নেপালে রাজনৈতিক ঝড় ও চীন-ভারতের প্রভাব
06 March 2024, Wednesday
নেপালের তিনটি রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেস (এনসি), মাওবাদী কেন্দ্র এবং ইউএমএল-এর মধ্যে রাজনৈতিক ত্রিভুজ প্রেমে নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। এই অধ্যায়ে মাওবাদী প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার অংশীদার নেপালি কংগ্রেসকে পরিত্যাগ করে বছরাধিক কাল আগে যার সাথে জোট করে সরকার গঠনের পরও পরিত্যাগ করেছিলেন সেই সিপিএন ইউএমএল-এর সাথে আবার মিলিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক ব্রেক-আপ-মেক-আপ রাজনৈতিক কাহিনীতে, মাওবাদী ও ইউএমএল সোমবার ২০১৭ সালের পর তৃতীয়বারের মতো একটি নতুন বাম-নেতৃত্বাধীন জোট গঠনের জন্য হাত মিলিয়েছে। এর মধ্যে পুরোনো মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নতুন কোয়ালিশনের তিন দল থেকে তিন মন্ত্রী নিয়ে নতুন সরকার গঠনের পথে যাত্রা শুরু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহলের মাওবাদী কেন্দ্র ও ইউএমএল চেয়ারম্যান কে পি অলির নতুন মিলনে এনসি-র শের বাহাদুর দেউবা এখন মাধব নেপালের সিপিএন-ইউনিফায়েড সোশ্যালিস্টের সাথে বিরোধী দলে চলে গেছেন। দাহাল ও অলি তাদের ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করেছেন যাতে ২০২৭ সালের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি করা হবে। ইউএমএল ছাড়াও, নতুন জোটে রবি লামিছনের রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি (আরএসপি) এবং উপেন্দ্র যাদবের জনতা সমাজবাদী পার্টি (জেএসপি) অন্তর্ভুক্ত। সিকে রাউতের জনমত পার্টিও সরকারে যোগ দিতে পারে।
নতুন জোট শুধু দেশের রাজনীতিতেই প্রভাব ফেলবে না, বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সাথে নেপালের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। চীন সব সময় চেয়েছে নেপালের বাম দলগুলো একত্রে থাকুক। আর মার্কিন-ভারত ব্লক এর বিরোধিতা করেছে। মাওবাদী-এনসির সদ্যবিদায়ী জোট ভারতের স্বার্থের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হতো।
এনসি মাওবাদী টানাপড়েন
এনসি ও মাওবাদীদের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে টানাপড়েন চলে এলেও গত সপ্তাহে নেপাল কংগ্রেসের সাধারণ অধিবেশনে ক্ষুব্ধ হয়ে দলের সদস্যরা এনসিকে একা যেতে আহ্বান জানানোর পর বিষয়টি দ্রুত পরিণতির দিকে এগুতে থাকে। অনেক কংগ্রেস প্রতিনিধি মনে করেন যে, বৃহত্তম দল হিসেবে ৩ নং দল মাওবাদীদের মাথায় উঠতে দেয়া উচিত নয়। এরপর যা হওয়ার তাই হয়েছে। এখন সংসদে সবচেয়ে বড় দল নেপালি কংগ্রেস ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ে বিরোধী দলে।
ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও মাওবাদী কেন্দ্রের মধ্যে অবিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। প্রধানমন্ত্রী দাহাল কংগ্রেসের কয়েকজন সিনিয়র নেতার কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, কংগ্রেস সভাপতি শের বাহাদুর দেউবা সরকারে ভালো পারফরম্যান্স করতে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও কিছু মন্ত্রীকে প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনায় সহযোগিতা করছেন না।
ঝড়ের শুরুটা হয় উচ্চ পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয় নিয়ে। মাওবাদী কেন্দ্র ২৮ ফেব্রুয়ারি তার স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষ করে জাতীয় পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাওবাদী কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী দাহাল এর আগে নেপালি কংগ্রেসকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তারা উচ্চকক্ষ জাতীয় পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের সময় কংগ্রেসকে সমর্থন করবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এর একদিন পরে ২৯ ফেব্রুয়ারি দাহাল বলেন যে, আমাদের স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগই জাতীয় পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দল থেকে প্রার্থী দেয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। সেই সময় থেকে ঘটনাবলি নতুন মোড় নেয়।
জাতীয় পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্বাচন ১২ মার্চ নির্ধারিত হয়েছে এবং এই পদের জন্য প্রার্থিতা জমা দেয়ার দিন ৭ মার্চ নির্ধারিত। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর মাওবাদী কেন্দ্র জাতীয় পরিষদে বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। জাতীয় পরিষদের চেয়ারম্যানও সাংবিধানিক পরিষদের সদস্য যা সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর জন্য পদাধিকারীদের সুপারিশ করে। বর্তমানে, মাওবাদী কেন্দ্রের ১৭টি, নেপালি কংগ্রেসের ১৬টি, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিএন-ইউএমএল) ১৯টি, সিপিএন (ইউনিফায়েড সোশ্যালিস্ট) আটটি, জনতা সমাজবাদী পার্টির তিনটি আসন রয়েছে। আসন এবং জাতীয় জনমোর্চা ও লোকতান্ত্রিক সমাজবাদী পার্টির জাতীয় পরিষদে একটি করে আসন রয়েছে।
রোববার জাতীয় পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে গনেশ প্রসাদ তিমিলসিনার ছয় বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বর্তমানে উচ্চকক্ষের ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য নেই। মাওবাদী কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত ঊর্মিলা আরিয়াল জাতীয় পরিষদের ভাইস-চেয়ার। আরিয়াল পদত্যাগ করার পর ইউএমএল ভাইস-চেয়ারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী বিধানসভার সভাপতি ও ভাইস-চেয়ারম্যান ভিন্ন দলের হতে হবে।
