্তার সময়ে যারা চুল পাকান বা নখ কামড়ান, তারাও অনিচ্ছাসত্ত্বেও আঙুল ফোটানোর অভ্যাস গড়ে তুলেন। একবার এ অভ্যাস তৈরি হলে তা ছাড়াও কঠিন হয়ে পড়ে।

আঙুল ফোটালে যে শব্দ হয়, তার উৎস: অনেকেই ভাবেন, হাড় ঘষা লেগেই বুঝি শব্দটি হয়। তবে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন ভিন্ন কথা। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় এমআরআই-তে দেখা গেছে, আঙুল ফোটানোর সময় জোড়া টান দিলে অস্থিসন্ধির তরলের মধ্যে একটি ছোট ‘ক্যাভিটি’ বা ফাঁপা জায়গা তৈরি হয়, যেটির সৃষ্টিই শব্দের কারণ। আর ২০১৮ সালের আরেক গবেষণায় বলা হয়, শব্দটি আসলে ওই ফাঁপা অংশটি আংশিক ভেঙে পড়ার সময় তৈরি হয়। আর একই আঙুল কিছুক্ষণ পর আবার ফোটানো যায়। কারণ ওই ফাঁপা জায়গাটি আবার পূর্ণ হতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে।

আঙুল ফোটানো কি ক্ষতিকর: অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেন, মাঝেমধ্যে আঙুল ফোটানো তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু কেউ যদি দিনে একাধিকবার বা অভ্যাসগতভাবে এটি করতে থাকেন, তখন অস্থিসন্ধির সাইনুভিয়াল তরলের পরিমাণ কমে যেতে পারে। এতে হাড়ে হাড়ে ঘর্ষণ বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি তৈরি হয়।

তবে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আঙুল ফোটানো সরাসরি বাত বা হাড় ক্ষয়ের কারণ নয়। ৫০ বছর ধরে নিজের এক হাতের আঙুল ফোটানো এক চিকিৎসকের পরীক্ষাতেও তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি দেখতে পান, ফোটানো ও না ফোটানো দুই হাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য হয়নি।

 

যখন সাবধান হওয়া জরুরি: যদি আঙুল ফোটানোর সময় বা পরবর্তীতে ব্যথা অনুভব হয়, আঙুল ফুলে যায় বা নড়াতে সমস্যা হয় তবে এটি নিছক অভ্যাস নয়, বরং অন্তর্নিহিত কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন: গাউট, আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্ট ইনজুরি।

চিকিৎসকদের মতে, নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি:

  • আঙুলে ব্যথা
  • ফুলে যাওয়া
  • জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া
  • নড়াচড়া করতে কষ্ট হওয়া

বিজ্ঞান বলছে, মাঝে মাঝে আঙুল ফোটানো ক্ষতিকর নয়। তবে অভ্যাসগতভাবে করলে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই সতর্ক থাকা ভালো। আর যদি ব্যথা, ফোলা বা জয়েন্টে অস্বস্তি হয় তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

সূত্র: হেলথলাইন