Image description

মাসুম খলিলী

 

চব্বিশের ছাত্র-জনতার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন এক সন্ধিক্ষণে এসে উপনীত হয়েছে বাংলাদেশ। এরকম জটিল পরিস্থিতি এর আগেও হয়েছে, তবে সরকার ও কর্তৃত্ববাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির বিচক্ষণতায় সেই সঙ্কট থেকে উত্তরণও সম্ভব হয়েছে। দেশ আবার টেকসই গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে অগ্রসর হয়েছে। এখন আবারো তেমন এক সঙ্কটময় পরিস্থিতি তীব্রভাবে সামনে এসেছে।

 

চলমান সঙ্কট একমুখী নয়, যার কয়েকটি ডাইমেনশন বা দিক রয়েছে। এর একটি হলো- বৈদেশিক সম্পর্ক খাতে বাংলাদেশ বৃহত্তম শক্তিগুলো, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ এবং চীন-রাশিয়ার সাথে সঙ্কটে ভারসাম্য কতটুকু কিভাবে রক্ষা করবে; বার্মা আইনের কৌশলগত চাওয়া-পাওয়ার সাথে কিভাবে মানিয়ে নেবে ঢাকা; এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের শুল্ক নির্ধারণের বিষয়টির নিষ্পত্তিই বা কী করে হবে।

 

দ্বিতীয় মৌলিক প্রশ্নটি রাজনৈতিক। পতিত কর্তৃত্ববাদী শক্তির গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পর মাঠের রাজনৈতিক শক্তি প্রধানত তিনটি। এর মধ্যে রয়েছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো। আর রয়েছে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপি।

 

ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তির অনুপস্থিতিতে এই তিন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে বৃহত্তর স্বার্থের ঐক্যের যে সূত্র ৫ আগস্ট চব্বিশের আগে ছিল তাতে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। শেষবার যখন এই ভাঙন অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে মুখোমুখি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, তখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভিভাবকতুল্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে অবস্থা পাল্টে যায়। লন্ডনে প্রফেসর ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক হয়। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যকর প্রস্তুতি শুরু হয় তখন থেকে। এর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সর্বদলীয় সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত্য সৃষ্টির উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ইতিবাচক অগ্রগতির মধ্যে পুরান ঢাকায় এক নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘিরে ফ্যাসিবাদবিরোধী দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে পরিস্থিতির আকস্মিক অবনতি ঘটে।

 

কেন রাজনৈতিক উত্তেজনা

 

পুরান ঢাকার হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি, বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভ, ন্যূনতম সৌজন্য বিধ্বংসী স্লোগান- এসব এখন দৃশ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতা। কিন্তু কেন এসব হচ্ছে? যারা এতে ইন্ধন দিচ্ছেন, তারা বাংলাদেশকে কোন গন্তব্যে নিয়ে যেতে চান- এগুলো মূল প্রশ্ন। সেই প্রসঙ্গ উপলব্ধি বা নিষ্পত্তি না হলে দৃশ্যমান নতুন নতুন তিক্ত বাস্তবতা তৈরি হবে, যেগুলো ক্রমে সমাধান অযোগ্য এক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে বাংলাদেশকে।

 

পতিত রাজনৈতিক শক্তিকে ফেরানোর একটি অপচেষ্টা গত এক বছরে আমরা বারবার দেখেছি। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গভীর ক্ষমতাবলয়ের তিন প্রধান শক্তি হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ-প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রপতি, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বা প্রধান উপদেষ্টা আর নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী জনমত ও রাজনৈতিক শক্তি। উপরোল্লিখিত তিন ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে বারবার ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে রাস্তায় সক্রিয় দেখা গেছে।

 

