সেবা খাত নিয়ে সরকারের কিছু অর্জন অবশ্যই আছে। তবে সব সেবা খাত দুর্নীতির ভেতর হাবুডুবু খাচ্ছে। এ লেখার শুরুতেই স্মরণ করছি বহু গ্রন্থপ্রণেতা ও লেখক রাজনীতিবিদ মরহুম আবুল মনসুর আহমদের কথা। তার বিখ্যাত একটি গল্প রয়েছে। তার ‘আদু ভাই’ পড়েননি এমন রাজনীতিবিদ ও ছাত্র নেই। আলোচ্য গল্পটির নাম ‘জনসেবা ইউনিভারসিটি’। সেই গল্পের নায়ক জনসেবার জন্য কত বাহানাই না সৃষ্টি করেছিলেন।
সেবা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই এই বিখ্যাত রাজনীতিবিদের কথা মনে পড়ল। আলোচ্য লেখক বঙ্গবন্ধুর আমলেই লিখেছিলেন ‘বেশি দামে কেনা, কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা’। সেই সময় খন্দকার আবদুল হামিদের অনেক স্মরণীয় লেখা সে সময় ছদ্ম নামে প্রকাশিত হতো। ‘লুব্ধক’ নামে খ্যাত আখতার উল-আলমও সেই দশকের খ্যাতিমান লেখক।
আবুল মনসুর আহমদের ‘ফুড কনফারেন্স’-এর কথা আমাদের প্রজন্ম পড়েনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ একটি প্রামাণ্য দলিল। তবে আমার একজন শিক্ষক মুসলিম বাংলার ইতিহাসবিদরূপে সম্ভবত এখনো ইতিহাসের ছাত্রদের কাছে রেফারেন্স হয়ে আছেন। সেই আবদুর রহিম স্যারকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে তার খ্যাতি কোনো দিন ম্লান হবার নয়। কথায় আছে রহিম-করিম ছাড়া বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস জানা হতো না। আবদুল করিম স্যার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের ভিসি ছিলেন।
করিম স্যারের ক্লাস পাইনি, তবে তিনি সম্ভবত যে সময় ভিসি ছিলেন, তখন আমার ডিগ্রির সার্টিফিকেট তোলার জন্য তার কাছে গিয়েছিলাম। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এমএ ক্লাসের ছাত্র হলেও আমার ডিগ্রি ছিল চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। সেই সুবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার সার্টিফিকেট তোলা জরুরি ছিল।
শুরু করেছিলাম আবুল মনসুর আহমদের লেখা নিয়ে। রহিম স্যার ক্লাস নেয়ার সময় একদিন বলেছিলেন, তোমরা আবুল মনসুর আহমদের ইতিহাসবিষয়ক লেখা অবশ্যই পড়বে। স্মরণে রাখবে তিনিও একজন মানুষ, মনের অজান্তেই তিনি ইতিহাসের সেই বিষয়গুলো সামনে এনেছেন, যেগুলোতে তিনি উপস্থিত থেকেছেন, তার বাইরেও কিছু ইতিহাস রয়েছে যা তিনি হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ করেননি। এটি হয়তো মানুষ হিসেবে সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে ছিলেন না, তাই বলে তিনি ইতিহাস বিকৃত করেছেন এমন কথা বলা যাবে না। