
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির জন্য উন্নত বিশ্ব দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি সময়ের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। যা মানব সভ্যতার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এর জন্য মূলত উন্নত বিশ্বই দায়ী। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে দুর্যোগের ঘটনা বাড়ছে। যার ফলে মানুষ ও সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাস করণে বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড এর আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আগামী অর্থবছর থেকে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে বিশ্বনেতৃবৃন্দ কাজ শুরু করলেও কিছু কিছু বিষয়ে সদস্যদেশসমূহ ঐক্যমত্যে পৌছাতে পারেনি। তাই জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা সমমনা দেশগুলোকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধভাবে জোরালো অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। এবারের সম্মেলনে লস এন্ড ডেমেজ ফান্ড গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও তার বাস্তবায়ন এখনও পুরাপুরি সম্ভব হয়নি। তবে জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে কপ-২৭ কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে। এবারের সম্মেলনে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য ৭০ মিলিয়ন ডলার ও এডাপটেশন ফান্ড থেকে ২১১ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত ৪০ বছরে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার। ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে প্রতি বছর আমাদের জিডিপিতে ক্ষতির পরিমাণ ১.৩ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৬ কোটি ৮০ লাখ লোক জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি ৭ জন লোকের মধ্যে ১জনের অভ্যন্তরীণ বাস্তচ্যুতি হচ্ছে। জলবায়ু ঝুঁকি নিরসন করা সম্ভব না হলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ২ কোটি ৬০ লাখ লোকের বাস্তচ্যুতির ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ২৭ বছর মেয়াদী জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। যা বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে ২৩০ বিলিয়ন ডলার। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০.৩ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন বেশি হবে। ফলে দেশে দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জলবায়ু কূটনীতিতে বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্ব প্রদান করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
বাংলাদেশে জলবায়ু ঝুঁকি নিরসনের লক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে ৮ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ সমূহ হচ্ছে- ১) জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তাসহ দেশীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করা, ২) আগামী ৫ বছরের জন্য Bangladesh Climate Change Strategy and Action Plan-II প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, ৩) জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার আলোকে বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাষ্টের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা, ৪) জলবায়ু অর্থায়নে প্রাইভেট সেক্টরকে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা, ৫) জলবায়ু তহবিলের অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ৬) গ্রিন টেকনোলজি- ব্যবহারের কারণে শ্রমিকের কর্মসংস্থান যেন সংকুচিত না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ৭) জলবায়ু ঝুঁকি নিরসনে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ প্রকল্প চালু করা, ৮) জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে গবেষণা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত করা।
প্রতিযোগিতায় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন- উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান রাহী, সাংবাদিক আহমেদ রেজা এবং লেখক ও গবেষক নিশাত সুলতানা।