ইরান নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব সময় উৎসাহ প্রদর্শন করে। মাঝে মধ্যে অতি উৎসাহ প্রদর্শন করতে দেখা যায়। ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। আন্তর্জাতিক মিডিয়াও এক সুরে কথা বলছে না। তাই হরেক বিশ্লেষণের মধ্য থেকে আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষত পাশ্চাত্যের প্রতিনিধিত্বশীল বিশ্লেষণটা সামনে রাখা যায়। এক সুরে না বললেও আন্তর্জাতিক মহল মনে করে- “ইরানের সাম্প্রতিক প্রতিবাদ আন্দোলনের অসাধারণ দিকটা হলো, এই আন্দোলন যারা শুরু করেছিলেন, তা সম্ভবত তাদের বিরুদ্ধেই গেল। ইরানের অতিরক্ষণশীল ধর্মীয় নেতারা ভেবেছিলেন, দেশটির রাজধানীতে অর্থনীতি নিয়ে মানুষের বিক্ষোভ উসকে দিয়ে তারা মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কর্তৃত্ব খাটো করবেন। কিন্তু ব্যাপারটি যদি সেটাই হয়, তাহলে বলতে হয়, বিদ্যমান ব্যবস্থা নিয়ে ইরানের মানুষের ক্ষোভটা ঠিক কোন পর্যায়ের, সেটা তারা বুঝতে পারেননি, বিশেষ করে সেখানে তাদের ভূমিকা কী।
প্রতিবাদ আন্দোলন যত বড়ই হোক না কেন, তাতে সরকারের পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী খুবই শক্তিশালী, বিদ্যমান ব্যবস্থায় তাদের অংশীদারিত্বও কম নয়। তারা ইরানের অর্থনীতির বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে।
এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের নেতা নেই, নেই পরিষ্কার উদ্দেশ্য। পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের যতই উৎসাহ দিক না কেন, এটা পরিষ্কার যে, আর যা-ই ঘটুক না কেন, ইসলামপন্থীরা ক্ষমতার ভিত্তি ধরে রাখবে এবং নিরাপত্তা কার্যক্রমের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ করবে।
উদাহরণস্বরূপ এটাও হতে পারে যে, রুহানি হয়তো শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় বা জোরপূর্বক পদত্যাগ করবেন। কিন্তু প্রতিবাদকারীদের কাছে এটা তেমন একটা সফলতা হিসেবে বিবেচ্য হবে না। সর্বোপরি রুহানি সম্ভবত একজন মধ্যপন্থী প্রশাসক হিসেবে পরিচিত।
রুহানি পদত্যাগ করুন আর না-ই করুন, এটা এখন পরিষ্কার যে, এই পরিস্থিতি চিরকাল চলতে পারে না। সম্ভবত খুব বেশি দিন তা চলবেও না। ইরানিদের বলা হয়েছিল, ২০১৫ সালে যে পারমাণবিক চুক্তি করা হয়েছিল, সেটা তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে বের করে আনবে। কিন্তু ধারাবাহিক অনেক কিছু ঘটে গেল, তাদের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং তরুণদের বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশ। বলা বাহুল্য, বৈশ্বিক দুর্নীতির সূচকে ইরানের স্থান নিচের দিকে।
রুহানি এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ইরানে সংস্কার শুরু করেননি বা তা করতে অপারগ। কিন্তু এই প্রতিবাদের মাঝে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উত্তরণে তিনি আগের চেয়ে বেশি উৎসাহী। তিনি যদি ব্যর্থ হন, তাহলে আরো শক্তিশালী নেতৃত্বে ও পরিষ্কার লক্ষ্যে ইরানে দীর্ঘকাল প্রতিবাদ হতে পারে।
ইরানের অর্থনৈতিক সংস্কারের আগে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, দেশটির সম্প্রসারণশীল পররাষ্ট্রনীতি অযৌক্তিকভাবে ব্যয়বহুল। ইয়েমেনে প্রক্সি যুদ্ধ চালানো, লেবাননে রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী তৈরি এবং সিরিয়া ও ইরাকে আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে বছরে শত শত কোটি ডলার খরচ হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন।
ইরানের এই সমস্যাজনক পররাষ্ট্রনীতি অব্যবস্থাপনার ফসল নয়, এর পেছনে দুটি ধারণা আছে। প্রথমত, ইরানের নেতারা এ ব্যাপারে প্রত্যয়ী যে বৈশ্বিক ভূরাজনীতির খেলায় একজন ঠিক ততটাই জেতে, আরেকজন ঠিক যতটা হারে; দ্বিতীয়ত ইরানের নেতারা বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর শিয়া মুলমানদের একত্র করাটা তাদের সৃষ্টিকর্তা-প্রদত্ত অধিকার। এর ফল হলো প্রতিবেশীর সফলতা হুমকি হিসেবে দেখে। এমনকি তারা যুদ্ধ বাধাতেও প্রস্তুত।