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তার সাথে তার ধানমন্ডির ঈদগাহের লাগোয়া বাসায় সাক্ষাৎ করার। একটি লেখা চাইতেই তিনি রীতিমতো লেখা বইগুলোর ওপর পরীক্ষা নিয়েছিলেন, এটা পড়েছ কি না, ওটা পড়েছ কি না, ইত্যাদি। কথা প্রসঙ্গে তার সন্তানদের প্রসঙ্গ তুললেন, বললেন, আমার সন্তানদের মধ্যে মতলুব আনাম, মহবুব আনামরা এক ধরনের ডান ভাবনার মনে হয়। ‘আমিওতো ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত, কিন্তু আমার ছেলে মাহফুজ আনাম নাকি বামপন্থী। তিনি এখন ডেইলি স্টারের সম্পাদক; মতলুব আনামের সাথে আমার খুব জানাশোনা ছিলেন। নয়া দিগন্তে শেষ বয়সেও সপ্তাহে লেখা পাঠাতেন।
গৌর চন্দ্রিকাটা বেশ বড়ই হয়ে গেল। প্রবন্ধ ও নিবন্ধ লেখকদের একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। সেই তুলনায় কলাম লেখকদের স্বাধীনতা একটু বেশি। তারা স্মৃতি কথা নিয়ে লিখতে পারেন। নিজের মন্তব্য করতে পারেন। একই সাথে প্রাসঙ্গিক উপমাও তুলে ধরতে পারেন। আবুল মনসুর আহমদ প্রসঙ্গে আর একটি কথা মনে পড়ল। তিনি বলেছিলেন, কোনো এক বিখ্যাত লোক তাকে বলেছিলেন, কায়েদে আযম কেন বলি। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, কোনো একসময় বঙ্গবন্ধু বলার লোক খুঁজে পাবে না, তখনো আমি বঙ্গবন্ধু বলব, কথাটা স্মরণে রেখো।
আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল সেবা খাত নিয়ে। এ দেশের সেবা খাত নিয়ে প্রশ্ন কম তোলাই ভালো। কারণ বাস্তবে সেবা খাত থেকে সেবা কিনতে হয়। সেবা কিনতে গেলেই ঘুষ বা উপরি দিতে হবেই। সেটা ট্রেড লাইসেন্স থেকে, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি নিয়ে শুরু করে হেন খাত নেই যে, সংশ্লিষ্টদের উপরি না দিয়ে সেবা পাবেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী থেকে পিয়ন পাইক পেয়াদা পর্যন্ত হা করে থাকেন। অথচ আপনি সরকারকে খাজনা ট্যাক্স ঠিকই দিচ্ছেন। আপনার টাকায় তাদের বেতনভাতা হয়। এরকম দেশ পৃথিবীতে কমই দেখা যায়। তবে একটা মুসলিম দেশকে জানি সেখানে ঘুষ দেয়া নেয়া হারাম, মায়ের সাথে জেনা তুল্য সে অপরাধ, তাই তারা ঘুষ বা বখশিশ কিংবা উপরি বলে না, বলে ‘স্পিড মানি’ অর্থাৎ কাজ দ্রুত পাওয়ার জন্য এই মানিটা না দিলে আপনার কাজ হবে না। হালে আমাদের দেশেও ফাইল ঠেকিয়ে রাখলে টাকা দেয়া ছাড়া আপনার কাজ উদ্ধার হবে না। তাই ‘স্পিড মানির’ ধারণাটা আমাদের দেশেও চালু হয়ে গেছে। এটা যে ঘুষ তাতে কারো কোনো সন্দেহ আছে কি!