গভীর ক্ষমতাবলয়ের মধ্যে একটি শক্তি প্রতীকী হলেও সঙ্কট সন্ধিক্ষণে ওই শক্তি হয়ে উঠতে পারে মেইন ফ্যাক্টর। অন্য একটি প্রধান শক্তির আনুগত্য ৫ আগস্ট চব্বিশের কোন পক্ষে তা নিয়ে নানা সময় সংশয় সৃষ্টি হয়। ইনক্লুসিভ নির্বাচনের মোড়কে পতিত রাজনৈতিক শক্তিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা এবং পিলখানা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে পূর্ণ যতি টানার বক্তব্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে রহস্যজনকভাবে রাষ্ট্রপতির একক সিদ্ধান্তে জরুরি অবস্থা জারির প্রসঙ্গ এসে পড়ে আলোচনায়। বলা হয়, সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বা বাইরের যুদ্ধ সঙ্ঘাতে রাষ্ট্র জড়ালে রাষ্ট্রপতির এককভাবে জরুরি অবস্থা জারি করার সাংবিধানিক সুযোগ রয়েছে। কিছু সিরিয়াস ইউটিউবার (নবনীতা চৌধুরীর বয়ান) এ প্রশ্ন আলোচনায় নিয়ে আসায় সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়। যদি ধরে নেয়া হয়, রাষ্ট্রপতি সত্যি সত্যি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের আহ্বান বা সমর্থনে প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধ বা সমর্থন ছাড়া জরুরি অবস্থা জারি করলেন; আর এ ধরনের জরুরি অবস্থার মানে, প্রফেসর ইউনূস যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন সেটি শেষ হয়ে যাওয়া। স্বাভাবিকভাবে তেমন পরিস্থিতি অধ্যাপক ইউনূসের সরে দাঁড়ানোকে অনিবার্য করে তুলবে। প্রশ্ন হলো, কারা কেন ড. ইউনূসের সরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে?

 

অধ্যাপক ইউনূস যদি প্রধান উপদেষ্টা পদ থেকে সরে যান, তাহলে ওয়ান ইলেভেনের মতো আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হতে পারে জরুরি অবস্থার মধ্যে। সে সরকারে মুখ্য নিয়ন্ত্রক হবেন নিরাপত্তা নেতৃত্ব। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আগে যদি কোনো অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয় তাহলে প্রতিবেশীর সামরিক হস্তক্ষেপে পতিত সরকার ক্ষমতা বা কর্তৃত্বে ফিরে আসার আশঙ্কাও সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা ক্ষীণ হলেও সমূহ শঙ্কা হতে পারে নতুন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে তাতে অন্যতম রাজনৈতিক অংশীজন হবে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার ও বিচারপ্রক্রিয়া থেমে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এরপর কোনো নির্বাচনের প্রক্রিয়া যদি শুরুও হয় সেটি বেশ খানিকটা বিলম্বিত যেমন হতে পারে, তেমনিভাবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির একতরফা প্রভাব সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আর থাকবে না।

 

এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগে একবার গ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, যে পরিস্থিতিতে প্রফেসর ইউনূস সরে যেতে পারেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। সেটি ব্যর্র্থ হয় ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো আবার সম্মত অবস্থানের কাছাকাছি চলে এলে। সেই সম্মত অবস্থান ভেঙে দেয়ার চেষ্টা লন্ডন বৈঠকের পর আবার শুরু হয়। পুরান ঢাকার সোহাগ হত্যাকাণ্ডের নির্মমতা এবং এরপর দলগুলোর সঙ্কীর্ণ তাৎক্ষণিক স্বার্থ আদায়ের রাজনৈতিক কৌশল এক সর্বনাশা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল ‘তারেক তুই জবাব দে’, আর ‘গোলাম আযমের বাচ্চারা বাংলা ছাড়’ স্লোগান তারা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন যারা রাজনৈতিক বিরোধকে রাজপথের যুদ্ধে রূপ দিতে চান। এ সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ সর্বনাশা সঙ্ঘাতের রাশ টানতে না পারলে দু’পক্ষের সামনে যে পরিস্থিতি আসবে তাতে ক্ষমতার দরজা খোলার চাবি আর নিজেদের হাতে থাকবে না।

 