তা ছাড়া গত কয়েক দশকে দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে যে অগ্রগামী অবস্থান অর্জন করেছে, সেটা তারা ছাড়তে রাজি হবে না।”
এসব মন্তব্য যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিও ফ্রে হুন এর। তার সব অভিমতের সাথে একমত হওয়ার দায় নেই কারো। তবে পশ্চিমা শক্তি ইরানকে এই মুহূর্তে কিভাবে দেখছে, তা বোঝার জন্য এ মন্তব্য বিবেচনার দাবি রাখে। আমরা ইরান সম্পর্কে আলোচনার শুরুতেই আন্তর্জাতিক মহলের ধারণাটা তুলে ধরলাম। এটা ঠিক, আন্তর্জাতিক মহল সব সময় ইরানের প্রযুক্তির ভেতরও রক্ষণশীলতা দেখে। বাস্তবে ইরান আদর্শিক ভাবনায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। তাই ইরান শুধু পররাষ্ট্রনীতিনির্ভর রাষ্ট্র নয়। তবে এ বিবেচনা মাথায় রেখেই বলা যায়, ইরান সম্ভবত অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে আরো একবার দক্ষতা দেখাতে পেরেছে। বিপ্লবের পর ইরান অনেকবার সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। যেমন নাশকতা, যুদ্ধ চাপানো, অবরোধ, গোয়েন্দা তৎপরতা; কিন্তু এর নেতৃত্বের আদর্শিক অবস্থানের দৃঢ়তা ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতাই শেষ পর্যন্ত সুফল এনে দিয়েছে। ইরানি জনগণ তাদের নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারায়নি।
পারস্য সভ্যতার ঐতিহ্যবাহী এ দেশটি বিগত শতকের শেষ দু’দশক থেকে রাজতন্ত্রের বদলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র। এটি ইরানি জনগণের বিপ্লবের পথ ধরে গৌরবময় অর্জন। এর নেতৃত্বের কাঠামো অনেকটা ব্যতিক্রম। আলেমদের অভিভাবকত্ব ইরানি জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিয়েছে। তাই যতবারই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যায় পড়েছে, কিংবা আন্তর্জাতিক চাপ এসেছে, ততবারই ‘রাহবার’ নেপথ্যে থেকে ভূমিকা পালন করেছেন। জনগণ সেটাই মেনে নিয়েছে। ইরানি জনগণের আদর্শিক আনুগত্যের জায়গাটা এখনো অটুট রয়েছে। বোধ করি, এবারের কথিত আন্দোলন তাই নেতৃত্ব পায়নি। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি।
মার্কিন-ইসরাইল নীতির বিরুদ্ধে ইরানের ভূমিকা পূর্বাপর স্পষ্ট। ইরানের আরবনীতিও উম্মাহপ্রীতির মতো বিঘোষিত। তাই ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। জনগণও জানে, ইরানের শত্রু ও মিত্র কারা। জনগণকে শত্রু বন্ধু চিনিয়ে দেয়া ইরানের নেতৃত্বের বড় একটা কৃতিত্ব। তাই কিছু নীতিগত বিরোধ নিয়েও ইরানের জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং আলেম সমাজ একই সমতলে অবস্থান করে এক ধরনের ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে। এবার যে আন্দোলন হলো, তার সাথে কিছু লোকের দ্রোহ থাকতে পারে। একটি খণ্ডিত অংশ হিসেবে তারুণ্যের শেকল ভাঙার অনৈতিক উচ্ছ্বাসও থাকতে পারে। কিন্তু জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল না। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে হোক আর অপ্রকাশ্যেই হোক, ইরানের নেতৃত্ব ও জনগণ একাট্টা হয়ে মোকাবেলা করে। ইসরাইলি হুমকি মোকাবেলায়ও ইরানের জনগণ কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে না।