প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবেন- তার কাছে দেখা পাওয়া অবশ্যই একটা প্রটোকলের ব্যাপার। অথচ তার কাছে পৌঁছা পর্যন্ত আপনাকে প্রতিটি ঘাটেই বখশিশ নামের উপরি দিতে হবেই। চাকরি-বাকরিসহ কোথাও বাড়তি টাকা ছাড়া আপনার কোনো কাজ আদায় করা অসম্ভব। যে সেবা পাওয়া আপনার অধিকার, দেয়া সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য। কিন্তু শুকনো কথায় চিঁড়া ভিজবে না। বিভিন্ন নামে আপনার পকেট থেকে টাকা খসবেই।
বিগত এক যুগে এমন একটা খাতও দেখাতে পারবেন না, যে খাতে দুর্নীতি হয়নি, হচ্ছে না। চাঁদাবাজি থেকে কেনা কাটায় পুকুর চুরির কথা নয়, যেন ‘সাগর চুরি’ হয়ে যাওয়ার দশা। আপনারাই বলুন, কোন খাত ও বিভাগ আছে যেখানে দুর্নীতি হয় না? কেনাকাটা থেকে টেন্ডারবাজি, ভোট চুরি থেকে উন্নয়ন প্রকল্প- কোথায় লোপাটতন্ত্রের নজির নেই? বলা হয়, মেগা প্রকল্প মানে মেগা দুর্নীতি। অনেক কর্মচারীর বেতনের টাকার চেয়ে উপরির টাকা বেশি। খাজনা থেকে বাজনা বেশি, এই কথাটি এমনিতেই চালু হয়নি। সেবা পাওয়া আপনার অধিকার, সেখানে সেবাদাতারাও যেন বাড়তি পাওয়াকে অধিকার বানিয়ে নিয়েছেন। রন্ধ্রে রন্ধ্রে এত দুর্নীতি যে, আপনার কোনো সাধ্য নেই এটিকে অস্বীকার করবেন।
আমার অভিজ্ঞতায় প্রত্যেকটি সেবা খাত এতটা দুর্নীতির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে যে, কোনটি উল্লেখ করব আর কোনটি করব না, সেটাই ভেবে পাই না। শুধু নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাটুকু যদি বর্ণনা করি তাহলেও শেষ করা যাবে না।
সমগ্র জাতির কথা বলার পর কারো ধৈর্য থাকবে না। একটা কথা বলতে দ্বিধা নেই, সব দুর্নীতির জন্ম ক্ষমতার উদর থেকে। রাজনীতির গর্ভ থেকে, সরকারের ছত্রছায়ায়। ক’টি দুর্নীতির কথা উল্লেখ করব? যেগুলো চাঞ্চল্যকর তার দু-চারটা আলোচনায় উঠে আসে, বেশির ভাগ উঠে আসে না। অনেকেই বলে থাকেন, পুলিশ ঘুষ খায়। কথাটা ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে সত্য, কিন্তু আর কোন ‘বাহিনী’ আছে যাদের ভেতর দুর্নীতি নেই! এমন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম কি বলা যাবে যিনি দুর্নীতির সাথে জড়িত নন। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। যারা এই সয়লাবেও নিজের চরিত্রটুকু ধরে রেখেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান আমরা কেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও দেখাবেন। সমস্যা হচ্ছে, সেই চরিত্রবান লোকদের সালাম করে দোয়া করার জন্য কোথায় খুঁজে পাবেন? হাতেগোনা সে মানুষগুলো সাধারণত নিজেকে লুকিয়ে রাখাটাই উচিত ভাবেন। প্রধানমন্ত্রী কি দুর্নীতি করেন? আমার বিশ্বাস তিনি এর সাথে সংশ্লিষ্ট নেই। কিন্তু তাকে যারা ঘিরে আছেন, যাদের ওপর তিনি দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন কিংবা যারা তার নাম বিক্রি করে চাঁদাবাজি করেন তাদের টিকিটি আপনার স্পর্শ করারও সাধ্য নেই।
বিশেষত রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে যেসব দুর্নীতি হয়ে থাকে সেসব রোধ করা কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ধারা পাল্টানোর আগে সেটা কল্পনাও অসম্ভব। তা ছাড়া সব ক’টি পেশাজীবী সংগঠন সরকারের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয়। বিশেষ করে সচিবালয় থেকে শুরু করে সব পেশার লোকজন দলীয়ভাবে ক্ষমতাসীনদের অঙ্গুলি হেলনে চলে থাকেন। তারা সরকারকেও জিম্মি করে ফেলেন। সঙ্গত কারণেই সরকার জিরো টলারেন্সের কথা বলেও সেটা কার্যকর করার লক্ষ্যে কিছুই করতে পারে না। ফলে দুর্নীতিবাজ ধরা হয়- কিন্তু দ্রুত তাদের জামিন হয়ে যায়। রিমান্ড হয় লোক দেখানো, শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার বাহানা তুলে জামাই আদরে হাসপাতালে থাকেন।