জাতীয় পরিষদ দেশের ‘স্থায়ী চেম্বার’। একটি নতুন ব্যাচ প্রতি দুই বছরে তার ৫৯ সদস্যের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিস্থাপন করে। কোনো নিম্নকক্ষ না থাকা সত্ত্বেও বিধানসভা বহাল থাকে। উচ্চকক্ষ হল বিশেষজ্ঞদের একটি চেম্বার, যাতে তারা তাদের সম্মিলিত জ্ঞানকে দেশের উন্নয়ন এবং এর স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করতে পারে। উচ্চকক্ষ ৫৯টি আসনের মধ্যে ৫৬টি নির্বাচিত হয়। প্রতিটি প্রদেশ অন্তত তিনজন মহিলা, একজন দলিত এবং প্রতিবন্ধী বা সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে একজন প্রতিনিধিসহ আটজন প্রতিনিধি নির্বাচন করে।
আবার বাম জোট
নতুন মেরুকরণে বাম জোট হবে চারটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে- প্রধানমন্ত্রী দাহলের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী কেন্দ্র), কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-ইউনিফায়েড মার্ক্সবাদী লেনিনবাদী (সিপিএন-ইউএমএল), রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি এবং জনতা সমাজবাদী পার্টি। এটি নিশ্চিত যে, দাহাল প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং তিনি নতুন সরকারে জোটভুক্ত দলগুলোর সুপারিশকৃত মন্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রস্তুত।
গত সোমবার রাষ্ট্রপতি রামচন্দ পাউডেল সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র) থেকে হিট বাহাদুর তামাং, সিপিএন-ইউএমএল থেকে পদম গিরি এবং রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির ডিপি আরিয়াল পোর্টফোলিও ছাড়াই মন্ত্রী হিসেবে শপথ পাঠ করান। গিরি স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী, তামাং সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী এবং আরিয়াল সাবেক শ্রম, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রী।
নেপালি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্ব প্রকাশ শর্মা বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই আমাদের সাথে জোট ভেঙেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর একজন সহযোগী দাহালকে সহযোগিতা না করার জন্য নেপালি কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন। দাহালের প্রেস সেক্রেটারি গোবিন্দ আচার্য উল্লেখ করেন, প্রধানত নীতিগত পার্থক্য ছিল যা প্রধানমন্ত্রীর জন্য নেপালি কংগ্রেসের সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন করে তুলেছিল। তাই তিনি ইউএমএল এবং আরএসপিকে নতুন জোটের অংশীদার হিসেবে আনছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জোটের শরিকদের পরিবর্তনের পর প্রধানমন্ত্রীকে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে আস্থা ভোট নিতে হবে, এতে তিনি জিতবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা ঘোষণা করা হতে পারে।
নতুন সরকারি জোটের দলগুলো সরকার গঠন, বছরের পর বছর ধরে চলা শান্তিপ্রক্রিয়ার সমাপ্তি এবং ফেডারেলিজমের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত চুক্তিতে পৌঁছেছে। মাওবাদী কেন্দ্রের চেয়ার ও প্রধানমন্ত্রী দাহাল, ইউএমএল চেয়ার কেপি শর্মা অলি, রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির চেয়ার রবি লামিছনে ও জনতা সমাজবাদী পার্টির প্রধান উপেন্দ্র যাদবের অধীনে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায়বিচারের বিষয়টি ঐকমত্যের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে।
তারা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে মন্ত্রী পদ ভাগাভাগি করতে এবং তিন স্তরের ফেডারেল ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নেও সম্মত হয়েছে।
ভাঙা গড়ার নায়ক
প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালকে নেপালি রাজনীতির ভাঙা গড়ার অন্যতম নায়ক হিসেবে দেখা হয়। তিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সিপিএন-ইউএমএল-এর সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, জোট ভেঙেছিলেন এবং মাত্র কয়েক মাস পরে নেপালি কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। দাহাল ১৯৯৬ সাল থেকে এক দশকব্যাপী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন যাতে ১৭ হাজার নেপালি নিহত হয়। পরে তিনি জাতিজঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে ২০০৬ সালের শান্তি চুক্তির অধীনে মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দেন।
দাহাল তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কিন্তু তার আগের পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করেননি। তার পূর্বসূরি শের বাহাদুর দেউবার এনসি নেতৃত্বাধীন পাঁচ-দলীয় জোট ভেঙে এবং কে পি অলির ইউএমএলের সমর্থনে দাহালকে ডিসেম্বর ২০২২-এ প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছিল। দুই মাস পরে, প্রধানমন্ত্রী এনসির সাথে আবার একত্রিত হন এবং নিজের, দেউবা ও সিপিএন-ইউনিফায়েড সোশ্যালিস্ট চেয়ার মাধব কুমার নেপালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্বের পাঁচ বছরের মেয়াদ তিনভাগে ভাগ করার চুক্তি করে নতুন জোট সরকার গঠন করেন।
নেপথ্যে বিদেশী হাত!