এটা স্বীকার করা উচিত, এবার সত্যি সত্যিই ইরানি জনগণের একটা অংশ পণ্যমূল্যসহ কিছু অভ্যন্তরীণ কারণে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে যাচ্ছিল। নেতৃত্বহীন এই ক্ষোভ দমনের মুখে পড়েছে- এটা ঠিক, এর সাথে যখন আমেরিকা ও ইহুদি লবির উসকানি স্পষ্ট হলো, তখনই জনগণ প্রবোধ মানল এবং পাশ্চাত্য প্রচারণায় দিকভ্রান্ত হলো না। তাই যারা কিছু সঙ্কট চিহ্নিত করে আন্দোলনে নেমেছিল, তারা সরাসরি চিহ্নিত হয়েছে ‘আমেরিকা-ইসরাইলের ক্রীড়নক’। যারা চেয়েছিল একটি প্রতিবাদ হোক, তারাও উসকানির কারণে মত পাল্টিয়েছে। ইরানি জনগণ কয়েকটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। যেমন- আলেমদের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব; রাজনৈতিক নেতৃত্বের সে ব্যাপারে শর্তহীন আনুগত্য; সংবিধানের অনুসরণ; নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা; ইসলামকে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা; প্রাচ্যও নয় পাশ্চাত্যও নয়- এ নীতিতে পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণ। অবশ্য আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইরান নিজেকে অনেক বেশি জড়িয়ে ফেলেছে। তবে এর কিছু ইস্যু আরোপিত- ইরানের না জড়িয়ে উপায় ছিল না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকির পরও ইরানের পরমাণু চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে সর্বশেষ ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেন অবস্থান নিলো। এর আগে রাশিয়া তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। চীনের ভূমিকাও বৈরী নয়। তাই পড়শিদের নিয়ে ভাবতে গিয়ে ইরান তার রাষ্ট্রীয় নীতি ও উম্মাহর স্বার্থ এক করে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। জেরুসালেম প্রশ্নে ইরানের ভূমিকা নতুন নয়, ইহুদিবাদের হুমকি ও আগ্রাসন ঠেকিয়েই ইরান নিজের স্বকীয় অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চায়। প্রায় অর্ধশতাব্দী ইরান একই ভূমিকা ও অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সিরিয়ায় আইএস ও ইরাকে কুর্দি ইস্যুতে ইরানের ভূমিকা তুরস্কের মতোই স্পষ্ট ছিল। এর সুফলও ইরান পেয়েছে। আবার প্রক্সিযুদ্ধের বদনামও মাথায় নিতে হয়েছে। তুরস্কের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। কাতার ইস্যুতে ইরানের ভূমিকা যা প্রত্যাশিত ছিল তাই হয়েছে। এতে সৌদি আরবের সাথে দূরত্ব নতুন করে বাড়েনি, বরং উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় ইরানের দৃঢ়তা প্রমাণিত হয়েছে।
আরব দেশগুলোর নেতৃত্ব নিয়ে সৌদি আরবের অবস্থান বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। তার পরও ইরান দাবি করে, তারা সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ বিষয়-আশয় এবং সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে কোনো প্রকার উসকানিতে যায়নি। সৌদি আরবে একজন শিয়া ধর্মীয় নেতা হত্যার প্রতিবাদ করা ইরানিরা দায়িত্ব ভেবেছে। ইরানের ব্যাপারে আরবদের দুটো ধর্মীয় অভিযোগ ছিল এবং আছে। প্রথমত, ইরান শিয়া মতবাদ প্রচার করতে চায়; দ্বিতীয়ত, বিপ্লব রফতানি করতে মরিয়া। হ্যাঁ, শিয়া অধ্যুষিত জনপদে- যেমন ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়ায় ইরান সব সময় সক্রিয় থাকে। এটা হাজার বছরের মতভেদ এবং আকিদাগত বিষয়। এর নিষ্পত্তি না করেও পরস্পর উম্মাহর সদস্য হতে কেউ অনাগ্রহী নন- এমন অভিযোগ কারো বিরুদ্ধে নেই। তা ছাড়া ইরান সুন্নি অধ্যুষিত জনপদে জোর খাটাতে চেয়েছে- এমনটি খুব একটা দেখা যায় না। বিপ্লব রফতানির অসাধুতাও ইরান দেখায়নি।
ইয়েমেন নিয়ে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। সম্ভবত ইরান ও সৌদি আরব ইয়েমেন সমস্যার গভীরতা আঁচ করে বাস্তবতাকেই শেষপর্যন্ত প্রাধান্য দিতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের জানা মতে, রাষ্ট্রাচার রক্ষায় ইরান আরব দেশগুলোর তুলনায় অগ্রসর অবস্থানে রয়েছে। নিজের জনগণের স্বার্থের বোঝাপড়ায়ও ইরান আরবদের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ক্ষেত্রেও ইরানের অবস্থান মুসলিম বিশ্বের মধ্যে উল্লেখ করার মতো।