কারা কর্তৃপক্ষ অসহায়। তারা কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না। এখানেও পয়সার খেলা, ‘সেবা’ কিনতে হয়। এসব ওপেন সিক্রেট কথা লিখে বলে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রব তুলেও লাভ হয় না। কারণ কার টিকিটি স্পর্শ করবেন? সবাই যে, সরকারি লোক, সরকারি দলের মানুষ।
কারাগার প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন দুটি নগদ তথ্য দেয়া যায়। সম্প্রতি হলমার্ক খ্যাত আসামি কারাগারে স্ত্রীর সঙ্গ নিয়েছেন, এটা কারা কর্তৃপক্ষের সম্মতি ছাড়া কিভাবে সম্ভব? ছয়-সাত মাস আগে কাসিমপুর কারাগার থেকে দাগি আসামি পালিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। এখন তার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এর মাজেজা জানেন না? প্রতিপক্ষকে মাঠে ময়দানে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয়। এর ফলে জনগণকে সাথে নিয়ে কিছু করবেন সেটাও দুরাশা। কারণ সরকারি দল ও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা বাধা হয়ে দাঁড়ান। তাই বেড়ায় ক্ষেত খায়- এ অবস্থায় সেবা খাত মুখ থুবড়ে না পড়লেও লোপাটতন্ত্রের দৌরাত্ম্য কে ঠেকাবে? সেবা খাত নিয়ে লিখতে গিয়ে দীর্ঘ গৌর চন্দ্রিকার পর যা কিছু আলোকপাত করেছি তার চেয়ে ইঙ্গিতধর্মী কথা বেশি বলেছি। পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে দু-একটি কেসহিস্ট্রি তুলে ধরলে মন্দ হয় না।
ক. একজন সরকারি কর্মকর্তা পেনশন বিভাগে কাজ করতেন। মাত্র দুই বছরের মাথায় তিনিও পেনশন পাওয়ার তালিকায় এসে গেলেন। এরপর তিনি ধরনা দিলেন একই বিভাগে। কর্মকর্তা পাল্টে গেছেন। তিনিও একই আচরণ করলেন। তাকে পিয়ন থেকে কর্মকর্তা পর্যন্ত সবাইকে উপরি দিতে হলো, সহজ কথায় তিনি যে অপকর্ম করে পেনশনভোগীদের ভোগান্তির কারণ হয়েছিলেন, একইভাবে তাকেও সেই ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হলো, অর্থাৎ যে ঘুষের প্রচলনে তিনি জড়িত দীর্ঘদিন, এর ভোগান্তির শিকার তিনিও হলেন। খ. আরেকজন সৎ ও নিষ্ঠাবান প্রকৌশলীকে জানি। তিনি সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পর প্রটোকল অনুযায়ী একটি গাড়ি পান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে গাড়ি বরাদ্দ দিয়ে বলে দিলেন কোন গাড়িটা তাকে দিতে হবে। দ্রুত ড্রাইভার দিয়ে তার নিয়মিত অফিস করার সুযোগ করে দিতে হবে। অথচ তাকে গাড়ি দেয়া হলো যেটি দেয়ার কথা সেটি নয়, অন্য একটি। অত্যন্ত দুর্বল গাড়ি দিয়ে ড্রাইভারের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিলেন। দুর্ভাগ্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অবসরে যাওয়ার সময় হলো, অধস্থন কর্মকর্তারা যারা তার সাথে একত্রে কাজ করেছেন তারা যথারীতি সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বিদায় জানাতে গেলেন। যথারীতি অনেক কর্মকর্তার ভিড়ে আলোচ্য প্রকৌশলী এক পর্যায়ে সোফায় বসে থাকা কর্মকর্তাকে দেখে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, তোমার গাড়ি বুঝে পেয়েছ! ভদ্রলোক জবাব দিলেন