Image description

দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি করতে মাস ছয়েক আগে ৪ লাখ ট্যাবলেট পিসি (ট্যাব) কেনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। মানুষ গণনার জন্য মাত্র ৭ দিন ব্যবহার হয় ৪৪৭ কোটি টাকায় কেনা এসব ট্যাব। বিপুল অর্থে কেনা এসব ট্যাব এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে বিবিএস। 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এসব ট্যাব এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বিতরণ করতে একটি প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় বিবিএস, যা সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্র এক সপ্তাহের জন্য এত টাকা খরচ করে ট্যাব কেনার কোনো প্রয়োজন ছিল না। বিবিএস চাইলে কাগজে বা ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতেই এটি করতে পারত। ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার পরও বিবিএস জনসংখ্যার যেই তথ্য প্রকাশ করেছে তার বিশ্বেস্ততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। 

শুধু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় জনসংখ্যা কমে গেছে ৭৮ লাখ ২২ হাজার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ২০১৯-২০ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাদের জনসংখ্যা ৬১ লাখ। কিন্তু ডিজিটাল জনশুমারির প্রাথমিক তথ্যে, ঢাকা উত্তরের জনসংখ্যা ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার কম। 

আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, তাদের জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। আর জনশুমারি বলছে, এ সিটির জনসংখ্যা মাত্র ৪২ লাখ ৯৯ হাজার। অর্থাৎ জনসংখ্যার সঠিক তথ্য নিরূপণের জন্য ট্যাব কেনা হলেও তা প্রকৃত অর্থে তেমন একটা কাজে আসেনি। 

বিবিএসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এত ট্যাব কোথায় ব্যবহার করা যায়, সে উপায় অনেক দিন ধরেই খোঁজা হচ্ছিল। সে বিষয়ে মতামত দিতে গত ডিসেম্বরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে চিঠি পাঠিয়েছিল পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানে ট্যাব বিতরণ করলে এর আইনগত ও পদ্ধতিগত দিক কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সেই চিঠিতে। অবশেষে এর সুরাহা হলো। 
বিবিএসের হাতে এখন মোট ট্যাব আছে ৪ লাখ ১০ হাজার, যার মধ্যে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের আওতায় কেনা হয় ৩ লাখ ৯৫ হাজার। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ট্যাব সরবরাহ করেছে, যার ওয়ারেন্টি পিরিয়ড দুই বছর। বাকি ১৫ হাজার কেনা হয় অন্য প্রকল্পের আওতায়। 

বিদায়ি বছরের ২৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। ফলে দেখা যায়, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। এর মধ্য সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩ শিক্ষার্থী।

জনপ্রতি একটি করে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২টি ট্যাব শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এর বাইরে আরও ১ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৮টি ট্যাব বিবিএসের কাছে থেকে যায়। এসব ট্যাব দিয়ে বিবিএস কী করবে এখনও জানা যায়নি। 

বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যতে কোনো জরিপ ও শুমারির কাজে ট্যাব ব্যবহারের চাহিদা চেয়ে গত অক্টোবরে বিবিএসের মাঠপর্যায়ের অফিস ও ঢাকা কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখায় চিঠি দেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান।

ওই চিঠি পাওয়ার পর ‘অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৩’ পরিচালনার জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার ট্যাবের চাহিদা পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিবিএসের বিভিন্ন শাখা থেকে ১৭ হাজার ৮১৮টি ট্যাবের চাহিদা আসে। বিবিএসের মাঠপর্যায় থেকে চাহিদা আসে ৩ হাজার ৫১৭টি ট্যাবের। অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বিভাগের দ্বিতীয় ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দাফতরিক কাজে ব্যবহারের জন্য আরও ২৫০টি চাহিদাপত্র পায় বিবিএস। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৫টি ট্যাবের জন্য আবেদন পাওয়া গেছে। 

শিক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সময়ের আলোকে বলেন, ৪ লাখ ট্যাব দেশের সম্পদ। এগুলো ফেলে রেখে লাভ নেই, নষ্ট হয়ে যাবে। এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের দেওয়া হবে। এটি তাদের কাজে লাগবে।
 
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে কিছু ট্যাব নষ্ট হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। তবে এসব নষ্ট ট্যাব শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে না। বেছে বেছে ভালোগুলো তাদের দেওয়া হবে।