Image description
লাল-সবুজের পতাকায় বিজয় আনন্দ

পৌষের সকাল। তখনও কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব গগনে সূর্য ওঠেনি। তার আগেই কারও গায়ে লাল-সবুজের পাঞ্জাবি, মেয়েরা এসেছেন লাল-সবুজের শাড়িতে। তাদের কারও কারও হাতে ফুলের ডালা। ঠিক এভাবেই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাইকে প্রবেশ করতে দেখা যায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। বিজয় দিবসের উৎসবে দিনভর লাল-সবুজে মেতে উঠেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

লাল-সবুজ, যার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে সামনে আনতেই শুক্রবার মহান বিজয় দিবসে সকাল সাড়ে ১০টায় ৪০ ফুট দীর্ঘ ও ২৪ ফুট প্রশস্ত লাল-সবুজের বিশাল জাতীয় পতাকা নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছিল সামাজিক সংগঠন ম্যান ফর ম্যান ফোর্স। যা দেখতে ভিড় জমায় শত শত মানুষ।

কেউ কেউ পতাকা ছুঁয়ে ছবি তুলেন। কেউ দূর থেকে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখেন। কাদের সিদ্দিকী কলেজের মরিয়ম নামে এক শিক্ষার্থী সময়ের আলেকে বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে স্মৃতিসৌধে আসি। তবে এবার বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি। এত বড় লাল-সবুজের পতাকা সেভাবে দেখিনি। মোবাইলে আর টিভিতে দেখেছি। কিন্তু সশরীরে এই প্রথম এত বড় পতাকা দেখছি। একগাল হাসি ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমরা পতাকা ধরে বেশকিছু ছবিও তুলেছি। কারণ প্রতিদিন তো আর এমন সুযোগ পাব না।

জগন্নাথ বিশ্বদ্যিালয় থেকে আসা শিক্ষার্থী তাহমিদেরও একই অনুভূতি। তার ভাষ্যেÑলাল-সবুজের পতাকা আমাদের বিজয়ের প্রতীক। এই লাল-সবুজের পতাকার জন্যই আমরা দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করি। স্মৃতিসৌধে গত দুই বছর করোনার কারণে আসা হয়নি। তবে এবার এসে এত বড় পতাকা দেখে মন ভরে গেছে। বিজয়ের এই দিনে আমরা ফিরে গেছি সেই ১৯৭১ এ। এ এক অন্য অনুভূতি।

দীর্ঘ লাল-সবুজ পতাকা বিজয় দিবসে যেমন সৌন্দর্য ছড়িয়েছে ঠিক তেমনই এই পতাকা ছুঁয়ে দেখতে পেরে আনন্দ মেতে উঠেছেন সব বয়সি ও পেশার মানুষ। প্রায় সবার হাতে ছোট-বড়-মাঝারি পতাকা থাকলেও দীর্ঘ এই ৪০ ফুট পতাকা স্মৃতিসৌধে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সবার মাঝে বিজয়ের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায়।

তবে এই পতাকা ব্যক্তি উদ্যোগে হয়নি। সামাজিক সংগঠন ম্যান ফর ম্যান ফোর্স এটি তৈরি করতে কাজ করছেন। এই সংগঠনটির সভাপতি মো. রাজিবুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি। হৃদয়ে ধারণ করি। আমরা চাই আগামীর তরুণ প্রজন্ম বিশালাকার এই জাতীয় পতাকা দেখে উদ্বেলিত হোক। তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সঠিকভাবে জানুক। তারা জানুক কীভাবে লাল-সবুজের পতাকাটি আমরা পেয়েছি। তাই আমাদের সংগঠনটির পক্ষ থেকে এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের চেষ্টা করি।

মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাল-সবুজের এই পতাকায় যেন মিশেছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এই পতাকাই যেন সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগের কথা। আর সে কারণেই লাল-সবুজের পতাকায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে সবাই মেতেছিল বিজয়ের আনন্দে।