হ্যাঁ, পেয়েছি। দ্বিতীয় প্রশ্ন, যেটা বলে দিয়েছিলাম সেটি পেয়েছ তো? ভদ্রলোকের জবাব, না। অন্য একটা আমাকে দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে ঊর্ধ্বতন, বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে আসা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডাক দিলেন। তিনি এসে হাজির। জিজ্ঞেস করলেন ওকে গাড়ি দিয়েছেন? জবাব, দিলেন যেটি আপনি বলেছিলেন সেটি দিতে পারিনি। কারণ সেটি অন্য একজন অফিসারও পেতে আবদার করেছেন। বাধ্য হয়ে তার আবদার রক্ষা করেছি। কিসের বিনিময়ে এ গাড়ি অন্য কর্মকর্তা কেন পেলেন, সেটা বুঝতে পেরে ভদ্র লোক লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে বললেন, স্যার আপনি চিন্তা করবেন না, যেটি বলেছিলেন সেটিই আজই তাকে দিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছি। ঠিকই নির্দেশিত গাড়ি বুঝিয়ে দিলেন। এবার ড্রাইভার প্রাপ্তির বিষয়টি সম্পর্কে বলে দিলেন- তোমার তকদির খারাপ। চাপ দেয়ার আর কোনো লোক রইল না। তবুও আমি বলে যাব যেন দ্রুত তোমার ড্রাইভারের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। আমার জানা মতে, এখনো তিনি ড্রাইভার পাননি। কবে পাবেন, সেটা তার ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর উপায় রইল না।
দুটি কেসহিস্ট্রি তুলে ধরেছি সেবার মান কত টাকায় বিক্রি হয় সেটা বোঝাবার জন্য। তাও প্রতীকী ভাষায়। এই লেখা শেষ করার প্রয়োজনে উপসংহারে শুধু বলব, রাজনীতিকে বণিকতন্ত্রের হাত থেকে মুক্ত করুন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তুলুন। রাজনীতিকে জনসেবার জন্য উন্মুক্ত করুন। রাজনীতি যদি পয়সার খেলার জায়গা হয় তাহলে রাজনীতির সংজ্ঞা পাল্টে ফেলুন। সংসদ, সদস্য পদ কেনাবেচা বন্ধ করুন। স্থানীয় নির্বাচনকে দলীয় প্রতীকমুক্ত করুন। প্রকৃত অর্থে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করুন। প্রধানমন্ত্রী মানে সরকার নন, তিনি সরকারের প্রধান নির্বাহী, দলীয় পরিচয় মুখ্য না হয়ে প্রজাতন্ত্রের সেবক হওয়ার মতো ব্যবস্থা করুন। নয়তো নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। কারণ রাজনীতির সাথে অর্থ বিত্ত ক্ষমতা জড়িয়ে থাকলে দল একসময় আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। সরকার ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে সেটা বুঝবার জন্য জোটভুক্ত লোক যাদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন তারা গদি থেকে সরে যাওয়ার পর অনেক তিক্ত সত্য উদ্ভাবন করেছেন। সর্বশেষ, নোয়াখালীর মির্জা কাদের ভেতরের আসল সত্যটা বলে দিলেন। তিনি কার ছোট ভাই ও আওয়ামী লীগের কী, সেটা না হয় উহ্যই থাকুক। সে ক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িয়ে যাবেন। এক সময় সরকার, দল, দেশ ও জাতিকে নতুন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। অতএব সময় থাকতেই সতর্ক হন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রকৃতভাবে আনুগত্যশীলতা প্রদর্শন করুন। নয়তো আমলনামা বাম হাতে পাবেন। শেষ পর্যন্ত জনগণ কিন্তু অসহায় দর্শক হয়ে থাকবে। দ্রুত বাস্তবতা বুঝে করণীয় নির্ধারণ না করলে শেষ রক্ষা হবে না। বিরোধী দল লাগবে না, প্রকৃতির প্রতিশোধ কোনো শাসক এড়াতে পারে না। জনগণ তখন দর্শক হবে না, প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে উঠবে।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন