Image description

দেশের রফতানি বাজার দিনকে দিন বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের একক কোনো ব্র্যান্ড স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সৃষ্টি হয়নি। এটি অনেক পীড়া দেয় এক্সপো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদ চৌধুরীকে। আন্তর্জাতিক বাজারে পাহাড়ি পণ্যের নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে তার কোম্পানি জাপানের একটি বিপণন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। শিগগিরই দুবাই ও প্যারিসে নিজস্ব শোরুম খোলা হবে বলে সময়ের আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান আসাদ চৌধুরী। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরমান হেকিম।

কৃষিপণ্য নিয়ে কাজ করার পেছনে কারণ কী? জানতে চাইলে আসাদ চৌধুরী বলেন, করোনার সময়ের উপলব্ধি থেকে কৃষিভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রি করার পরিকল্পনা মাথায় আসে। কারণ করোনার সময়ে কৃষিভিত্তিক কাজে যারা যুক্ত ছিল তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। করোনার সময় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ভালো ছিল। কিন্তু অন্যান্য সেক্টরের মানুষদের করোনায় ভুগতে হয়েছে। এক্সপো গ্রুপের লেদার, ফোম এসব ব্যবসা বন্ধ ছিল। তখন যদি আমাদের রাঙামাটি ফুড প্রোডাক্ট থাকত তাহলে কিন্তু ফ্যাক্টরিটা বন্ধ থাকত না। কারণ জীবন ধারণের প্রয়োজনে মানুষকে খাদ্যপণ্য কিনতেই হয়।

রাঙামাটি ফুড প্রোডাক্টের বিষয়ে তিনি বলেন, লন্ডন সফরে ব্যবসায়িক রোড শোতে প্রধানমন্ত্রী কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে বন্ধ থাকা রাঙামাটি ফুড ফ্যাক্টরিকে টেক ওভার করা হয়। এটা ছিল চ্যালেঞ্জিং জব। অনেক বড় বড় কোম্পানি এটাকে নিতে চেয়েছিল তাদের সঙ্গে বিড করে এটা নেওয়া হয়। 

এক বছর আগে এই ফ্যাক্টরিটা জঙ্গলে ভরা ছিল। সব মেশিন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কারণ ২০০৩ সাল থেকে এই ফ্যাক্টরিটা বন্ধ ছিল। সব মেশিন আপগ্রেড করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রফতানিকে মাথায় রেখে জার্মানি এবং ইতালি থেকে বিশ্বমানের যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। 

রাঙামাটি ফুড ফ্যাক্টরিতে উৎপন্ন খাদ্যপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করার পরিকল্পনা থেকেই বিশ্বমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে যেসব পণ্য প্রক্রিয়াকরণ করা হবে সেগুলো হবে বিশ্বমানের। দেশের ভেতরে এবং রফতানি করা পণ্যের মান একই হবে। 

আপনাদের অন্যতম পণ্য হচ্ছে কাচের বোতলে পানি। কাচের বোতলে পানি বাজারজাতকরণের বিষ-য়টি কীভাবে মাথায় এলো? এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাচের বোতলে পানি দেখেছি। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাচের বোতলে পানি বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা মাথায় আসে। কাচের বোতলে পানি এর আগে বাংলাদেশে কেউ করেনি। এক্সপো গ্রুপের কাচের বোতলে পানিই হবে দেশে প্রথম। 

রোমানিয়া একটা ফাউন্টেন ওয়াটার পাওয়া যায়। পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা পানি বোতলজাত করে বিক্রি হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশেও এটার পরিকল্পনা মাথায় আসে। যখন আমরা রাঙামাটি ফ্যাক্টরিটা পাই তখনই পাহাড়ের পানি মানুষের কাছে পৌঁছানোর চিন্তা শুরু করি। সেখান থেকেই পাহাড়ের হাইজেনিক পানি সংগ্রহ করে একটা পানযোগ্য পানি বাজারে নিয়ে আসছি। এটার জন্য ইতালি থেকে একটি মেশিন আনা হচ্ছে। পরিবেশকে মাথায় রেখে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচের বোতলে করে পানি সরবরাহ করা হবে। এটাতে টাকা বেশি লাগলেও আমরা চাই মানুষ ভালো জিনিস ভালো পয়সা দিয়ে খাবে। এতে মানুষের শরীরের যেমন উপকার হবে একই সঙ্গে পরিবেশেরও উপকার হবে। একই সঙ্গে আমাদের পাহাড়ের হাইজেনিক পানি মানুষ খেতে পারবে।

চা পাতার বিষয়ে তিনি বলেন, এরপর যে প্রজেক্টটা আমাদের হাতে আছে সেটা হলো চা পাতা। চা বাগান বলতে আমরা সাধারণত বুঝি সিলেট। কিন্তু ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী মিলে এখানে প্রায় ২১টি ছোট-বড় চা বাগান আছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের চা বাগানগুলো ব্র্যান্ডিং করায় আমাদের মূল্য উদ্দেশ্য। রাঙামাটি টি ও সবার কাছে পরিচিত হবে। চাসহ রাঙামাটির সব প্রোডাক্ট চলতি বছরের মধ্যে বাজারে আনা হবে। 

লোকাল পণ্য গ্লোবাল ব্র্যান্ড আপনার এই স্বপ্ন কীভাবে এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আমার একটা স্বপ্ন লোকাল প্রডাক্ট গ্লোবাল ব্র্যান্ড হবে। দুবাই মল, লন্ডন, চায়নাসহ বিশ্বের বি-িভন্ন দেশে নিজেদের ব্র্যান্ডকে ওরা বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছে। অনেক বিদেশি ব্র্যান্ড বাংলাদেশে পণ্য তৈরি করে নিজেদের ব্র্যান্ডের নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে। ট্যাগে মেইড বাংলাদেশ লেখা থাকলেও ব্র্যান্ড কিন্তু তাদের নিজেদের। বাংলাদেশের প্রোডাক্ট বাংলাদেশ থেকে যায় কিন্তু পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড নেই। সেখান থেকেই মূলত দেশীয় পণ্যে হবে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড স্বপ্ন মাথায় আসে। সেটা মাথায় রেখে অক্সিজেন নামে আমাদের জেনুইন লেদারের একটা প্রোডাক্ট নিয়ে সারা পৃথিবীতে একটা ব্র্যান্ড করতে চাই। যাতে পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোয় আমাদের একটা ব্র্যান্ড থাকে। যদি অক্সিজেনের একটি শোরুম থাকে তাহলে অন্য দেশের মানুষ এটার অরিজিন যখন জানতে চাইবে তখন বাংলাদেশের নাম জানতে পারবে। 

বিদেশিরাও জানতে পারবে বাংলাদেশের একটা প্রোডাক্ট পৃথিবীজুড়ে আছে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে দুবাইতে শোরুম খোলার কাজ শুরু হয়েছে। মার্চ মাসের মধ্যে যা চালু হয়ে যাবে। জাপানে ইতিমধ্যে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ চলছে। জাপানের ইরিশা গ্রুপ আমাদের কনসেপ্ট খুবই পছন্দ করেছে। তারা শোরুম খোঁজা শুরু করেছে। রমজানের আগে জাপানেও শোরুম চালু করতে পারব। এ ছাড়া লন্ডন, প্যারিস, নিউওয়ার্ক, হংকং, সৌদি আরব, জেদ্দা, টরন্টোসহ পৃথিবীর বড় বড় শহরে আমাদের ব্র্যান্ড থাকবে এবং সে প্রোডাক্টগুলো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। 

দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এমন চিন্তা বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বিদেশিরা যখন বাংলাদেশকে চিনবে তখন আমাদের অর্থনীতির জন্যও ভালো হবে। 

বিদেশে পণ্য রফতানি করলে দেশীয় পণ্যের মানের কোনো পরিবর্তন হবে কি না জানতে চাইলে এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পণ্যের মান নিয়ে কোনো ভিন্নতা করা হবে না। আমাদের পণ্যের মান আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে। দেশে একরকম বিদেশে অন্যরকম হবে না। আমাদের এখানে তৈরি জ্যাম, জেলি, সস, স্পাইস, জুসসহ সব পণ্য বিদেশে যেটা যাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও একই মানের পণ্য বিক্রি হবে। বিদেশি ভালো জিনিস খাবে আর আমাদের দেশের মানুষ খারাপ জিনিস খাবে এটা হবে না। এক্সপো গ্রুপের আগের পণ্যগুলোর বেলায়ও কোয়ালিটি নিয়ে আমরা কখনো কম্প্রমাইজ করিনি। মানুষ ভালো জিনিষ পেলে অবশ্যই ভালো দাম দেবে এটা আমরা বিশ্বাস করি।