
অনিয়ম-চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে ডিজিটাল লেনদেন প্লাটফর্ম 'বিনিময়'কে বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডার ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (পিএসপি) টাকা লেনদেনের সুবিধার্থে ২০২২ সালের নভেম্বরে 'বিনিময়' চালু হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি (আইডিইএ) প্রায় ৬৫ কোটি টাকা খরচে এটি তৈরি করে। লক্ষ্য ছিল নগদ লেনদেন কমানো।
কিন্তু, চালু হওয়ার পর থেকেই 'বিনিময়'র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য—'বিনিময়' শুরু করার চুক্তিতে সই করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক মাস ধরে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিশ্রুত ফি পায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্ল্যাটফর্মটি চালু করতে বাধ্য হয়েছিলাম, যা এখন স্থগিত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। তিনি জানান, আগের সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের রেডিমেড সেটআপ হস্তান্তর করেছিলেন। এর শর্তাবলী সঠিকভাবে পরীক্ষা করার সুযোগ ছাড়াই চুক্তি সই করতে জোর দিয়েছিল।
তার মতে, শুরু থেকেই অনিয়ম হয়েছে। আসলে ওই অনিয়মগুলো নিয়েই চুক্তি হয়েছে। ডকুমেন্ট তৈরিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পৃক্ততা ছিল না।
'ঝুঁকিপূর্ণ ও অসমর্থনযোগ্য পরিস্থিতিতে প্ল্যাটফর্মটি চালানো কঠিন ছিল' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
'তারা পরিষ্কারভাবে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। আমাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আইনজীবীর পরামর্শে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের সেবা বন্ধ করে দিয়েছি।'
২০১৯ সালে সই করা চুক্তিতে সরকারি খরচে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্ল্যাটফর্মটি পরিচালনা করবে বলা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত সাত-আট মাস ধরে প্ল্যাটফর্মটি অর্থ পরিশোধ করেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওপেন সোর্স প্রতিষ্ঠান মোজালুপের সঙ্গে অংশীদারিত্বে নতুন আন্তঃব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। চলতি বছরেই নতুন ব্যবস্থা চালু হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি আরও বলেন, 'কাজ এগিয়ে চলছে। অনেক তথ্যের প্রয়োজন। প্রথমে তারা একটি নথি চায়, তারপর অন্যটি। যত দ্রুত সম্ভব সবকিছু সরবরাহ করছি। আশা করছি, শিগগিরই চুক্তি হবে।'
সংশ্লিষ্টরা বলছেন—ভারতের ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) এর আদলে 'বিনিময়' তৈরি করা হয়েছিল। ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক ফিচারের অভাব, সীমিত প্রচারণা ও সিস্টেমের সঙ্গে জড়িত হতে ব্যাংকগুলোর অনীহার কারণে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি।
বাতিলের আগ পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মটি আট ব্যাংক, তিন এমএফএস সরবরাহকারী ও দুই পিএসপি ব্যবহার করেছিল।
ব্যাংকগুলো হলো—সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বিকাশ, রকেট ও এমক্যাশ।
'বিনিময়' জনপ্রিয়তা পেতে ব্যর্থ হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ডিজিটাল লেনদেনের জন্য কার্যকর আন্তঃপরিচালনযোগ্য প্ল্যাটফর্ম জরুরি।
এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা এখন রেমিট্যান্স গ্রহণ ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারলেও এমএফএসগুলোর মধ্যে লেনদেন তেমন হচ্ছে না।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদি সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল লেনদেন প্ল্যাটফর্ম করতে পারে তবে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। এটি ডিজিটাল লেনদেনে অনেক সুবিধা আনতে পারে। এটি চালু করা উচিত।'