সৌদি রাজপরিবারে যা ঘটল তা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব না সংস্কারের প্রতিক্রিয়া, সেটা সৌদি জনগণ জানে না। মুসলিম বিশ্বও ভালোভাবে ওয়াকিবহাল নয়। কিন্তু ইরানের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট কী সেটা বহির্বিশ্বও জানে, ইরানি জনগণও জানে। এ ছাড়া ইরানিরা আরো জানে মার্কিন ইহুদি লবির উসকানি, যা বিপ্লবের সময় থেকে এখন পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। তাই ইরান যতটা খোলামেলা, আরব জগৎ ততটা নয়। তা ছাড়া আরবদের পররাষ্ট্রনীতি বরাবরই মার্কিনঘেঁষা ছিল ও আছে। পাশ্চাত্যের অনুসরণ ছাড়া বাকি সব ব্যাপারে আরবদের রক্ষণশীলতা সর্বজনস্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে ইরান পাশ্চাত্যকে শুধু এড়িয়ে যাচ্ছে না, নিজস্বতা ধরে রেখে নিজেদের সভ্যতা সংস্কৃতির উৎকর্ষ বিধানে তৎপর। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে তারা আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে কাশ্মির ইস্যুটি গুরুত্ব পায়নি। এটা ছাড়া তাদের পররাষ্ট্রনীতি উম্মাহর মূল চেতনাকে ধারণ করেই অনুশীলিত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্বাসগত নয় কিন্তু আকিদাগত বিষয়টি তাদের নিজস্বতার অংশ।
ইরানকে বন্ধুহীন করার জন্য মার্কিন ও ইসরাইল একপায়ে খাড়া। সুযোগ পেলেই ইরানের ওপর অবরোধ আরোপ করছে। ইহুদি লবি প্রমাণ করেছে, তারা ইরান নয়, মুসলিমবিদ্বেষ লালন করে। তাই ইরান যখন উম্মাহর স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নেয় তখন ইহুদি লবিটি ইরানকে কোণঠাসা করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ইরান নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে পথ চলার চেষ্টা করে। সে ক্ষেত্রে শিয়াপ্রীতি অগ্রাধিকার পায় বলেই সুন্নি বিশ্বের অনুযোগ ইরান খণ্ডাতে চায় না, বরং আগ্রাসনবিরোধী অবস্থান দৃঢ় করে প্রমাণ করে- তারা উম্মাহর সামগ্রিক স্বার্থ রক্ষায় আপসহীন থাকতে সচেষ্ট। যেমন হিজবুল্লাহ ও হামাস ইস্যুতে কিংবা কাতার প্রশ্নে অথবা জেরুসালেম অ্যাজেন্ডায় ইরানের ভূমিকা উম্মাহর স্বার্থকে সমুন্নত রাখার পক্ষে- এটাই প্রমাণিত হয়েছে। মিসর ও কাতার ইস্যুতেও ইরানের ভূমিকা ভারসাম্যপূর্ণ। উপসাগরীয় দেশগুলোর ইরানভীতি ছিল আঞ্চলিক রাজনীতির টানাপড়েনের কারণে। তবে কাতার, ওমানসহ অন্য দেশগুলোর সাথে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা চুক্তি সেই ভীতি ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে।
তা ছাড়া ইরান, তুরস্ক ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত বন্ধনটি ইরান কখনো শিথিল করেনি। তুরস্কের সাথে বাড়তি সম্পর্ক ও বোঝাপড়া এ বার্তাই দিচ্ছে, উম্মাহর স্বার্থে ঐতিহ্যবাহী অটোমান সভ্যতার উত্তরাধিকারী তুরস্ক এবং পারস্য ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী ইরান যার যার অবস্থানে থেকেও একসাথে কাজ করবে। ইরানের ইউরোপ নীতিও ভারসাম্যপূর্ণ। তাই অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মোকাবেলায় সফল হলে ইরান কখনো বন্ধুহীন হবে না। এটাও স্মরণ রাখার বিষয় যে, দ্রোহ বা আন্দোলন দমন শাহ’র ঐতিহ্য, ইসলামী ইরানকে বাস্তবতা বুঝে জনগণের সুখ দুঃখ মেনেই এগোতে হবে। জনগণের নাড়ির স্পন্দন বোঝা এবং ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা সরকারের দায়িত্ব। সংস্কারের দাবি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ, প্রগতির দাবি। তা ছাড়া, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া।
আদর্শিক বাগডোর অতিক্রম করতে না দিয়ে কল্যাণ রাষ্ট্রের বিকাশ ঘটানোই ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত। তা ছাড়া, তিউনিশিয়ার অভিজ্ঞতা তো টাটকাই থাকার কথা।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন