
জিলাপির মতো মজাদার একটি খাবারও যে জাতিকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারে, তা কখনো ভেবেছিলেন? যদি না ভেবে থাকেন, তাহলে আমরা আপনাকে বিষয়টি ভাবতে উৎসাহিত করতে পারি!
এই বিতর্কের মূল ভাব বুঝতে আমরা কথা বলেছিলাম কয়েকজন জিলাপিপ্রেমীর সঙ্গে। যার ফলাফল হিসেবে পেয়েছি মতামতের রীতিমতো বিস্ফোরণ।
কথা বলি ইসমত হাসনাইনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, 'ঘিয়ে ভাজা চিকন জিলাপি হলো আসল জিনিস। এটা মুচমুচে হয়, খাওয়ার সময় মনে হয় না যে আপনি গোটানো স্পঞ্জ চিবুচ্ছেন। মোটা জিলাপি তারাই খায় যারা জিলাপির স্বাদই বোঝে না। এটা অনেকটা গরমকালে সোয়েটার পরার মতো, পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় স্বাদ।'
পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বসে লেখালিখি করেন জেমিম। এ প্রসঙ্গে কথা হলো তার সঙ্গেও।
জেমিম বলেন, 'মোটা জিলাপি হলো ভাজা ময়দা, যা সিরায় ডুবিয়ে ডেজার্টের নাম দেওয়া হচ্ছে। সত্যিকারের জিলাপির ভেতরে অবশ্যই বাতাস থাকবে, কামড় দিয়ে মুচমুচ করে ভাঙবে আর মুখের মধ্যে গিয়ে সেই জিলাপি ধীরে ধীরে নরম হবে। জিলাপি এমন হবে না যে আপনার পাকস্থলীর মধ্যে গিয়ে ইটের মতো বসে থাকবে।'
চিকন জিলাপিকে কবিতার সঙ্গে তুলনা করলেন শিক্ষার্থী বিভা।
তিনি বলেন, 'এটা এমন হবে যে ১০টা খাওয়ার পরও অপরাধবোধে ভুগব না। আর সঙ্গে যদি রাবড়ি থাকে, তাহলে তো কথাই নেই।'
এ তো গেল চিকন জিলাপিপ্রেমীদের কথা। এবার চলুন যুদ্ধের অন্য প্রান্তে যাই। মোটা জিলাপিপ্রেমীরা আবার চিকন জিলাপির মুচমুচে ভাব নিয়ে হাসাহাসি করছেন।
মোটা জিলাপিপ্রেমী নুসরাত শাহানা বলেন, 'চিকন জিলাপি হলো ডেজার্টের নামে প্রহসন। সত্যিকারের জিলাপি হবে মোটা, রসালো এবং সিরায় টইটুম্বুর। আপনার হাত যদি আঠালোই না হয়, তাহলে আপনি জিলাপিই খাননি!'
রসালো মোটা জিলাপি রসিয়ে রসিয়ে খেতে পছন্দ করেন ব্যাংক কর্মকর্তা হাসান। তিনি বলেন, 'চিকন জিলাপি খুব দ্রুত খাওয়া শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে মোটা জিলাপির স্বাদ নেওয়াও এক ধরনের অভিজ্ঞতা। আপনি এক টুকরো মুখে দেবেন, আরাম করে চিবোবেন আর রসালো জিলাপি আপনার মুখের মধ্যে মিশে যাবে; এটাই জিলাপি খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি।'
মোটা জিলাপি খেলে মনে হবে যে আসলেই কিছু খাচ্ছি, বলছিলেন তানভীর।
নাশতা বিশাদর তানভীরের মতে, 'মোটা জিলাপিতে খাওয়ার মতো জিনিস থাকে, চিকন জিলাপির মতো বাতাস ভরা মচমচে কিছু নয় এটা। মোটা জিলাপি খেলে মনে হবে, হ্যাঁ কিছু একটা চিবোলাম।"
শিশুরাও এই বিতর্ক থেকে দূরে নেই।
ছোট্ট আয়ান বলল, 'চিকন জিলাপি দ্রুত ভেঙে যায়। মোটা জিলাপি অনেক সময় ধরে খাওয়া যায়, তাই আমার এটাই পছন্দ।'
কে ভেবেছিল যে, চিনির সিরা, ঘি, ময়দা, বেকিং পাউডার এবং প্রচুর তেলে ভাজা এই খাবারটি এত মানুষের আবেগকে উস্কে দিতে সক্ষম? চিকন ও মোটা; দুই পক্ষের লোকজনই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে ভীষণ উৎসাহী। মোটা জিলাপিপ্রেমীরা বলেন, তাদের প্রতিপক্ষ স্বাদের পরিবর্তে সৌন্দর্য আর নান্দনিকতার দিকে ছুটছে। অন্যদিকে চিকন জিলাপিপ্রেমীদের মত হলো, মোটা জিলাপির কারিগররা আদতে অলস, তারা জিলাপি শিল্পের কিছুই বোঝেন না।
অবশ্য এরা ছাড়াও আরেকদল মানুষ আছেন, যাদের কাছে জিলাপি হলেই হলো। চিকন হোক আর মোটা, যখন যেটা পাওয়া যায় তারা বিনা দ্বিধায় তা খেয়ে নেন। আর দূরে বসে দুই দলের লড়াই উপভোগ করেন।
তো, এখন বলুন; এই বিতর্কে আপনার অবস্থান কোথায়? আপনি কি চিকন নাকি মোটা জিলাপির পক্ষের লোক? নাকি আপনি সেই বিরল মানুষদের একজন যার মনে সব ধরনের জিলাপির জন্য সমান ধরনের প্রেম বিদ্যমান? মোটা হোক আর চিকন, রসালো হোক আর মুচমুচে; জিলাপির শেষ গন্তব্য তো মানুষের রসনাতৃপ্তিতে; এতে অবশ্য কারো কোনো সন্দেহ নেই।