৫ আগস্ট ’২৪ পরবর্তী সরকারের অর্থ হলো ফ্যাসিবাদ-উত্তর নতুন পরিবর্তনের সরকার। নতুন আরেকটি সরকার হলে সেই সরকারের এজেন্ডা আর বৈষম্য বা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের এজেন্ডা থাকবে না। তখনকার অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সামনে চাপ প্রয়োগ করার মতো যেসব হাতিয়ার বিএনপি-জামায়াত বা এনসিপির সামনে এখন আছে, তা আর থাকবে না।

 

এমন হলে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়তে পারে বিএনপি। নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া এখন চলমান রয়েছে তার সফল সমাপ্তিতে দলটির ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন খুব কাছে অবস্থান করছে। এই স্বপ্ন দৃশ্যপটে আর থাকবে না। এর পরে অনুষ্ঠেয় আরেকটি কথিত অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে দলটি জনরায় পেতেও পারে, আবার না-ও পেতে পারে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এবং জন ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে পতিত রাজনৈতিক শক্তির বিশেষ প্রভাব থেকে যাওয়ায় এতটুকু অন্তত বলা যায় যে, একধরনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি হবে বিএনপির সামনে।

 

জামায়াত সাড়ে ১৫ বছরের চরম ফ্যাসিবাদী দমন-নীপিড়ন সত্যেও ফিনিক্স পাখির মতো প্রবলভাবে জেগে উঠেছে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের আগে ও পরে। সেই অর্জন এবং অনুকূল পরিস্থিতি জুলাই বিপ্লবের পর আরেক দফা ক্ষমতার পরিবর্তনে বহাল থাকার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। এ সময় দু’টি বৈরী রাজনৈতিক শক্তির মুখেও পড়তে হতে পারে জামায়াতকে। একটি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শক্তি, আরেকটি এক সময়ের মিত্র বিএনপির। আর আসন্ন নির্বাচনে ইসলামী শক্তির সাথে জোট করে জামায়াতের সমান্তরাল শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার যে সম্ভাবনা, তাও মেঘের আড়ালে চলে যেতে পারে।

 

যেকোনো পাল্টা পরিবর্তনের প্রধান শিকারে পরিণত হওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হবে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির জন্য। অকাতরে জীবন দিয়ে তারা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে বিদায় করেছেন। সে ফ্যাসিবাদ রাজনীতি বা ক্ষমতায় আবার প্রবলভাবে ফিরে এলে সঙ্গত কারণে জিঘাংসার প্রথম মুখোমুখি তাদের হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য ব্যক্তিরা যার যার অবস্থানে সরে যেতে পারেন; কিন্তু ছাত্রনেতাদের পক্ষে এমন করা হবে খুব কঠিন। এই পরিস্থিতির সুবিধাভোগী হবে শুধু একটি পক্ষ, সেটি পতিত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা; আর সবধরনের প্রশাসনে তাদের আমলে সুবিধাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও লুটেরা গোষ্ঠী।

 

বিদেশী শক্তিবলয়ের স্বার্থ সঙ্ঘাত

 

বাংলাদেশের সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি বড় উপাদান হলো বাইরের শক্তির স্বার্থের টানাপড়েন। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের সময় প্রতিবেশী ভারতের প্রবল আধিপত্য সৃষ্টি হয়েছিল। এ সময় রাষ্ট্রের নীতি ও ক্ষমতা চর্চার গভীরে তাকালে মনে হতো বাংলাদেশ স্বাধীন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে গোপন এক নিয়ন্ত্রক চেইন লক্ষ করা যেত এ সময়। এই চেইনের সাথে যুক্তরা দেশের ব্যাংক খাত ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করত। রাষ্ট্রের এজেন্সিগুলো ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রভাব অনুপ্রবেশ এতটা গভীর ছিল যে, খুন-গুম-ক্রসফায়ারে এক রহস্যজনক শক্তির ছায়া দেখা যেত। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সেই ছায়ার তীব্র উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

 

বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবেশী দেশের সেই আধিপত্য বিস্তারের শক্তির ডানা কিছুটা হলেও ৫ আগস্ট ’২৪-এর পরিবর্তনের পর ভেঙে গেছে। সঙ্গত কারণে এ শক্তি বারবার তার হারানো প্রভাব ফিরে পেতে চাইছে। এ ফিরে পাওয়ার কৌশলে সামনে রয়েছে ক্ষমতার আরেক দফা পরিবর্তন- যাতে ড. ইউনূস সরকার নিয়ন্ত্রক আসনে না থাকে।

 

গণ-অভ্যুত্থানোত্তর সময়ে পুলিশ, আনসার, পোশাক খাত ও পেশাজীবীদের মধ্যে হঠাৎ অস্থিরতা, সচিবালয় ও যমুনা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির পর সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় কৌশল দাঁড়ায় সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া পরিপক্ব হওয়ার আগে নির্বাচন দেয়ার দাবি চাঙ্গা করা। এ জন্য বৈষম্যবিরোধী কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে তারা প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নেতৃত্বের সমর্থন ব্যক্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করা হয়েছে।

 

লন্ডন বৈঠকের মধ্য দিয়ে এসব চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়। এরপর এখন বৈষম্যবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে রাজপথে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রবল করে তোলার নতুন পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। এ ধারা আরেকটু এগোলে বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরিয়ে দেয়ার মতো একটি কার্ড খেলা হতে পারে। এ কাজ শেষ করতে জুলাই ও আগস্ট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাজপথে এ ধরনের এক যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা ব্যর্থ হলে আন্তর্ঘাত ও নাশকতার আরেকটি ষড়যন্ত্র সামনে থাকার আভাস পাওয়া গেছে।

 

চীন-মার্কিন সম্পর্ক সমীকরণ

 

চীন-মার্কিন সম্পর্ক সমীকরণ বাংলাদেশের এখনকার পরিস্থিতিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থা তৈরি করেছে। চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ একটি নিরাপত্তা অক্ষ তৈরির বিষয় একসময় সামনে আসে। সেটি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পরে নাকচ করে দেন।

 

এটি ঠিক যে, বাংলাদেশ ভারতের আধিপত্যবলয়ে বন্দী হয়ে যাক তা যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চায় না। তবে বিশ্বব্যাপী চীন-মার্কিন প্রতিযোগিতার বিষয়টিও একটি কৌশলগত বাস্তবতা। ফলে শুধু ভারতীয় বাধা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের না চাওয়ার জন্যও তিন দেশীয় নিরাপত্তা অক্ষ তৈরি বাংলাদেশের জন্য কঠিন। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিপ্রণেতারা সতর্ক বলে মনে হয়। তবু এর মধ্যে কিছু বিপত্তি ঘটতে দেখা গেছে- যার কারণে ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপের বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

 

যতদূর জানা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিওর সাথে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপে কথিত ইনক্লুসিভ নির্বাচন অথবা জঙ্গিবাদ-চরমপন্থার কোনো ইস্যু আসেনি। কিন্তু ভারতের সাথে সম্পর্কের উত্তেজনা কমানোর প্রসঙ্গ এসেছে। আর শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য আলোচনায় মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমানো বা বাণিজ্য সুবিধা প্রদানের সাথে সাথে পররাষ্ট্র সম্পর্কের কিছু কৌশলগত বিষয়ও সামনে এসেছে। যার মধ্যে বার্মা আইনসংশ্লিষ্ট বিষয়ও রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা কৌশলগত পররাষ্ট্র সম্পর্ক সমীকরণে দেশের স্বার্থ রক্ষা করে কতটা ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে তা এখনকার গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ পার হওয়ার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে সেটির সাফল্যও গুরুত্বপূর্ণ। এ উদ্যোগ কোনোভাবে সফল হবে না, যদি রাজনৈতিক শক্তিগুলো দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দেয়। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এ প্রক্রিয়া সফল করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কোনো কোনো মহল জাতিসঙ্ঘের সাথে ইসলামপন্থীদের মুখোমুখি করার একটি এজেন্ডা সামনে ঠেলে দিতে চাইছে। এ ধরনের ফাঁদে পা দেয়া হতে পারে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং এর জনগণের স্বার্থের জন্য আত্মঘাতী।