নেপালের রাজনীতিতে সব সময় দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনের প্রভাব বা সক্রিয়তা ছিল। একসময় এই প্রভাব ভারতের অনেকখানি একতরফা ছিল এখন চীনা প্রভাব নেপালি রাজনীতিতে প্রবল হয়ে উঠেছে। এই প্রভাবের একটি কারণ, নেপাল একটি ল্যান্ডলকড দেশ। এটি হিমালয় পাদদেশে অবস্থিত। এর উত্তরে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের সীমানা। এটি শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে এবং ভারতের সিকিম রাজ্য দিয়ে ভুটান থেকে বিচ্ছিন্ন।
নেপাল কখনোই উপনিবেশ ছিল না কিন্তু ইম্পেরিয়াল চীন ও ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে একটি বাফার রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করেছিল। ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে নেপালের গৃহযুদ্ধের ফলে ২০০৮ সালে একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে গৃহীত নেপালের সংবিধান, দেশটিকে সাতটি প্রদেশে বিভক্ত একটি ধর্মনিরপেক্ষ ফেডারেল সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হিসাবে নিশ্চিত করে।
নেপাল ও ভারত মানুষের অবাধ চলাচল, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও বৈবাহিক সম্পর্কের সাথে একটি খোলা সীমান্ত ভাগ করে। ভারত নেপালের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, যার ওপর নেপাল নির্ভর করে তেল ও গ্যাস এবং বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের পুরোটার জন্য। নেপালিরা ভারতে সম্পত্তির মালিক হতে পারে, অন্য দিকে ভারতীয়রা নেপালে বসবাস ও কাজ করতে স্বাধীন।
অন্য দিকে চীন ১ আগস্ট ১৯৫৫ ও ১৯৬০ সালে শান্তি ও মৈত্রী চুক্তিতে স্বাক্ষর করে; সেই থেকে সম্পর্কগুলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির ওপর ভিত্তি করে চলে এসেছে। চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষে নেপাল নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। এটি এক চীননীতির প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উভয় দেশের নাগরিকরা সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে এবং ভিসা ছাড়াই ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে। কোনো সীমান্ত বিরোধ বা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গুরুতর হস্তক্ষেপের অনুপস্থিতির কারণে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সাহায্যের কারণে নেপালিরা চীনকে ইতিবাচকভাবে দেখে। ভারতের আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধের সময় নেপালস সার্বিক সহায়তা পেয়েছে চীন থেকে। এতে চীনের প্রতি আনুকূল্য বেড়েছে। পরবর্তীকালে, চীন তৃতীয় দেশের বাণিজ্যের জন্য নেপালকে তার বন্দরগুলোতে প্রবেশাধিকার দেয় এবং নেপাল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে যোগ দেয়।
রাজতন্ত্র বিলোপের পর নেপালে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। নতুন সংবিধান কার্যকর করার পর নেপালে বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় ছিল চীনপন্থী হিসাবে পরিচিত দলগুলো। এনসি-মাওবাদী সরকারে দুই দেশের প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য ছিল। নতুন বাম সরকারে আবার চীনা প্রভাব বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি চীনকে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সঙ্কটে ফেলেছে। দেশটির রাখাইন-চিন-সাগাইন-কাচিন-শান অঞ্চলে বেইজিং বিশেষ প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এই প্রভাব বিস্তারে ভারতের রাখাইন-চিনের মধ্য দিয়ে তৈরি করা কালাদান প্রকল্প অকার্যকর হয়ে গেছে। এই প্রকল্পের জন্য ভারতের তৈরি করা সিটওয়ে বন্দরের ওপরও নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে দিল্লি। এই অবস্থায় চীন সমর্থিত ব্রাদারহুড জোট তথা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ভারত-আমেরিকা এক প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করে বাংলাদেশকে তাতে যুক্ত করতে চাইছে বলে গুজব রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের সার্বিক অবস্থা চীন ভারত দুই দেশের জন্য বেশ সংবেদনশীলতা তৈরি করেছে বলে মনে হচ্ছে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন